(বাঁ দিকে) শেখ হাসিনা। সাজিব ওয়াজেদ জয় (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
শেখ হাসিনার রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন পুত্র সাজিব ওয়াজেদ জয়। কেন হাসিনা আর রাজনীতিতে থাকতে চান না, তা-ও স্পষ্ট করেছিলেন তিনি। এ-ও বলেছিলেন, ‘‘মা আর দেশে ফিরতে চান না।’’ তার পর থেকে পরিস্থিতি বদলেছে। অভিযোগ, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উপর অত্যাচার চলছে। এমনকি, খুনও করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দলীয় কর্মী-নেতাদের পাশে দাঁড়াতে তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে আসতে প্রস্তুত, এমনই দাবি করলেন জয়। শুধু তা-ই নয়, হাসিনা কবে দেশে ফিরবেন তা-ও জানিয়ে দিলেন তিনি। তবে জয় আগে জানিয়েছিলেন তাঁর রাজনীতিতে আসার কোনও পরিকল্পনা নেই। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত বদল করতে চান বলেও জানান হাসিনা-পুত্র।
ওয়াশিংটন থেকে ফোনে টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জয় বলেছেন, ‘‘আমাদের দল এবং কর্মীদের হিংসার হাত থেকে বাঁচাতে যা যা করার দরকার, তা আমি করব। যদি রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে, তবে পিছিয়ে আসব না। আমার রাজনীতিতে আসার কোনও উচ্চাঙ্ক্ষা ছিল না। আমি আমেরিকাতেই পাকাপাকি ভাবে থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে দেশের নেতৃত্বে শূন্যস্থান রয়েছে। দলের স্বার্থে আমি সক্রিয় হয়েছি।’’
সোমবার দুপুরেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রিত্বে ইস্তফা দিয়ে সেনাবাহিনীর বিমানে ভারতে চলে আসেন হাসিনা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন তাঁর বোন শেখ রেহানা। তবে হাসিনার দেশ ছাড়ার খবর ঘুণাক্ষরেও জানতে পারেননি তাঁর দল আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রীরা। হাসিনা চলে যাওয়ার পরে আন্দোলনকারীদের হামলার মুখে পড়েন তাঁদের অনেকেই। অনেকের মৃত্যু হয়। অনেকে ঘরছাড়া হন। আত্মগোপনও করতে হয় বহু নেতাকে। যা নিয়ে অনেক আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী হাসিনার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। অনেকেই দাবি করছেন, তাঁদের অনাথ করে দিয়ে দেশ ছেড়েছেন হাসিনা। তাঁর দেশে না ফেরার খবরে হতাশ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। সেই প্রসঙ্গে জয় বলেন, ‘‘আপাতত মা ভারতে আছেন। অন্তর্বর্তী সরকার দেশে নির্বাচন করানোর সিদ্ধান্ত নিলেই তিনি বাংলাদেশে ফিরবেন। আমি নিশ্চিত আওয়ামী লীগ সেই নির্বাচনে অংশ নেবে এবং আমরা জিততেও পারি। বাংলাদেশে আমাদের অনেক সমর্থক রয়েছেন।’’
বৃহস্পতিবারই বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসাবে শপথ নিয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীতে রয়েছেন ১৭ জন সদস্য। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসাবে শপথ নিয়ে ইউনূস বলেন, ‘‘আমি বাংলাদেশের সংবিধানকে সমর্থন এবং রক্ষা করব। নিষ্ঠার সঙ্গে নিজের দায়িত্ব পালন করব।’’ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জয় আগেই আর্জি জানিয়েছিলেন, ‘‘দয়া করে দেশে আইন ও শৃঙ্খলার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করুন। কারণ, দেশে চূড়ান্ত অরাজকতা চলছে। দেশটা ক্রমেই দ্বিতীয় আফগানিস্তান হয়ে উঠছে।’’ বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে জয় সাহায্য চেয়েছেন ভারত সরকারেরও। হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য ভারতের নরেন্দ্র মোদী সরকারকে ধন্যবাদ দিয়ে জয় বলেছেন, ‘‘আওয়ামী লীগ ভারতের সব সময়ের সহযোগী।’’ তবে ভারত থেকে হাসিনা কোথায় যাবেন বা তাঁর পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, সে বিষয়ে এখনও কোনও স্পষ্ট বক্তব্য মেলেনি কোনও পক্ষের তরফ থেকে।