Russia Ukraine War

Ukraine Russia War: ভবিষ্যৎ কী, উত্তর খুঁজছেন ইউক্রেন-ফেরত পড়ুয়ারা

যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউক্রেনে ডাক্তারি পড়ুয়া ভারতীয়ের সংখ্যা প্রায় ১৮ হাজার। যাঁদের প্রত্যেককেই নিজের দায়িত্বে পেরোতে হয়েছে ইউক্রেনের সীমানা।

Advertisement

জয়তী রাহা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২২ ০৫:০১
Share:

ইউক্রেন ফেরত ছাত্রছাত্রীরা ছবি রয়টার্স।

স্বপ্ন পূরণ করতে কেউ জমি-বাড়ি-গয়নাবন্ধক রেখেছেন। কেউ বা শিক্ষা-ঋণ, কেউ আবার ব্যক্তিগত ঋণ নিয়েছেন। চড়া হারে মেটাতে হচ্ছে সেই সব সুদ। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে এই ঋণ নেওয়া, তা কি আদৌ পূরণ হবে? ইউক্রেন-ফেরত ভারতীয় ডাক্তারি পড়ুয়া এবং তাঁদের পরিবারের কাছে এই একটাই প্রশ্ন।

Advertisement

যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউক্রেনে ডাক্তারি পড়ুয়া ভারতীয়ের সংখ্যা প্রায় ১৮ হাজার। যাঁদের প্রত্যেককেই নিজের দায়িত্বে পেরোতে হয়েছে ইউক্রেনের সীমানা। সে দেশে ছ’বছরের মোট ১২টি সিমেস্টার নিয়ে এমবিবিএস পঠনপাঠন তাঁদের অসমাপ্ত রয়ে গিয়েছে। কারণ, ১৮ হাজারের অধিকাংশই এমবিবিএস পড়ুয়া। ইউক্রেনে যাঁরা ইন্টার্নশিপের অপেক্ষায় ছিলেন, অর্থাৎ ১২ নম্বর সিমেস্টার চলছিল তাঁদের জন্য ইতিমধ্যেই ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন (এনএমসি) বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তা হল ইন্টার্নশিপ পর্বে পৌঁছনো পড়ুয়ারা ফরেন মেডিক্যাল গ্র্যাজুয়েট এগ্‌জামিনেশন (এফএমজিই) পাশ করে এ দেশে ইন্টার্নশিপ শেষ করে ভারতে প্র্যাক্টিস করতে পারবেন।

কিন্তু এগারো বা তার নীচের সিমেস্টারের পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ কী? ইউক্রেনের কিভ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির পঞ্চম বর্ষের ছাত্র মহম্মদ সইফ আলি। বীরভূমের বাসিন্দা সইফের বাবা ছোটখাটো ব্যবসায়ী। করোনার কারণে সেই ব্যবসা পুরো বন্ধ। মা আশাকর্মী। ১২ লক্ষ টাকা শিক্ষা লোন নিয়ে ইউক্রেনে পড়তে গিয়েছিলেন সইফ। ব্যক্তিগত লোনও নিতে হয়েছে। কিন্তু আদৌ ডাক্তারি পড়া কি শেষ হবে?

Advertisement

এই উত্তর খুঁজতেই সে দেশে পড়তে যাওয়া ৬৩ জনের সই সংগ্রহ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখেছিলেন সইফ। আজ, বুধবার সাড়ে ১২টায় নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে পড়ুয়াদের সঙ্গে দেখা করার সময় দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সইফের প্রশ্ন, ‘‘আমাদের নিয়ে কী ভাবছে সরকার?’’ তাঁর মতে, ‘‘যাঁরা ইউক্রেনে পড়তে গিয়েছি, বেশির ভাগই মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত। আমার আর এক বছর শেষ করতে খরচ হত সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা। এ দেশের প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজে এক বছরের খরচ ১৬ লক্ষ টাকা। প্রাইভেটের এই বিপুল খরচ টানা অসম্ভব। এমন কিছু ব্যবস্থা হোক, যেটা এত পড়ুয়ার ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ঠেলে দেওয়ার থেকে আটকাবে।’’

বনগাঁর পাল্লা পঞ্চায়েতের বাসিন্দা ইউক্রেনের আরেক মেডিক্যাল পড়ুয়া কৃতী সেন। বাবা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। ঋণ নিয়ে একমাত্র মেয়েকে ডাক্তারি পড়তে পাঠিয়েছিলেন। চতুর্থ বর্ষের ওই পড়ুয়া ভেবেই পাচ্ছেন না এত বছর ডাক্তারি পড়েও তা শেষ করতে না-পারলে কী করবেন তিনি। কী ভাবে এতগুলো টাকা শোধ করবেন?

ইউক্রেনের মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়গুলি ১৫ মার্চ পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছিল। সামান্য আশার কথা যে ১৫ তারিখ, মঙ্গলবার থেকেই তাঁদের অনলাইন ক্লাস শুরু হয়েছে বলে জানাচ্ছেন পড়ুয়ারা। কিভের মেডিক্যাল পড়ুয়া প্রচেত বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘কিভ, লিভিভ, টার্নোপিল-সহ পশ্চিম ইউক্রেনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি অনলাইন ক্লাস আজ শুরু করল। পূর্ব ইউক্রেনের খারকিভের পড়ুয়াদের নোটিস দিয়েছে দু’সপ্তাহ বাদে শুরু হবে ক্লাস। বুঝতে পারছি না, কী হতে চলেছে।’’

অনলাইন ক্লাস শুরু হলেও আশা দেখছেন না বহু পড়ুয়া। কারণ, অতিমারির সময়ে চিন থেকে দেশে ফেরা পড়ুয়াদের আজও সেখানে ফিরে যাওয়া হয়নি। বিদেশি পড়ুয়াদের ভিসায় নিষেধাজ্ঞা জারির কারণে উদ্ভুত এই পরিস্থিতি। যুদ্ধ শেষে আদৌ থাকবে কি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি? যুদ্ধ থামবেই বা কবে? এ সবই ঘুরপাক খাচ্ছে পড়ুয়াদের মধ্যে।

কী ভাবছে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন? অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি উজ্জ্বলকুমার সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে। তবে প্রত্যেক দেশেই কন্ট্রোলিং বডির নির্দিষ্ট আইন আছে। তা বজায় রেখে সব বিবেচনা করে পদক্ষেপ করতে হবে। পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও ভাবনাচিন্তা হচ্ছে। তাতে আইএমএ-র ভূমিকাও থাকছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement