ছবি পিটিআই।
সেই ‘মাথা ভেঙে দাও’ পুলিশি অত্যাচারের প্রতিবাদ জানাতে মঙ্গলবার হরিয়ানার কারনালে মহাপঞ্চায়েত ডেকেছেন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী কৃষকেরা। আর সেই মহাপঞ্চায়েত বা কৃষকদের জমায়েত না-হতে দিতে বদ্ধপরিকর রাজ্যের বিজেপি সরকার। কৃষকেরা তাঁদের দাবির সমর্থনে কারনালে জড়ো হয়ে সভা করে তার পরে সেখানকার সচিবালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন। এই কর্মসূচি বানচাল করতে কারনালে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। রাস্তায় রাস্তায় চেকপোস্ট ও ব্যারিকেড গড়া হয়েছে।
সব চেয়ে বড় কথা, আজ বেলা সাড়ে ১২টা থেকেই গোটা শহরে মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যা দেখে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন, হরিয়ানাকে কি কাশ্মীর বানিয়ে ছাড়ছেন মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর?
কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে ২৮ অগস্ট হরিয়ানায় সড়ক অবরোধের ডাক দিয়েছিলেন আন্দোলনকারী কৃষকেরা। সেই অবরোধ তুলতে কারনালে ভয়ঙ্কর লাঠি চালায় পুলিশ। একটি ভিডিয়োতে দেখা যায়, মহকুমাশাসক আয়ুশ সিন্হা পুলিশকে বলছেন— “মারো, মারো। মাথায় লাঠি মারো। মেরে ওদের মাথা গুঁড়িয়ে দাও!” ওই দিন পুলিশ সেই নির্দেশ পালন করার পরে লাঠির আঘাতে মাথা চুরমার হয়ে এক আন্দোলনকারী মারা যান। মারাত্মক জখম নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ১০ জন। এ ছাড়া লাঠির ঘায়ে রক্তাক্ত হন বহু কৃষক। এই ঘটনার পরে আন্দোলনকারী কৃষকদের সমন্বয়কারী সংগঠন সংযুক্ত কিসান মোর্চা নিহতের জন্য ২৫ লক্ষ এবং জখমদের ২ লক্ষ টাকা করে অর্থসাহায্য দাবি করে। মহকুমাশাসক সিন্হার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ এনে এফআইআর-এর দাবিও জানানো হয়।
আয়ুশ সিন্হার ভিডিয়োটি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পরে নিন্দার ঝড় ওঠে। সরকার থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয় এমন মন্তব্যের জন্য মহকুমাশাসককে শাস্তি দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। কিন্তু পরের দিন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী ওই আমলার হয়ে সাফাই গাওয়ার পরে পুরো বিষয়টি চাপা পড়ে যায়। খট্টর বলেন, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের কড়া হওয়াটা দরকার ছিল। তারা ঠিক কাজ করেছে। মহকুমাশাসকও পুলিশকে নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট দক্ষতা দেখিয়েছেন। শুধু মুখ ফস্কে কিছু মন্তব্য তিনি করে ফেলেছেন, যা না-করলেই ভাল হত।” জেলাশাসক তখন মুখ্যমন্ত্রীর সুরে বলতে শুরু করেন, “কড়া না-হলে মারমুখী কৃষকদের নিয়ন্ত্রণে আনা যেত না। আয়ুশ সিন্হা সেই কাজটাই করেছেন। কৃষকেরাও ইট ছুড়ছিল পুলিশের দিকে। সেই সময়ে উত্তেজনার মধ্যে তিনি যা বলে ফেলেছিলেন, সেটা কথার কথা। মাথা ভাঙার নির্দেশ তিনি দেননি।” তবে গত বুধবার খট্টর সরকার রাজ্যের নানা পদে থাকা ১৯ জন আইএএস-কে একসঙ্গে বদলি করেছেন। তার মধ্যে মহকুমাশাসক সিন্হাও রয়েছেন। তাঁকে নগরোন্নয়ন দফতরের অতিরিক্ত সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবারে কৃষকদের মহাপঞ্চায়েতকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন খট্টর। কৃষকেরাও রবিবার থেকে শহরের সীমানায় এসে ঘাঁটি গেড়েছেন। কৃষক নেতাদের অনেকেই আগাম গ্রেফতারি এড়াতে গা-ঢাকা দিয়েছেন। ট্রাফিকের ঘোষণায় পুলিশ জানিয়েছে, অম্বালা-দিল্লি জাতীয় সড়কে মঙ্গলবার যানজট হতে পারে। মানুষ যেন বিকল্প পথ বেছে নেন। পুলিশের এডিজি নভদীপ সিংহ ভির্ক জানিয়েছেন, কারনালের মিনি সচিবালয় ঘেরাও প্রতিহত করতে পুলিশি নিরাপত্তার সব রকম বন্দোবস্ত করা হয়েছে। তাঁর কথায়, “পুলিশ অশান্তি আটকাতে সচেষ্ট থাকবে। কিন্তু কেউ আইন ভাঙলে কড়া পদক্ষেপ করবে।” সব মিলিয়ে মঙ্গলবার কারনাল থাকবে নজরবন্দি। এমনকি মোবাইল ইন্টারনেটও বন্ধ করে দেওয়ায় ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। রাজ্যের বিরোধীরা বলছেন, কৃষকদের সঙ্গে লড়াইয়ে নেমেছেন খট্টর। আর সেটা করতে গিয়ে কারনালকে কাশ্মীর বানিয়ে ছেড়েছেন তিনি। তাই ইন্টারনেটও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পুলিশের এই তোড়জোড়ে সাধারণ মানুষ আতঙ্কে।