মাদকাসক্তি যে একটি গণস্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয় সেই বোধেরই অভাব রয়েছে সমাজে। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
রিয়া চক্রবর্তীকে মুম্বইয়ের নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো গত ৮ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার করে নারকোটিক্স ড্রাগস অ্যান্ড সাইকোট্রোপিক সবস্ট্যান্সেস (এনডিপিএস) আইন নির্ধারিত নানা অভিযোগের ভিত্তিতে। অভিনেতা সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যুর তদন্তে যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে, রিয়া তাঁদের মধ্যে অষ্টম। ভিডিয়ো কনফারেন্স মারফত তাঁকে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে পেশ করার আগে রিয়ার মেডিক্যাল টেস্ট করানো হয়। এনসিবি তাঁকে পর পর তিন দিন তাঁর সঙ্গে সুশান্তের সম্পর্ক ও মাদক ব্যবহার নিয়ে জেরা করে। সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট বলছে— প্রথমে জেরায় রিয়া স্বীকার করেন, তিনি সুশান্তের জন্য মাদক সংগ্রহ করেছেন এবং নিজেও মাঝে মাঝে মাদক নিয়েছেন। কিন্তু পরে সেই স্বীকারোক্তি প্রত্যাহার করে রিয়া দাবি করেন, তাঁকে দিয়ে জোর করে কথাগুলো বলিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
রিয়ার আইনজীবী সতীশ মানশিন্ডে তাঁর মক্কেলের গ্রেফতারিকে ‘বিচারব্যবস্থার রসিকতা’ বলে অভিহিত করেছেন। মানশিন্ডে বলেছেন, “একজন মহিলাকে তিন তিনটে কেন্দ্রীয় সংস্থা পাগলের মতো ধাওয়া করছে। কারণ, তিনি এক মাদকাসক্তকে ভালবাসতেন। যিনি বেশ কয়েক বছর মানসিক অসুখে ভুগছিলেন এবং মাদক বা বেআইনি কিছু ওষুধ ব্যবহারের কারণে আত্মহত্যা করেছেন। যাকে আমরা ড্রাগস বলে থাকি।”
‘ড্রাগস’ এবং ‘আসক্তি’ শব্দ দু’টি অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত। কিন্তু ১৯৮৫ সালের ‘নারকোটিক্স ড্রাগস অ্যান্ড সাইকোট্রোপিক সাবস্ট্যান্সেস অ্যাক্ট অব ইন্ডিয়া’-য় ‘আসক্তি’ শব্দটাই অনুপস্থিত! মাদক ব্যবহারের বিষয়ে এনডিপিএস আইনটি হল সংসদীয় আইনের প্রাথমিক নথি, যা মাদক বিক্রি, উৎপাদন, ব্যবহার এবং হেফাজতে রাখাকে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করে। ১৯৮৬ সালে এই আইনের দ্বারাই এনসিবি গঠিত হয়। যার কাজ এনডিপিএস আইনের প্রয়োগ এবং মাদকবিরোধী আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলিকে তুলে ধরা। এনডিপিএস আইনে আসক্তদের শুশ্রুষা, তাঁদের প্রতি সমাজের মনোযোগ এবং তাঁদের আইনি অধিকারের কথা বলা আছে। কিন্তু আইনের এই দিকটি বলবৎ করার ব্যবস্থা সেভাবে নেই। আরও বিশেষ ভাবে বললে, ঠিক কাকে ‘আসক্তি’ বলা হবে, তা এই আইনে নির্ণিতই নয়। সেক্ষেত্রে কী ভাবে মাদকাসক্তদের সফল চিকিৎসা হবে? সর্বোপরি, এই আইন অনুসারে কে আনন্দ পাওয়ার জন্য মাঝেমধ্যে ড্রাগস নেন আর কে প্রকৃতই মাদকে আসক্ত, সেই বিভাজন করা সম্ভবই নয়!
