Worship

Worship Law: উপাসনাস্থল আইন বদলের পথ কি খুলছে

অযোধ্যায় রামমন্দির-বাবরি মসজিদ বিবাদে সুপ্রিম কোর্ট রামমন্দিরের পক্ষে রায় দিলেও উপাসনাস্থল রক্ষা আইনের গুরুত্ব মনে করিয়ে দিয়েছিল।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২২ ০৬:৪৯
Share:

ফাইল ছবি

অযোধ্যায় রামমন্দির-বাবরি মসজিদ বিবাদে সুপ্রিম কোর্ট রামমন্দিরের পক্ষে রায় দিলেও উপাসনাস্থল রক্ষা আইনের গুরুত্ব মনে করিয়ে দিয়েছিল। যে আইনে বলা হয়েছে, অযোধ্যা একমাত্র ব্যতিক্রম। বাকি আর সব ক্ষেত্রেই যেখানে যেমন মন্দির, মসজিদ বা গির্জা ছিল, তা-ই রেখে দিতে হবে। তার চরিত্র বদল চলবে না। মসজিদকে মন্দির করা চলবে না। কিন্তু বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে বিতর্কে সুপ্রিম কোর্ট শুক্রবার যে অবস্থান নিয়েছে, তাতে বিরোধী শিবিরের প্রশ্ন, এর পরে উপাস্থনাস্থল সুরক্ষা আইন দিয়েও মসজিদকে মন্দির করার দাবি থামানো যাবে তো? না কি মোদী সরকার নিজেই উপাসনাস্থল সুরক্ষা আইনে বদলের পথে হাঁটবে?

Advertisement

পাঁচ জন হিন্দু মহিলা বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদ চত্বরে মা শৃঙ্গার গৌরীস্থলে পুজোর অনুমতি চেয়ে মামলা করেছিলেন। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি ধনঞ্জয় ওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ বলেছে, ১৯৯১-এর উপাসনাস্থল রক্ষা আইন বা ‘প্লেসেস অব ওরশিপ (স্পেশাল প্রভিশন) অ্যাক্ট’-এ ধর্মস্থানের চরিত্র নির্ধারণে বাধা নেই। সুপ্রিম কোর্ট এই যুক্তিতেই শুনানিতে স্থগিতাদেশ জারি করেনি।

কংগ্রেস ও অন্যান্য বিরোধী দল সরাসরি জ্ঞানবাপী মসজিদে পুজোর দাবির বিরোধিতা করছে না। তা করতে গেলে বিজেপি-আরএসএসের মেরুকরণেই সুবিধা হয়ে যাবে বুঝে কংগ্রেস শুধু উপাসনাস্থল রক্ষা আইনের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য দেখে বিরোধী শিবিরের প্রশ্ন, জ্ঞানবাপী মসজিদের আদিপ্রকৃতি যদি হিন্দু মন্দিরের বলে নির্ধারিত হয়, তা হলে কি আর মসজিদ ভেঙে মন্দির তৈরির দাবি আটকানো যাবে?

Advertisement

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্বের অধ্যাপক নন্দিনী সুন্দর আজ প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট অযোধ্যার রায়ে একই কাঠামোয় দুই ধর্মের সহাবস্থানের কথা বলেছিল। তারপরে একটি ধর্মের পক্ষে রায় দিয়েছিল। বিচারপতি চন্দ্রচূড় কি সেই পথেই হাঁটার ইঙ্গিত দিচ্ছেন?’’

শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বে যে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ অযোধ্যায় রামমন্দিরের পক্ষে রায় দিয়েছিল, বিচারপতি চন্দ্রচূড় তার সদস্য ছিলেন। রায়ে উল্লেখ না থাকলেও তা লেখার ধরন ও শব্দচয়ন দেখে আইনজীবীরা মনে করেছিলেন, বিচারপতি চন্দ্রচূড়ই রায় লিখেছিলেন। এ বার তাঁর বেঞ্চেই জ্ঞানবাপী মসজিদের মামলা। নন্দিনীর মন্তব্য, ‘‘ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হলে, প্রথম বার তা ট্র্যাজেডি ছিল। দ্বিতীয় বার আইন প্রহসনে পরিণত হবে।’’

বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের মধ্যে থেকে ইতিমধ্যেই দাবি উঠেছে, ১৯৯১-এর উপাসনাস্থল রক্ষা আইন বা ‘প্লেসেস অব ওরশিপ (স্পেশাল প্রভিশন) অ্যাক্ট’ রাখারই দরকার নেই। অযোধ্যায় রামমন্দির আন্দোলনের সময় পি ভি নরসিংহ রাও সরকার এই আইন এনেছিল। যাতে বলা হয়েছিল, ১৯৪৭ সালে মন্দির, মসজিদ, গির্জার মতো ধর্মস্থান যেখানে যেমন রয়েছে, তেমনই রেখে দিতে হবে। উদ্দেশ্য ছিল, ভবিষ্যতে কাশী-মথুরাতেও মসজিদ ভেঙে মন্দির তৈরির জন্য সঙ্ঘ পরিবারের দাবি সমূলে বিনাশ করা।

বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এত দিনে এই আইন প্রত্যাহার করে ফেলবেন বলে আশা ছিল। গত আট বছরে লোকসভায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও রাজ্যসভায় কার্যত সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্বেও তিনি এ কাজে ব্যর্থ। প্রধানমন্ত্রীকে এই দাবিতে চিঠি লেখা, সুপ্রিম কোর্টে মামলা করার কাজও আগেই সেরে রেখেছেন স্বামী। তাঁর দাবি, এই আইন সংবিধান প্রদত্ত পুজোআচ্চার মতো ধর্মাচরণের অধিকারের বিরোধী।

বিজেপি নেতারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, এই আইন পাশের সময়ে দল এর বিরোধিতা করেছিল। লালকৃষ্ণ আডবাণীর নেতৃত্বে বিজেপি লোকসভায় এর বিরোধিতা করে ওয়াক-আউট করে। আডবাণীর অভিযোগ ছিল, এতে যেখানে সমস্যা নেই, সেখানেও বিবাদ তৈরি হবে। উমা ভারতী বলেছিলেন, আওরঙ্গজেব মন্দির ভেঙে মসজিদ তৈরি করলেও, মসজিদে ইচ্ছাকৃত ভাবে হিন্দু ধর্মের চিহ্ন ছেড়ে গিয়েছিলেন। যা দেখে পরবর্তী কালেও হিন্দুদের নিজেদের দুর্ভাগ্য ও মুসলিমদের নিজেদের ক্ষমতার কথা মনে পড়ে।

বারাণসী ও মথুরার মামলায় প্রধান উদ্যোক্তা, আইনজীবী বিষ্ণুশঙ্কর জৈনের বক্তব্য, ‘‘১৯৯১-এর উপাসনাস্থল আইনের ৪ নম্বর ধারা এখনই প্রত্যাহার করা উচিত।’’ এই ৪ নম্বর ধারাতেই বলা হয়েছে, উপাসনাস্থলের ধর্মীয় চরিত্র ১৯৪৭-এর ১৫ অগস্ট যেমন ছিল, তেমনই থাকবে। মন্দির-মসজিদের চরিত্র বদল নিয়ে কোনও পুরনো মামলা টিকবে না, নতুন কোনও মামলাও করা যাবে না। এই আইন দেখিয়েই সুপ্রিম কোর্টে মসজিদ পরিচালন কর্তৃপক্ষের আইনজীবী হুজেফা আহমদি বলেছিলেন, বারাণসীর মামলা প্রথমেই খারিজ হয়ে যাওয়া উচিত। সুপ্রিম কোর্ট তা মানেনি। মথুরার শাহি ইদগায় কৃষ্ণ জন্মভূমির দাবি নিয়ে মামলায় মথুরার স্থানীয় আদালত আবার বৃহস্পতিবার বলেছে, ১৯৯১-এর আইন কৃষ্ণ জন্মভূমি-শাহি ইদগা বিতর্কে খাটে না। কারণ, আইন পাশের আগে দুই পক্ষের মধ্যে আপস করে বিতর্কিত চুক্তি হয়েছিল।

অযোধ্যায় অন্যতম মধ্যস্থতাকারী, আইনজীবী শ্রীরাম পাঞ্চু সম্প্রতি বলেছেন, ১৯৯১-এর আইন সংবিধানের মূল কাঠামোর অংশ। সুপ্রিম কোর্টের উচিত ছিল, প্রথমেই মন্দির-মসজিদ নিয়ে যাবতীয় মামলা ছুড়ে ফেলে দেওয়া। প্রবীণ আইনজীবীদের বক্তব্য, ২০১৯-এ অযোধ্যায় রায়ে শীর্ষ আদালতই বলেছিল, ধর্মীয় উপাসনাস্থল রক্ষা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের দায়িত্বের সঙ্গে যুক্ত। সব ধর্মের সমানাধিকারের প্রতি ভারতের দায়বদ্ধতার প্রতিফলন। এই আইন তৈরির উদ্দেশ্যই তাই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement