আইপিএস অফিসার ডি রূপা (বাঁ দিকে) এবং আইএএস অফিসার রোহিণী সিন্ধুরি। ফাইল চিত্র ।
লাভ হল না সরকারের পদক্ষেপেও। কর্নাটকের মহিলা আইপিএস এবং আইএএস অফিসারের ঝগড়া গড়াল আদালত পর্যন্ত। বুধবার আইপিএস অফিসার ডি রূপার বিরুদ্ধে বেঙ্গালুরু সিটি সিভিল কোর্টের দ্বারস্থ হলেন আইএএস অফিসার রোহিণী সিন্ধুরি।
রোহিণীর অভিযোগ, রাজ্য সরকারের কঠোর আদেশ সত্ত্বেও তাঁকে নিয়ে মন্তব্য করে ফেসবুকে নতুন পোস্ট করেছেন রূপা।
রূপা ফেসবুকে নতুন একটি পোস্ট করে লেখেন, “সংবাদমাধ্যমের বন্ধুদের জানাচ্ছি, অনুগ্রহ করে আমি যে দুর্নীতির বিষয়টি উত্থাপন করেছি তার উপর নজর রাখুন। আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে কাউকে বাধা দিইনি। এই ধরনের দুর্নীতি সাধারণ মানুষকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে। যেখানে কর্নাটকে একজন আইএএস অফিসার মারা যান, তামিলনাড়ুতে একজন আইপিএস মারা যান, কর্ণাটকে একজন আইএএস স্বামী-স্ত্রীয়ের ইতিমধ্যেই বিচ্ছেদ হয়েছে। আমি এবং আমার স্বামী এখনও একসঙ্গে আছি। আমরা এখনও পরিবারকে অটুট রাখতে লড়াই করে যাচ্ছি। অনুগ্রহ করে সেই অপরাধীকে প্রশ্ন করুন যিনি প্রতিটি পরিবারকে ভাঙার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। না হলে আরও অনেক পরিবার ধ্বংস হয়ে যাবে। আমি একজন শক্তিশালী নারী। আমি যুদ্ধ করব। সবার লড়াই করার মতো শক্তি নেই।’’
রোহিণীর মতে রূপা এই ফেসবুক পোস্টে তাঁকেই আক্রমণ করেছেন এবং তাঁকেই বিভিন্ন পরিবারে ভাঙন ধরানোর জন্য দায়ী করেছেন। আর সেই কারণেই রূপার বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হলেন রোহিণী।
এই ঘটনার সূত্রপাত আইপিএস অফিসার রূপার ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করেই। আইএএস অফিসার রোহিণীর বিরুদ্ধে রূপার অভিযোগ, রোহিণী নিজের একটি ছবি বেশ কয়েক জন পুরুষ আইএএস অফিসারকে পাঠিয়েছিলেন। রোহিণীর এই ছবি অনেকের সঙ্গে শেয়ার করা নিয়ম-বহির্ভূত বলেও রূপা উল্লেখ করেন।
ফেসবুকে রূপা লেখেন, “এই ছবিগুলি স্বাভাবিক মনে হতে পারে। কিন্তু এক জন মহিলা আইএএস অফিসার যদি অন্য আইএএস অফিসারকে এই ধরনের ছবি পাঠান, তা হলে তার অর্থ কী দাঁড়ায়? এটি আর ব্যক্তিগত বিষয় থাকে না। এটি নিয়মবিরুদ্ধ। সেলুনের ছবি পাঠানো বা ঘুমানোর ছবি পাঠানো স্বাভাবিক মনে হতে পারে, কিন্তু যে পরিস্থিতিতে এই ছবিগুলি পাঠানো হয়েছিল, তা অন্য কথা বলে।”
তবে রূপার এই অভিযোগ মোটেও ভাল চোখে নেননি রোহিণী। রোহিণীর দাবি, রূপার অভিযোগগুলি ভিত্তিহীন এবং তাঁর বদনাম করার জন্য এই ছবিগুলি ব্যবহার করা হয়েছে। রোহিণী ফেসবুকে রূপার বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ এনে লেখেন, ‘‘রূপা সব সময় সংবাদমাধ্যমের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করেন এবং ওঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট তার জলজ্যান্ত প্রমাণ। এই মুহূর্তে আমার মাধ্যমে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চলছে।’’ রূপার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেবেন বলেও রোহিণী হুমকি দিয়েছিলেন।
পুরো বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর কর্নাটকের সরকার দুই অফিসারের বিরুদ্ধেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সমাজমাধ্যমে একে অপরের দিকে ‘কাদা ছোড়াছুড়ি’র জন্য মঙ্গলবার বিকেলে দুই মহিলা অফিসারকেই বদলি করা হয়।
কর্ণাটক সরকার মঙ্গলবার এই প্রকাশ্য বিবাদের জন্য দুই অফিসারকে নোটিসও ধরিয়েছিল এবং তাঁদের ‘লাগাম’ টেনে ধরে সমাজমাধ্যম ব্যবহার করতে এবং একে অপরের বিরুদ্ধে কিছু পোস্ট না করতে নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু রোহিণীর দাবি, রূপার নতুন পোস্ট সেই নিয়মের উল্লঙ্ঘন। আর সেই কারণেই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি।