ওমর আবদুল্লা এবং মেহবুবা মুফতি-ফাইল চিত্র।
জন নিরাপত্তা আইনে এ বার অভিযুক্ত করা হল জম্মুকাশ্মীরের দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে। ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লা এবং পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেত্রী মেহবুবা মুফতির বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবারই কার্যকর করা হয়েছে কঠোর জন নিরাপত্তা আইন বা পাবলিক সেফটি অ্যাক্ট। নির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া তাঁদের ছ’মাস গৃহবন্দি থাকার মেয়াদ শেষ হওয়ার দিনে এই নির্দেশ এল কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে। এই প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের তীব্র সমালোচনা করে টুইট করেছেন মুফতি-কন্যা ইলিজা। তিনি-ই তাঁর মায়ের টুইটার হ্যান্ডলের দেখভাল করেন।
জন নিরাপত্তা আইনে কোনও ব্যক্তিকে দু’ বছর পর্যন্ত কোনও অভিযোগ বা বিচারপ্রক্রিয়া ছাড়াই বন্দি করে রাখা যায়।
ঘটনাচক্রে, লোকসভায় এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এই পদক্ষেপ করল কেন্দ্র। বৃহস্পতিবার লোকসভায় রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর ধন্যবাদজ্ঞাপক প্রস্তাবে বক্তৃতা করতে গিয়ে মোদী সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। ফারুক আবদুল্লা, ওমর আবদুল্লা, মেহবুবা মুফতির মতো জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীদের বন্দি করে রাখা হয়েছে কেন, তার ব্যাখ্যা দেন।
আরও পড়ুন: ওমর-মেহবুবারা গৃহবন্দি কেন, ব্যাখ্যা দিলেন মোদী
মোদী বলেন, ‘‘অনেকেই বলেছেন, বিশেষ মর্যাদা না থাকলে কাশ্মীরে আগুন জ্বলবে। ৫ অগস্ট কয়েকজন নেতাকে আটক করা নিয়ে প্রশ্নও তোলা হয়েছে। কিন্তু মেহবুবা মুফতি বলেছিলেন, ভারত কাশ্মীরের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ১৯৪৭ সালে যদি অন্য ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হত, তা হলে আমরা ভাল থাকতাম।’’ আবদুল্লা পরিবার প্রসঙ্গে মোদীর মন্তব্য, ‘‘ওমর বলেছিলেন, ৩৭০ বিলোপ হলে কাশ্মীর ভারত থেকে আলাদা হয়ে যাবে। আর ফারুক আবদুল্লা দাবি করেছিলেন, ৩৭০ অনুচ্ছেদ না থাকলে কাশ্মীরে কেউ জাতীয় পতাকা তুলবেন না। আমরা কী ভাবে এঁদের পাশে থাকব?’’ মোদীর এই বক্তব্য শোনার পরেই লোকসভায় হইচই শুরু হয়।
আবদুল্লা-মুফতির পাশাপাশি উপত্যকার আরও দুই রাজনীতিক, পিডিপি-র সরতাজ মাধবী এবং ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা আলি মহম্মদ সাগরের বিরুদ্ধেও এই আইন কার্যকর হয়েছে। জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত ওমর আবদুল্লা থাকবেন সরকারি অতিথিভবন ‘হরি নিবাস’-এ এবং মেহবুবা মুফতি থাকবেন শ্রীনগরের একটি সরকারি ভবনে।
ওমর আবদুল্লার বাবা অশীতিপর ফারুক আবদুল্লা গত বছর অগস্ট থেকে গৃহবন্দি। তাঁকে এই আইনে অভিযুক্ত করা হয়েছিল গত সেপ্টেম্বরে। দু’ মাস পরে পুনর্বিবেচনার পরে সেই নির্দেশ আরও তিনমাসের জন্য বাড়ানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘টিউবলাইট’ খোঁচা রাহুলকে
জন নিরাপত্তা আইনকে আগে বলা হত জম্মু-কাশ্মীর সুরক্ষা আইন। ফারুক আবদুল্লার বাবা, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, শেখ আবদুল্লা কাঠপাচারকারীদের দমনে এই আইন এনেছিলেন।
সাধারণত এই আইন জারি করা হয় জঙ্গি, বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং পাথর ছোড়ার ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে। সাংসদ এবং তিন বারের মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাই প্রথম মূলস্রোতের রাজনীতিক, যাঁর বিরুদ্ধে এই কঠোর আইন প্রয়োগ করা হয়েছে।
এই আইনের দু’টি অংশ আছে। প্রথম অংশে জনজীবন ব্যাহত করার অভিযোগে বিনা বিচারপ্রক্রিয়ায় তিন থেকে ছ’মাস পর্যন্ত বন্দি করে রাখা যায়। দ্বিতীয় অংশটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে রাজ্যের নিরাপত্তার বিরুদ্ধে ভীতিজনক হওয়ার অভিযোগে দু’বছর অবধি বন্দি করে রাখা সম্ভব।