পরবর্তী কালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) মাদকাসক্তদের ‘অপরাধী’ হিসেবে দেখার ব্যাপারে জানায়, “ইঞ্জেকশন ও অন্য উপায়ে মাদকগ্রহণের বিষয়টিকে যাতে অপরাধ হিসেবে দেখা না হয়, তার জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নে দেশগুলির একত্রে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।... মাদক ব্যবহারের ব্যাপারে বাধ্যতামূলক চিকিৎসার বিষয়টিকে নিষিদ্ধ করার কাজে দেশগুলির এগিয়ে আসা উচিত।” আমেরিকান হেলথ অ্যাসোসিয়েশন জানাচ্ছে, সে দেশের ফেডেরাল ও স্টেট স্তরে ব্যক্তিগত মাদক ব্যবহারের ক্ষেত্রে অন্যায্য কড়া শাস্তির ব্যবস্থা দূর করা প্রয়োজন। অর্গানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটস জানাচ্ছে, “যে কোনও গণস্বাস্থ্য সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে মাদক সেবন তথা গ্রহণকে অপরাধ হিসেবে না দেখাটা প্রয়োজন।”
আরও পড়ুন: বলিউডে মাদককাণ্ড নিয়ে মন্তব্যে জয়ার নিশানায় বিজেপি সাংসদ
সুতরাং বোঝা যাচ্ছে, যে সময়ে এনডিপিএস আইন প্রণীত হয় এবং এনসিবি গঠিত হয়, সেই সময়ের মানসিকতা থেকে ‘হু’ এবং আরও অনেক সংগঠনই সরে এসেছে। বদল ঘটেছে মাদক সংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গির। কিন্তু ভারতে তা ঘটেনি।
১৯৮৫ সালে রাজীব গাঁধীর আমলে ভারতের প্রথম মাদক সংক্রান্ত আইন হিসেবে এনডিপিএস চালু হয়। এর প্রেক্ষিত ছিল সেই সময় বিশ্বজোড়া মাদক ব্যবসা ও মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে আমেরিকার জেহাদ। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বেশির ভাগ পশ্চিমী দেশেই, এমনকি আমেরিকার অনেকগুলি স্টেটেও মাদক ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্ত ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে। মারিজুয়ানা বা গাঁজাকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। কেউ সঙ্গে গাঁজা রাখলে বা তা ব্যবহার করলে তাকে অপরাধী হিসেবে গণ্য করা বন্ধ হয়েছে।
ভারতে আমরা এর অনুসরণ করতে পারিনি। বরং বলা যায়, ১৯৮৫ সালে মাদক ব্যবহার নিয়ে তাড়াহুড়ো করে আইন প্রণয়ন করতে গিয়ে আমরা একই ধরনের ভুল করেছিলাম। কোনও বিচার-বিবেচনা এবং বাস্তবের প্রকৃত পর্যালোচনা না করেই আমরা মাদক ব্যবহার বা সঙ্গে মাদক রাখাকে ‘অপরাধ’ বলে মেনে নিই। আমাদের কতগুলো প্রাথমিক ও মৌলিক বিষয় মাথায় রাখা উচিত ছিল। যেমন, মনে রাখা উচিত ছিল যে মাদকাসক্তি এক প্রকার অসুস্থতা। একে ‘বিপথগামী নৈতিক অবস্থা’ হিসেবে ধরে নেওয়াটা ঠিক হয়নি।
এখন এই এনডিপিএস আইন এক দুর্নীতিপূর্ণ এবং আক্রমণাত্মক মামলা ও সেই সঙ্গে ‘রক্তপিপাসু’ গণমাধ্যমের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। গত ২০ অগস্ট রিয়া এবং অন্যান্যদের বিরুদ্ধে এনসিবি সুশান্তের মৃত্যুতদন্তের সঙ্গে জড়িত বিষয় হিসেবে এনডিপিএস-এর অধীনে এফআইআর দাখিল করে। সেটি লেখার সময় রিয়াকে মুম্বইয়ের এনসিবি দফতরে জেরা করা হচ্ছিল। ওই সময়েই আরও আটজনকে গ্রেফতার করা হয়, যাদের মধ্যে রিয়ার ২৪ বছরের ভাই এবং সুশান্তের হাউস ম্যানেজারও ছিলেন। রিয়া ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে এনসিবি-র অভিযোগ ছিল, তাঁরা সুশান্তের মাদক ব্যবহারে সহায়ক ছিলেন ও সেই কাজে তাঁকে উৎসাহ দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: আইপিএস হতে হবে! মানসিক চাপে শহরে আত্মঘাতী সেভেনের ছাত্রী
এই হাই-প্রোফাইল মাদক-কাণ্ড থেকে বোঝা যায়, কী ভাবে ভারতীয় সমাজ মাদকাসক্তি বা মাদক ব্যবহারকে গণস্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয় হিসেবে না দেখে এক নৈতিক সঙ্কট হিসেবে দেখে। মাদকাসক্তিকে অসুস্থতা হিসেবে দেখা হলে মাদকাসক্তকে কলঙ্কিত হিসেবে চিহ্নিত করা, তাকে পৃথক করে রাখা বা তাকে সামাজিক লজ্জার মুখে ঠেলে দেওয়া হয়ে ওঠে না। আইনের দৃষ্টিতে বিষয়টাকে এমন ভাবে দেখা হয়, যাতে এই সব ভ্রান্ত ধারনাগুলি স্থায়ী হয়ে যায় এবং এর ফলে সংশ্লিষ্ট মাদকাসক্ত এক নিরাপত্তাহীন পরিস্থিতির শিকার হন, যেখানে তাঁকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়।
মাদকাসক্তি বিষয়টা বুঝতে যে সূক্ষ্ম বিচার-বিবেচনার বোধ লাগে, ভারতে তার গভীর অভাব আছে। সামাজিক এবং আইনি— দু’ক্ষেত্রেই এই অভাব লক্ষ্যণীয়। সে হিসেবে দেখলে আমাদের প্রণীত আইন আমাদেরই সম্মিলিত অজ্ঞতা এবং নিরপেক্ষতাহীনতার প্রকাশ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সরকার আসক্তির সংজ্ঞা নিরূপণের উদ্দেশ্যে বিস্তারিত এবং যথাযথ আইন প্রণয়ন করেছে। এর দ্বারা মাদকাসক্তিকে সঠিক ভাবে চিহ্নিত করা ও তার যথাবিহিত ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছে। এই আইনগুলি একই সঙ্গে আসক্তকে অধিকার দেয় এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করে।
আমেরিকায় মাদকাসক্তির বিষয়ে একাধিক আইন রয়েছে। সেখানে মাদকের আসক্তির চিকিৎসা ফেডারেল আইন দ্বারা নির্ধারিত হয়। বিষয়টি তত্ত্বাবধান করে ‘সাবস্ট্যান্স অ্যাবিউজ অ্যান্ড মেন্টাল হেলথ সার্ভিসেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’। এই সংস্থাই জানায়, এই ‘আসক্তি আসলে এক মানসিক ব্যাধি। যার চিকিৎসা এক একজন রোগীর ক্ষেত্রে একেক রকম হবে। কানাডার সুপ্রিম কোর্ট আসক্তির সংজ্ঞা হিসেবে জানায়, “এটি প্রাথমিক ভাবে একটি ক্রনিক অসুখ। যা মন ও আচরণের উপরে ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে।” অনেক দেশেই মাদকাসক্তিকে তার চিকিৎসার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বোঝার চেষ্টা করা হয়।
সুশান্তের ক্ষেত্রে তাঁর আত্মহত্যার সঙ্গে মাদকাসক্তির অভিযোগকে একত্রে দেখা হচ্ছে। তদন্তের ক্ষেত্রে এটাই হয়ে দাঁড়াচ্ছে প্রাথমিক ব্যাপার। বিভিন্ন দিক থেকে দেখলেই বোঝা যায়, বিষয়টা কোথাও ঘেঁটে যাচ্ছে। মাদক ব্যবহার আর মাদকাসক্তিকে সম্পূর্ণ ভুল বুঝে একাকার করে দেখা হচ্ছে। ‘আসক্ত’, ‘আসক্তি’ এবং ‘ক্ষতিকারক ব্যবহার’ ইত্যাদি শব্দের প্রকৃত অর্থগুলি বিস্তারিত ভাবে নির্ণয় করা প্রয়োজন। এদের প্রত্যেকটিকে সম্পূর্ণ আলাদা করে দেখা দরকার। যাতে বিচারব্যবস্থা তাদের কাজে নৈতিক অবস্থানের অভাব আর অজ্ঞতার প্রতিফলন না ঘটায়।
মাদকাসক্তি যে গণস্বাস্থ্য সংক্রান্ত একটা বিষয়, তা স্বীকার করা ও এই সংক্রান্ত আইনটিকে সংশোধন ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা এ দেশে দ্রুত প্রয়োজন। এনডিপিএস আইনের ভিত্তিতেই পরিবর্তন দরকার। সেই সঙ্গে তার প্রায়োগিক দিকটিরও পুনর্বিন্যাসের প্রয়োজন রয়েছে।
যত ক্ষণ না পর্যন্ত এই সব অভিধার সংজ্ঞা নিরূপিত হচ্ছে, আমরা কিছুতেই মানুষকে তাদের প্রয়োজনীয় এবং যথাযথ চিকিৎসা প্রদান করতে পারব না। মাদকাসক্তি এক জটিল জৈব-মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা। আসক্তি আসলে একটা স্থায়ী ব্যাপার। মানুষ একবার আসক্ত হলে আসক্ত অবস্থাতেই মারা যায়। সে মাদক গ্রহণ করছে কি করছে না, তার উপর বিষয়টা নির্ভর করে না। সময় বিশেষে বলা যেতে পারে, সে সেরে উঠছে? নাকি এখনও মাদক নিচ্ছে?
এনডিপিএস-এর ভাষায় একজন আসক্ত হল সেই ব্যক্তি, “যে নেশার ওষুধ অথবা সাইকোট্রোপিক সাবস্ট্যান্সের উপরে নির্ভরশীল।” এটা একটা ব্যাপক সরলীকরণ। কারণ, কোনও মানুষ কোনও এক বিশেষ অবস্থায় রাসায়নিক ভাবে কোনও বস্তুর উপরে নির্ভরশীল হলেই তাঁকে মাদকাসক্ত বলা যাবে না। আবার অন্যদিকে, একজন মাদকাসক্ত যিনি দিনের পর দিন নেশা করছেন না, তিনিও যে কোনও সময়ে আবার মাদক ব্যবহার শুরু করে দিতে পারেন। এমন একটা জটিল বিষয়ের অতিরিক্ত সরলীকরণের ফলে আসক্তের চারিত্রিক বৈশিষ্টের আচরণগত জটিলতা এবং তার বিশেষ ব্যক্তিত্ব ধরা পড়ে না। বিষয়টাও স্ববিরোধিতায় ভুগতে থাকে। অতিমাত্রায় মাদক সেবন করেন, এমন ব্যক্তি সাময়িক ভাবে তা করতে পারেন। আবার নিজে থেকে ছেড়েও দিতে পারেন। আসক্তদের নেশার বস্তুর সঙ্গে সহজাত অস্বাভাবিক সম্পর্ক রয়েছে। সঙ্গে রয়েছে অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডার (ওসিডি), যা তাঁদের নিজে থেকে মাদক ছাড়তে বাধা দেয়।
এই দুই প্রকারের মধ্যে বিস্তর ফারাক। এনডিপিএস আইনটি রচিতই হয়েছে মাদক ব্যবহারকারীকে অপরাধী হিসেবে দেখা ও শাস্তি দেওয়ার জন্য। যে ভাবে এই আইন রচিত হয়েছে, তা এক ভয়ঙ্কর ভ্রান্তির উপর দাঁড়িয়ে। যে ভ্রান্তি বলে, মাদকের সরবরাহ কমিয়ে নেশাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
আইন আসক্তির সংজ্ঞা নিরূপণ করতে না-পারায় আসক্তদের প্রকৃত জীবন ও যাপনের সঙ্গেও যোগস্থাপন করতে পারেনি। আসক্তদের সুস্থ হয়ে ওঠার পথে সব থেকে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই আইনই। উইথড্রয়ালের মতো যে সব শারীরিক সমস্যার মধ্যে দিয়ে আসক্তদের যেতে হয়, সে সবের কোনও উল্লেখই এনডিপিএস-এ নেই। এই কারণে আইনজীবীদের পক্ষে মামলার সওয়াল করা ও বিচারকদের পক্ষে রায় দেওয়াও দুরূহ হয়ে পড়ে। এটা অনুমান করে নিতে হয় যে, বিচারকের আসনে বসে থাকা মানুষটি উইথড্রয়ালের মতো প্রাথমিক সমস্যাগুলি বোঝেন। উইথড্রয়াল হল সেই অবস্থা, যখন আসক্ত সময়মাফিক নেশার বস্তু না পেয়ে হাঁটাচলা, খাওয়া-দাওয়া, ঘুমোন, এমনকি কথা বলার ক্ষমতাও হারায়। খুব বাড়াবাড়ি হলে উইথড্রয়ালের কারণে আসক্ত ব্যক্তির মৃত্যুও ঘটতে পারে। বিচারকরা কি এই পরিস্থিতির কথা সম্যক জানেন? আমরা জানি না। এবং ‘উইথড্রয়াল’ শব্দটির উল্লেখ আইনে না থাকায় আসক্তদের কাছে আদালত হয়ে দাঁড়ায় এক বিপজ্জনক জায়গা।
এনডিপিএস আইনে এমন বিধান আছে, যা বলে, বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার বিচারাধীন মাদকাসক্তদের নেশার বস্তু জোগান দিতে পারে। এ থেকে বোঝা যায়, এই আইনের প্রণেতাদের উইথড্রয়াল সিম্পটমের বিষয়ে হয়তো কিছুটা হলেও ধারণা ছিল। এনডিপিএস তখনই আসক্তকে তার নেশার বস্ত সরবরাহের জন্য সরকারকে অধিকার দেয়, যখন তা একটা ‘মেডিক্যাল নেসেসিটি’। কিন্তু এই আইন এটা বলতে ব্যর্থ যে, ‘মেডিক্যাল নেসিসিটি’-র তখনই উদ্ভব হয়, যখন আসক্ত ব্যক্তিটি উইথড্রয়ালে ভুগছে। আইনি পরিভাষার ধোঁয়াশায় রাষ্ট্র উইথড্রয়ালকে ‘মেডিক্যাল নেসিসিটি’ বলে স্বীকারই করে না।
