দুর্দশার সেই ছবি। ছবি : টুইটার থেকে।
তিনি জেলাশাসক। তাঁর নাকের ডগা দিয়েই গৃহহীন বয়স্কদের টেনে হিঁচড়ে রাস্তায় ফেলেছিল ইনদওরের একদল পুরকর্মী। তাদের শাস্তি হয়েছে। তা বলে তিনিও তো ‘অপরাধ’-এর দায় এড়াতে পারেন না। দেশজুড়ে নিন্দার মুখে পড়া এই ঘটনায় তাই ক্ষমা চাইলেন ইনদওরের জেলা শাসক মণীশ সিংহ। যাঁদের সঙ্গে এই অবিচার হয়েছে, তাঁদের কাছে নয়। মণীশ তাঁর ‘পাপ’-এর জন্য ক্ষমা চেয়েছেন স্বয়ং ঈশ্বরের কাছে।
রবিবার ইনদওরের খাজরানা গণেশ মন্দিরে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন মণীশ। সেই মন্দিরেই প্রশাসনের তরফে পুরকর্মীদের দুর্ব্যবহারের জন্য ঈশ্বরের কাছে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মণীশ। সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘আমরা প্রশাসক, এ ধরনের ঘটনার দায় তো এড়িয়ে যেতে পারি না! তাই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছি যাতে এই ভুলের জন্য তিনি আমাদের ক্ষমা করে দেন।’’
ইনদওরে গৃহহীন বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের অমানবিক ভাবে শহরের বাইরে বার করে দেওয়ার ঘটনা দেশজুড়ে তীব্র সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। সমাজমাধ্যমে এই ঘটনাটির দু’টি ভিডিয়ো ভাইরাল হয় শুক্রবার। তাতে দেখা যাচ্ছে রাস্তার ধারে পুরসভার একটি ট্রাক দাঁড় করিয়ে হতদরিদ্র কিছু বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে টেনে হিঁচড়ে নামাচ্ছেন একদল পুরকর্মী। এই বয়স্কদের অনেকেই ঠিকমতো হাঁটতে বা দাঁড়াতে পারেন না। অত্যন্ত দুর্বল। তারপরও তাদের প্রতি কোনও মায়া-মমতা দেখানো হয়নি। স্থানীয় গ্রামবাসীদের প্রতিবাদের পরোয়া না করেই একের পর এক রাস্তায় টেনে নামানো হয়েছে গৃহহীন ওই বয়স্কদের। ভিডিয়ো ভাইরাল হতেই ইনদওর নগর প্রশাসনের এই অমানবিকতার নিন্দায় মুখর হন দেশবাসী।
কিছুদিন আগেই দেশের ‘পরিচ্ছন্নতম শহর’-এর তকমা পেয়েছিল ইনদওর। এই নিয়ে টানা চার বছর ধরে এই শিরোপা পেল তারা। শুক্রবারের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে দেশবাসী প্রশ্ন তোলেন, তবে কি এ ভাবেই শহর ‘পরিস্কার’ রাখতে চায় প্রশাসন?
এর আগে পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফিরতে সাহায্য করে দেশবাসীর মনে নিজের পাকাপোক্ত জায়গা বানিয়ে নিয়েছিলেন বলিউড অভিনতা সোনু সুদ। তিনিও ঘটনাটির নিন্দা করে ইনদওরের স্থানীয় বাসিন্দাদের অনুরোধ করেন গৃহহীন বয়স্কদের সাহায্য করার জন্য।
ইনদওরের ঘটনায় নগর নিগমের এক ডেপুটি কমিশনারকে সাসপেন্ড করেন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান। বহিষ্কার করা হয় দুই অস্থায়ী কর্মীকেও। কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ঙ্কা গাঁধীও ঘটনাটিকে ‘মানবিকতার কলঙ্ক’ বলে মন্তব্য করেন।