ছবি— পিটিআই।
তামিলনাড়ুর সুলুর থেকে কুন্নুর যাওয়ার পথে যে ভাবে চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়তের চপার ভেঙে পড়েছে, দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ খুঁজে বার করা কঠিন হতে পারে বলে বায়ুসেনা বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন।
বায়ুসেনার প্রাক্তন কর্তারা বলছেন, সুলুর বায়ুসেনা ঘাঁটি থেকে কুনুরে ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজের মধ্যে প্রায়ই চপার চলাফেরা করে। তার মধ্যে ভিআইপি চপারও থাকে। ওই এলাকায় নীলগিরি পর্বতের উচ্চতাও বেশি নয়। কিন্তু জঙ্গল ও চা-বাগানের মধ্যে পড়ে যাওয়ার পরে যে ভাবে এমআই-১৭ভিফাইভ চপারটিতে আগুন ধরে গিয়েছে, তাতে দুর্ঘটনার আসল কারণ খোঁজা কঠিন হতে পারে। বায়ুসেনার প্রাক্তন প্রিন্সিপাল ডিরেক্টর (এরোস্পেস সেফটি) কার্তিকেয় কালের মতে, কিছু সমস্যা দেখা দেওয়ার পরে জঙ্গল, চা-বাগান ও পাহাড়ের খাদের মধ্যে পাইলট চপার নামানোর কোনও উপযুক্ত সমতল জায়গা পাননি বলেই চপারটি ভেঙে পড়েছে বলে মনে হচ্ছে। বায়ুসেনা বিশেষজ্ঞদের ধারণা, মাটিতে পড়ার আগে চপারটি গাছেও ধাক্কা খেয়েছে। তার ফলে সেটি সজোরে মাটিতে ধাক্কা খায়।
প্রাক্তন বায়ুসেনা কর্তারা বলছেন, ঘটনাস্থলের ছবি-ভিডিয়ো দেখে মনে হচ্ছে, জ্বালানির ট্যাঙ্কার ভেঙে তেল বেরিয়ে আসায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। চপারের মূল পাখার দিকের রোটাহেড ও লেজের দিকের টেলবুমের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে। টেলবুমে চপারের নম্বরটিও (জেডপি ৫১৬৪) দেখা গিয়েছে। বায়ুসেনা ইতিমধ্যেই ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে বায়ুসেনা প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল বিবেক রাম চৌধরি বুধবার ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন।
বায়ুসেনার প্রাক্তন কর্তারা বলছেন, তদন্তের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। কারণ ঘটনাস্থলের কাছেই একটি গ্রাম ছিল। গ্রামের মানুষই প্রথম উদ্ধারের কাজ শুরু করেন। মনে হচ্ছে, চপারটি খুব নিচু দিয়ে উড়ছিল। সাধারণত খারাপ আবহাওয়ার সময়ে মেঘের নীচ দিয়ে ওড়ার চেষ্টা করেন পাইলটেরা। তাতে অনেক সময়েই দুর্ঘটনা ঘটে। খারাপ আবহাওয়া সত্ত্বেও চপার উড়েছিল কি না, তা-ও এ ক্ষেত্রে বড় প্রশ্ন।
প্রাক্তন ফৌজি কর্তারা বলছেন, এমআই-১৭ চপারের ইঞ্জিন খুবই শক্তিশালী। যদি সেই চপার কম উচ্চতায় ওড়ে, তা হলে পাখার হাওয়ার ধাক্কা নীচের জমি বা গাছে গিয়ে লাগা খুব স্বাভাবিক। চপারের হাওয়ায় গাছপালা দুলতে শুরু করলে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। আবার সেই হাওয়ার এক বিপরীতমুখী ধাক্কা কপ্টারেও এসে লাগে। ঘটনাস্থলে বড় গাছের ডাল ভেঙে পড়ার ছবি দেখে বোঝা যাচ্ছে, চপারের রোটরে গাছের ধাক্কা লেগেছিল। এক বার কপ্টারের গতি কমে গেলে তা ফিরিয়ে আনা খুব মুশকিল, বিশেষত পাহাড়ি এলাকায়।