জরুরি অবস্থার সময় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে সঞ্জয় গাঁধী ‘নাসবন্দি’-র কর্মসূচি নিয়েছিলেন। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আইন আনার বন্দোবস্ত করতে সংবিধান সংশোধন করে পরিবার পরিকল্পনাকে সংবিধানের যৌথ তালিকায় আনা হয়েছিল। যাতে কেন্দ্র এ বিষয়ে আইন আনতে পারে।
এ বার উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথ জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নীতি ঘোষণা করার পরে প্রশ্ন উঠেছে, নরেন্দ্র মোদী সরকারও কি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ আইন আনতে চলেছে? সরকারি সূত্রের বক্তব্য, মোদী নিজেই গত বছরের স্বাধীনতা দিবসে লাল কেল্লা থেকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনের কথা বলেছিলেন।
কিন্তু এ বিষয়ে কোনও নীতি তৈরি হলেও, জোর করে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হবে না। বিজেপি নেতা, আইনজীবী অশ্বিনী উপাধ্যায় সুপ্রিম কোর্টে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ আইনের দাবিতে মামলা করেছিলেন। সেই মামলাতেই মোদী সরকার গত ডিসেম্বরে জানিয়েছে, সরকার পরিবার পরিকল্পনার বিষয়ে কোনও রকম জোরাজুরির বিরুদ্ধে।
সরকারি তথ্য বলছে, এমনিতেই দেশে জন্মহার কমছে। অধিকাংশ দম্পতিই এখন দু’টির বেশি সন্তান নিতে চান না। দেশে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি একেবারেই মানুষের ইচ্ছার উপরে নির্ভরশীল। স্বামী-স্ত্রী পরিবারের সদস্যের সংখ্যা ঠিক করেন। সেখানে কোনও বাধ্যবাধকতা নেই।
সরকারি অবস্থান এমন হলেও বিজেপি যে ভাবে উত্তরপ্রদেশের ভোটের আগে ফের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিতর্ক বাঁধাতে চাইছে, তাতে বিরোধী শিবির নিশ্চিত, এর লক্ষ্য হল মেরুকরণ। বিজেপির আসল উদ্দেশ্য হল, মুসলিমদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির অভিযোগ তোলা। আর সেখানেই সাবধানে পা ফেলা দরকার বলে কংগ্রেস নেতৃত্বের মত। উত্তরপ্রদেশে যোগীর নীতি নিয়ে তাই এখনই কোনও অবস্থান নেওয়া হবে না বলে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা রাজ্যের কংগ্রেস নেতাদের জানিয়ে দিয়েছেন। কংগ্রেসের বক্তব্য, সরকারি বিল এলে তবেই কংগ্রেস অবস্থান নেবে। সলমন খুরশিদের মতো কিছু নেতা এর বিরোধিতা করেছিলেন। তাঁদের মুখ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। আজ বিএসপি নেত্রী মায়াবতীও বলেছেন, বিধানসভা ভোটের আগে যোগী সরকারের এই নীতি ঘোষণার পিছনে আসল উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। যোগী সরকার এ বিষয়ে সত্যিই উদ্বিগ্ন হলে ক্ষমতায় আসার পরেই কাজ শুরু করে দিত।
কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, ‘‘আমরা বিজেপির ফাঁদে পা দিতে চাই না। আমরা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বিরোধিতা করে মুসলিমদের পাশে দাঁড়াচ্ছি— এমন ধারণা তৈরির সুযোগ বিজেপি যাতে না পায়, তা-ও দেখতে হবে।’’ কংগ্রেস সূত্রের ব্যাখ্যা, সঞ্জয় গাঁধীর পরে মোরারজি দেশাই থেকে অটলবিহারী বাজপেয়ী, মনমোহন সিংহ সরকারের আমলেও কেন্দ্র স্বেচ্ছায় পরিবার পরিকল্পনার নীতিতেই ভরসা রেখেছে। বাজপেয়ী সরকারের আমলে বেঙ্কটাচেলিয়া কমিশন আইনের সুপারিশ করলেও তা হিমঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।