প্রতীকী ছবি।
প্রজাতন্ত্র দিবসের আগে পঞ্জাবে ফিদায়েঁ ড্রোনের আশঙ্কা ঘুম কেড়েছে গোয়েন্দাদের। বিশেষ করে গত সপ্তাহে পঞ্জাবের তরণতারণ থেকে দু’টি ড্রোন উদ্ধারের ঘটনায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে পশ্চিম সীমান্তে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, উন্নত প্রযুক্তির পাক ড্রোনগুলি তথ্য সংগ্রহ করতে পারে, আবার সেগুলি দিয়ে হামলাও চালানো যায়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানায়, গত অগস্টে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের পর থেকে পঞ্জাব ও জম্মু সীমান্তে পাক ড্রোনের আনাগোনা বেড়েছে। গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, গত অগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত প্রতি মাসে গড়ে ১০-১৫টি পাক ড্রোনের ভারতে প্রবেশের প্রমাণ মিলেছে। যার মধ্যে একটি ড্রোন পাকিস্তান থেকে অস্ত্র নিয়ে পঞ্জাব সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঢুকে ভেঙে পড়েছিল। গোয়েন্দারা ভেবেছিলেন, সীমান্তে নজরদারির জন্য পাকিস্তান ওই ড্রোনগুলি ব্যবহার করছে। কিন্তু ভেঙে পড়া ড্রোন থেকে অস্ত্র উদ্ধারের পরে বোঝা যায়, ইসলামাবাদ খলিস্তানি উগ্রপন্থীদের মদত দিতে ড্রোনের মাধ্যমে অস্ত্র, মাদক ও বিস্ফোরক পাঠানোর নতুন ছক কষছে। গোয়েন্দাদের দাবি, তার পরেই সীমান্তে ড্রোনের উপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
গোয়েন্দাদের কাছে খবর, বর্তমানে যে ড্রোনগুলি পাকিস্তান ব্যবহার করছে, সেগুলি ‘প্রি-ফেড’ প্রযুক্তির। নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে এই ড্রোনগুলি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানের ছবি বহু উঁচু থেকে তুলে নিরাপদে ফিরে যেতে সক্ষম। বিস্ফোরক ভরে সেগুলিকে আত্মঘাতী-ড্রোনে পরিণত করা যায়, যেগুলি নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অনেকটা দূরত্ব পার হয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। এগুলিকে সহজে চিহ্নিত করা যায় না। সম্প্রতি পঞ্জাব সীমান্তে উদ্ধার হওয়া ড্রোনটিতে বিস্ফোরক রাখার জায়গা থাকায় উদ্বেগ বেড়েছে গোয়েন্দাদের।
আরও পড়ুন: মহারাষ্ট্রে শিবসেনা ভেঙে সরকার গড়ার স্বপ্ন দেখছে বিজেপি
বিএসএফ বা পঞ্জাব পুলিশের সমস্যা হল, এ ধরনের ড্রোন নামানোর প্রযুক্তি নেই ভারতের হাতে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘এখানে লক্ষ্যবস্তু উড়ন্ত। ওড়ে অনেক উপর দিয়ে। বিমান বা হেলিকপ্টার হলে অ্যান্টি এয়ারক্র্যাফ্ট গান ব্যবহার করা যায়। কিন্তু এখানে পশ্চিম সীমান্তের কোন জায়গা দিয়ে ড্রোন নিঃশব্দে ঢুকে পড়বে, তা বোঝা মুশকিল। একমাত্র দূরপাল্লার স্নাইপার রাইফেল ছাড়া এগুলিকে নামানো অসম্ভব।’’
ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ। সীমান্ত জুড়ে স্নাইপার মোতায়েন কার্যত অসম্ভব। ফলে প্রযুক্তি নির্ভরতা বাড়ানোর উপরে জোর দিচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তাদের বক্তব্য, সীমান্ত জুড়ে ড্রোন জ্যামিং করার প্রযুক্তি বসানোর প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। যা ড্রোনকে চিহ্নিত করার সঙ্গেই তার গতিবিধি আটকে দেবে। যাতে লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছনোর আগেই তা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘ড্রোন বর্তমান সময়ে নিরাপত্তার প্রশ্নে বড় চ্যালেঞ্জ। এ ক্ষেত্রে সরকারের নীতি কী হবে, তা নিয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ের আলোচনা চলছে। বিদেশি প্রযুক্তি খরচসাপেক্ষ হওয়ায় দেশীয় প্রযুক্তির প্রশ্নেই জোর দিয়েছে সরকার।’’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, সার্জিকাল স্ট্রাইকে ধ্বংস হওয়া জঙ্গি শিবিরগুলি ফের সক্রিয় হয়েছে। সেখানে ২৫০-৩০০ জঙ্গি জড়ো হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছে জঙ্গি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আফগান সন্ত্রাসবাদীরাও।