ইনটেন্ট ও মোটিভের (অর্থাৎ অভিপ্রায় ও উদ্দেশ্য) যে স্তম্ভের উপরে ভর করে আদালত কোনও অপরাধকে বিবেচনা করার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে, সেটাই এমন পরিস্থিতিতে বিচারব্যবস্থা থেকে উধাও হয়ে যায়। একজন আসক্তের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে এই উইথড্রয়াল। এনডিপিএস আইনে ‘ইউজার’, ‘অ্যাডিক্ট’, ‘পেডলার’, ‘ডিলার’— এগুলির মধ্যে যে পার্থক্য, তা সনাক্ত করে সেগুলিকে সঠিকভাবে সংজ্ঞায়িত করতে হবে। এই আইনে ছোটখাটো মাদকবিক্রেতাদের অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করার সম্ভাবনা সর্বাধিক। কিন্তু আসলে নিজেদের আসক্তিকে মেটানোর জন্যই তারা বেশির ভাগ সময় মাদক ফেরি করে। এ সব ক্ষেত্রে যে বিভাজনরেখাগুলো স্পষ্ট করার দরকার, তার নামগন্ধও এই আইনে নেই। তাই আদালতে ভুল বোঝার সম্ভাবনাও খুব বেশি।
এর বাইরে, একজন মাদকাসক্তের শাস্তিদানের ব্যাপারটা অনেক সময়েই দাঁড়িয়ে থাকে এদেশের জাতপাত, শ্রেণি বিভাজন এবং সামাজিক অবস্থানের উপর। তথাকথিত উচ্চবর্ণের এবং উঁচু শ্রেণির লোকেরা তাঁদের সামাজিক প্রতিপত্তি খাটিয়ে বা টাকার জোরে নিজেদের বাঁচাতে সমর্থ হন।
এনডিপিএস আইন অনুসারে, নির্ধারিত ড্রাগস বা মাদক সঙ্গে রাখা অপরাধমূলক কাজ এবং ধরা পড়লে অপরাধীর ১০ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। ২০১৮-য় পঞ্জাব সরকার কেন্দ্র সরকারের কাছে আবেদন করেছিল মাদক বিক্রি অথবা চোরাচালানের জন্য মৃত্যুদণ্ড বাধ্যতামূলক করা হোক। প্রথম বার ওই অপরাধ করলেও যেন একই শাস্তি হয়।
২০০১ সালের এক সংশোধনীতে এনডিপিএস-এর ৩১এ ধারায় শাস্তির পরিমাণ বাড়ানো হয়েছিল। সে ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডেরও বিধান ছিল। ২০১১ সালে ইণ্ডিয়ান হার্ম রিডাকশন নেটওয়ার্ক বনাম ভারত সরকারের একটি মামলায় বম্বে হাই কোর্ট অবশ্য বাধ্যতামূলক মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে রায় দেয়। ২০১৪ সালে এই আইন আবার সংশোধন করা হয়। যেখানে মৃত্যুদণ্ডের বিষয়টি আদালতের বিবেচনার উপরে ছেড়ে দেওয়া হয়। এখন আবার পঞ্জাব সরকারের এই আবেদন মৃত্যুদণ্ডের আলোচনাটিকে পুনরুজ্জীবিত করেছে।
একইসঙ্গে এ-ও সত্য যে, মাদকাসক্তদের চিকিৎসার সুযোগ তৈরি করতে এই আইন ব্যর্থ। এই মুহূর্তে মাদকাসক্তদের চিকিৎসার একটা বড় অংশই সেই সব স্বেচ্ছাসেবীদের দ্বারা পরিচালিত, যাঁরা নিজেরাও এক সময় আসক্ত ছিলেন। এই সব সেল্ফ-হেল্প গ্রুপে সাধারণত পরিষেবা পাওয়া যায় বিনামূল্যে। এগুলির সদস্য হতে গেলে কোনও চাঁদাও লাগে না। শুধু লাগে মাদক ব্যবহার থেকে বেরিয়ে আসার সদিচ্ছা। এই কলকাতাতেই এই ধরনের সংগঠনের প্রতিদিন কমপক্ষে চারটে করে মিটিং হয়। এই সাপোর্ট গ্রুপগুলির যুগান্তকারী কর্মকাণ্ড কিন্তু নির্বাহ হচ্ছে কোনও কর্পোরেট সংস্থা বা সরকারি সহায়তা ছাড়াই।
ভারতে মাদকাসক্তদের জন্য ওষুধ-ভিত্তিক চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। পরিসংখ্যান থেকে বোঝা দুরূহ, ঠিক কত জন এর ফলে সেরে উঠছেন। কারণ, চিকিৎসার ব্যাপারটা ভয়ঙ্কর সীমিত আর আইনের নজর চিকিত্সার বদলে মাদক সরবরাহ কমানোর দিকেই বেশি। ওষুধ-বিহীন চিকিৎসার সব থেকে বেশি অনুসৃত পদ্ধতিটি হল ‘মিনেসোটা মডেল’। যাকে ‘অ্যাবস্টিনেন্স মডেল’-ও বলা হয়ে থাকে। গত শতাব্দীর পাঁচের দশকে এক মনোবিদ ও এক মনোচিকিৎসক প্রথম এই পদ্ধতি প্রয়োগ করেন। পদ্ধতিটি অনেকটাই ‘অ্যালকোহলিক অ্যানোনিমাস’ (এএ) মডেলের মতো। যেখানে মানুষ একে অপরের সাহায্যে এগিয়ে আসেন। ভারতের অধিকাংশ পুনর্বাসন কেন্দ্রে এই মডেল অনুসরণ করা হয়। এই মডেলে একজন আসক্ত ব্যক্তি আর একজন আসক্ত ব্যক্তিকে নেশা ছাড়তে সাহায্য করেন। যার ফলে তৈরি হয় এক ‘হিউমেন থেরাপিউটিক কমিউনিটি’।
সাধারণত ওষুধ-ভিত্তিক চিকিৎসায় একটি মাদকের নেশা ছাড়াতে অন্য মাদক প্রয়োগ করা হয়। পঞ্জাবে সরকার থেকে আসক্তদের ‘ডি-অ্যাডিকশন পিল’ বলে কিছু একটা দেওয়া হয়, যা আসলে বুপ্রেনরফিন। হেরোইন হল মরফিনের পরিবর্ত। কৃত্রিম ভাবে তৈরি মরফিন হল নরফিন। বুপ্রেনরফিনও একই বস্তু। ব্যাপারটা অনেকটাই প্যাঁচালো এক চক্রের মতো, যেখানে আসক্তদের হাতে আর একটা রাসায়নিক পদার্থ তুলে দেওয়া হচ্ছে। হেরোইনও এই কারণেই তৈরি হয়েছিল। রাষ্ট্র যতই ‘ঠিক করছি’ বলে ভাবুক, আসক্তদের হাতে বুপ্রেনরফিন তুলে দেওয়া বা তাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া এই সমস্যার সমাধান হতে পারে না। এটা যেন সমস্যার সমাধান করতে না পেরে তা থেকে মুখ ঘুরিয়ে রাখা। ভারতীয় সমাজের একটা বড় অংশের প্রবণতাই অবশ্য নৈতিকতার ধ্বজা তুলে ধরে মাদকাসক্তদের অস্তিত্বই অস্বীকার করা বা এড়িয়ে যাওয়া। হার্ম রিডাকশন এবং ডে-কেয়ার প্রোগ্রাম, যেমন ‘মেথাডোন প্রোগ্রাম’ এক সময়ে খুব জনপ্রিয় ছিল। সে ক্ষেত্রেও পরিবর্ত ব্যবহার করা হত। কিন্তু তাতে সমস্যা বহুগুণে বেড়েও যেত। কারণ, আসক্ত ব্যক্তি আবার নেশায় ফিরে যেতেন। কোনও দীর্ঘমেয়াদি সমাধান মিলত না। সেই কারণেই এই পদ্ধতির যথার্থতা পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে। আসলে, মাদকাসক্তি এমন এক অসুস্থতা, যা ওষুধ প্রয়োগে দূর হওয়ার নয়। মেথাডোন প্রোগ্রামের স্থপতি চিকিৎসক রবার্ট জি নিউম্যান এ কথাই আজীবন বলে গিয়েছেন।
২০১৮ সালে ইংল্যান্ড, কানাডা, নরওয়ে, বেলজিয়াম এবং নেদারল্যান্ডসে বিভিন্ন বিক্ষিপ্ত ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে হেরোইন আসক্তদের অল্পমাত্রায় হেরোইন প্রদান শুরু হয়। সেটা করা হয়েছিল মূলত উইথড্রয়াল ঠেকাতে। নজরদারির মধ্যে। প্রচলিত অন্য এক চিকিৎসা পদ্ধতিতে আসক্তদের ন্যাল্ট্রেক্সোন হাইড্রোক্লোরাইড ট্যাবলেট দেওয়া হয়। এতে মস্তিষ্কে ওপিয়েড রিসেপ্টর বন্ধ হয়ে যায়। এই ওষুধের ফলে একজন আসক্ত ব্রাউন সুগার নিলেও তাঁর নেশার অনুভূতি হবে না। অস্ত্রোপচার করে আসক্তের শরীরে ন্যাল্ট্রেক্সোন হাইড্রোক্লোরাইড স্থাপন করে দেওয়াও সম্ভব। যাতে এটি মাঝে মাঝে নিজে থেকে নির্গত হয়ে ওপিয়েড রিসেপ্টর বন্ধ করে দিতে পারবে।
কিন্তু ওষুধটির প্রয়োগে উনিশ-বিশ ঘটলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় মৃত্যুও ঘটতে পারে। সেই মৃত্যু মারাত্মক যন্ত্রণাদায়ক। যেমন কোনও চিকিৎসক কোনও আসক্তকে জিজ্ঞেস করলেন, তিনি সেদিন ব্রাউন সুগার নিয়েছেন কি না। সামাজিক সমস্যার কারণেই হয়তো আসক্ত জানালেন, না। নেননি। চিকিত্সক নিশ্চিন্ত হযে তখন ন্যাল্ট্রেক্সোন হাইড্রোক্লোরাইড প্রয়োগ করলেন। এমন ক্ষেত্রে ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। রোগীর শরীরে এমন যন্ত্রণা হতে পারে, যা থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সম্ভব। এই ব্যবস্থায় আসক্ত-চিকিৎসক সম্পর্কও খুব স্বস্তিকর হয় না। আসক্ত কিছুতেই তাঁর মাদকগ্রহণ ও নেশার বিষয়টি নিয়ে খোলামেলা হতে পারেন না। এর আরও একটা কারণ, চিকিত্সার সঙ্গে জড়িত পেশাদারদের অজ্ঞতা ও সামাজিক কলঙ্কের ভয়। এই কারণেই ‘মিনেসোটা মডেল’ অনেক বেশি কার্যকর। একজন আসক্ত অন্য এক আসক্তের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন— এর কোনও পরিবর্ত হয় না।
চিকিৎসকদের একাংশের যুক্তি, ওষুধ প্রয়োগের পদ্ধতিতে ব্রাউন সুগার বা অ্যালকোহল গ্রহণের আকাঙ্ক্ষা সার্বিক ভাবেই কমতে থাকে। কিন্তু এই যুক্তিতেও ফাঁক রয়েছে। কারণ, নেশা বিষয়টাই একটি জটিল শারীরবৃত্তীয় ও মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার। মস্তিষ্কের নেশা গ্রহণ করার ক্ষমতাকে ব্লক করে কাউকে নেশা-মুক্ত করা যাবে— সেটা সম্ভব নয়। এখনও পর্যন্ত বহু ভয়ানক চিকিৎসা পদ্ধতি চালু রয়েছে, যার মধ্যে ইলেক্ট্রোকনভালসিভ থেরাপি (ইসিটি) বা ইলেক্ট্রিক শক অন্যতম। এতে ভালর চেয়ে মন্দ হয় অনেক বেশি। আধুনিক পুনর্বাসন পদ্ধতিতে ওষুধ ব্যবহার করা হয় কেবল উইথড্রয়াল সামলাতে। ওষুধের প্রয়োগ ছাড়া উইথড্রয়াল-ঘটিত অপরিসীম যন্ত্রণা সামলানো সম্ভব নয়। বিভিন্ন মাদকের উইথড্রয়ালের চরিত্রও বিভিন্ন রকমের। ব্রাউন সুগারের উইথড্রয়াল ভয়াবহ যন্ত্রণার। আবার অ্যালকোহলের উইথড্রয়াল ততটা যন্ত্রণার নয়। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও হাত কাঁপা, ঘুম না হওয়া, হ্যালুসিনেশন (কিছুদিন যাওয়ার পর) এবং প্রচুর পরিমাণে ঘাম হতে থাকে। একটা আদর্শ ব্যবস্থায় আসক্তকে প্রথমে ওষুধ-ভিত্তিক চিকিৎসার দ্বারা উইথড্রয়াল থেকে বার করে আনা হয় এবং তার পর তাঁর উপর কয়েক মাস ব্যাপী ওষুধ-বিহীন মিনেসোটা মডেলের চিকিৎসা চালানো হয়।
