বাংলাদেশে বিক্ষোভ। — ফাইল চিত্র।
অশান্ত বাংলাদেশের পরিস্থিতির উপর ভারত নজর রাখছে। সে দেশে ভারতীয় এবং সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য এ বার নরেন্দ্র মোদী সরকার একটি কমিটি গঠন করল। সেই কমিটির নেতৃত্বে থাকবেন সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) এডিজি। ভারতীয় সেনার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন কর্তাদের এই কমিটিতে রাখা হয়েছে।
শুক্রবার কেন্দ্র একটি বিবৃতিতে বলেছে, ‘‘ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে ভারত সরকার। বাংলাদেশে থাকা ভারতীয় নাগরিক এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এই কমিটি কাজ করবে। বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে তারা।’’ বিএসএফের বেশ কয়েক জন উচ্চপদস্থ কর্তাকে এই কমিটির সদস্য করা হয়েছে।
‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’কে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিন ধরেই অশান্ত বাংলাদেশ। সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলন এক সময়ে সরকার বিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়। আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল একটাই, শেখ হাসিনার অপসারণ। পড়ুয়াদের এই আন্দোলনে সাধারণ মানুষকেও দলে দলে যোগ দিতে দেখা যায়। লাগাতার আন্দোলনের জেরে বাধ্য হয়েই প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছাড়েন হাসিনা। তিনি দেশ ছাড়তেই নতুন করে উত্তেজনা শুরু হয় ওপার বাংলায়।
অভিযোগ, বিক্ষোভকারীদের তাণ্ডবে ভীত হয়ে পড়েন সে দেশের সংখ্যালঘুরা। প্রাণ বাঁচাতে পালানোর চেষ্টা করছেন তাঁরা। ত্রস্ত বাংলাদেশের অনেক ভারতীয়ও। অশান্ত বাংলাদেশ থেকে কী ভাবে দেশে ফিরবেন, তা নিয়ে তাঁরা উদ্বিগ্ন। সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বেশ কিছু ভিডিয়োতে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের খণ্ডচিত্র ধরা পড়েছে (যদিও সেই সব ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন)।
ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর আগেই সংসদে জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে নয়াদিল্লি। কূটনৈতিক স্তরেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। রাজ্যসভা এবং লোকসভাতে তিনি বলেন, “আমরা সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি। বহু গোষ্ঠী, সংগঠন সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার দিকটি নিশ্চিত করছে বলে খবর পাওয়া গিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আমরা এই বিষয়ে গভীর ভাবে উদ্বিগ্ন থাকব।” এই নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে বৈঠকও করেন বিদেশমন্ত্রী। তার পরই এই কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্র।
অন্য দিকে, বাংলাদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে চিঠি দিলেন অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘ। শুক্রবার উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুরনগর ঠাকুরবাড়িতে সাংবাদিক বৈঠকে মতুয়া মহাসংঘের সাধারণ সম্পাদক সুখেন্দ্রনাথ গাইন বাংলাদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনকে সামনে রেখে দুষ্কৃতীরা হিন্দুদের উপর অত্যাচার করছে। তাঁদের বাড়ি ঘরে লুটপাট চালাচ্ছে। বাংলাদেশে হিন্দু মহিলারাও সুরক্ষিত নন। তাঁদের নিরাপত্তা চেয়ে এবং হিন্দুদের উপর অত্যাচার বন্ধ করার দাবি জানিয়ে অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’’