ভারতে এই মুহূর্তে নেশা সংক্রান্ত আইনকে পুনর্বিন্যাস করা নিয়ে সরকারের কোনও সক্রিয় উদ্যোগ রয়েছে বলে মনে হয় না। তবে ব্যক্তিগত স্তরে আমরা এমন উদ্যোগ তো গ্রহণ করতেই পারি। এ বিষয়ে গণস্তরে আলোচনা করা বিশেষ প্রয়োজন। এই ব্যাপারে জড়িত সব পক্ষকেই নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। কোনও নৈতিকতার মধ্যে না গিয়ে খানিকটা দীর্ঘমেয়াদি এবং সুবিবেচিত ব্যবস্থাই এ ক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে। এই ধরনের আলোচনা থেকে মাদকাসক্তি সংক্রান্ত প্রাথমিক ভ্রান্তিগুলো দূর হতে পারে। মৃত্যুদণ্ডের জিগির তোলার ব্যাপারটা রাজনীতিবিদদের একটা চমকদার জনপ্রিয়তা পাওয়ার রাস্তা। যদিও পঞ্জাব সরকার আসক্তদের মৃত্যুদণ্ড প্রদানের কাজে আদৌ সফল হয়নি। তবু তাদের তোলা এই জিগির জনগণের কাছে কিছু বার্তা তো বয়ে নিয়ে যাচ্ছেই। এটা আসলে একপ্রকার হেরে যাওয়া। নেশা ও সেই সংক্রান্ত বিষয়গুলিকে সহমর্মিতার সঙ্গে সামলাতে না পারার অক্ষমতা ঢাকতেই এই হুঙ্কার। যেমন ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট নিজে হাজার হাজার মাদকাসক্তকে হত্যা করার নির্দেশ দিচ্ছেন। এর পিছনে নির্জলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছাড়া আর কিছু রয়েছে বলে মনে হয় না।
এনডিপিএস আইন সংশোধন করার সময়ে মাথায় রাখতে হবে হু এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের পরামর্শ। বুঝতে হবে, এই ব্যাপারে কেন আইনপ্রণেতা বা বিচারব্যবস্থার উপরে নির্ভর করতে পারি না। নির্ভর করতে পারি না ধর্মাশ্রয়, আইন প্রয়োগকারী এজেন্সি বা সাইকিয়াট্রিস্টদের উপরেও। আমাদের এই কাঠামো থেকে বেরোতে হবে। পারলে এই কাঠামোকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করতে হবে। যাঁরা যন্ত্রণা পাচ্ছেন, তাঁদের সঙ্গে, তাঁদের পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে হবে। আইন যাঁদের অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করছে, তাঁদের পাশে দাঁড়াতে হবে।
(লেখক একজন আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রাপ্ত চলচ্চিত্র পরিচালক ও আলোকচিত্র শিল্পী। তাঁর ছবিতে মাদকাসক্তি অন্যতম বিষয়)
এই নিবন্ধটি ‘অ্যাকাডেমি ম্যাগ’ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি লেখার পরিবর্ধিত ও পরিমার্জিত রূপ।