প্রতীকী ছবি।
টানা প্রায় ছ’সপ্তাহ বন্ধ থাকার পরে মঙ্গলবার থেকে ধাপে ধাপে যাত্রিবাহী ট্রেন চালু করছে রেল মন্ত্রক। প্রাথমিক ভাবে দিল্লি থেকে হাওড়া-সহ দেশের ১৫টি শহরের মধ্যে ১৫ জোড়া ট্রেন যাতায়াত করবে বলে আজ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে রেল। সোমবার বিকেল ৪টে থেকে এই ট্রেনগুলির টিকিট বিক্রি শুরু হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে টিকিট মিলবে শুধু আইআরসিটিসির ওয়েবসাইটে। অর্থাৎ, রেল স্টেশনে বা অন্য কোনও রিজার্ভেশন কাউন্টারে টিকিট মিলবে না।
তৃতীয় দফার লকডাউন ১৭ মে শেষ হওয়ার আগে থেকেই রেল যে-ভাবে ট্রেন পরিষেবা চালু করে দিচ্ছে, তা থেকে স্পষ্ট, মোদী সরকার এ বার করোনার জন্য সাবধানতা বজায় রেখেই দেশে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরিয়ে আনতে চাইছে। এই আবহেই সোমবার ফের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন প্রধানমন্ত্রী। তৃতীয় দফার লকডাউন শেষের এক সপ্তাহ আগে, সোমবার দুপুরের ওই বৈঠকে মূলত অর্থনীতির গতি ফেরানোই প্রধান বিষয় হতে চলেছে বলে সরকারি সূত্রের খবর। অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছাড়পত্রের পাশাপাশি, আর্থিক প্যাকেজ এবং কৃষি-বিদেশি লগ্নি-খনির মতো বেশ কিছু ক্ষেত্রের আর্থিক সংস্কার নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
আজ রেল মন্ত্রক জানিয়েছে, মঙ্গলবার অর্থাৎ ১২ মে থেকে দিল্লি থেকে হাওড়া, ডিব্রুগড়, আগরতলা, পটনা, বিলাসপুর, রাঁচী, ভুবনেশ্বর, সেকেন্দরাবাদ, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, তিরুঅনন্তপুরম, মডগাঁও, মুম্বই সেন্ট্রাল, আমদাবাদ ও জম্মু-তাওয়াইয়ের মধ্যে ট্রেন চলাচল করবে। সীমিত কয়েকটি স্টেশনে দাঁড়াবে তারা। এসি কামরা থাকবে। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য থ্রি-টিয়ার কামরাগুলির মাঝের আসনটি খোলা হবে না। যাত্রীদের মুখে ঢাকা দেওয়া বা ‘ফেস কভার’ বাধ্যতামূলক। প্রত্যেক যাত্রীর ট্রেনে ওঠার আগে স্ক্রিনিং হবে। কোনও রকম অসুস্থতার লক্ষণ না-থাকলে তবেই ট্রেনে ওঠার ছাড়পত্র দেওয়া হবে।
আবশ্যিক শর্ত
• যাত্রীকে মাস্ক পরতেই হবে
• ট্রেনে ওঠার আগে হবে করোনার স্ক্রিনিং, লক্ষণ না-থাকলে তবেই সফর
• টিকিট কাটা যাবে শুধু আইআরসিটিসি-র সাইটে
• স্টেশনে ঢুকতে লাগবে বৈধ কনফার্মড টিকিট
২৫ মার্চ গোটা দেশে লকডাউন জারির আগেই ২২ মার্চ মধ্যরাত থেকে যাত্রিবাহী ট্রেন বন্ধ করে দিয়েছিল রেল। এত দিন শুধু মালগাড়ি চলেছে। সম্প্রতি পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্যও বিশেষ ট্রেন চালু হয়েছে। রেল মন্ত্রকের বক্তব্য, কোভিড-কেয়ার সেন্টার হিসেবে ২০ হাজার কোচ আলাদা রেখে এবং পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরাতে দৈনিক ৩০০ ট্রেন চালানোর মতো কোচ বরাদ্দ রেখেই যাত্রিবাহী ট্রেন চালানোর কথা ভাবা হচ্ছে। লকডাউনের আগে গোটা দেশে রোজ প্রায় ১২ হাজার ট্রেন চলত।
ট্রেনের চাকার সঙ্গেই অর্থনীতির চাকায় গতি দেওয়ার ব্যাপারে সোমবার মোদীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকে আলোচনা হবে। চলতি সপ্তাহে ‘স্টিমুলাস প্যাকেজ’ ঘোষণা হতে পারে। করোনা পরিস্থিতিতে একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা চিন থেকে তাদের লগ্নি প্রত্যাহারের বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করছে। এই সংস্থাগুলিকে নিজেদের রাজ্যে টানার জন্য সক্রিয় হতে আগের বৈঠকেই রাজ্যগুলিকে বলেছিলেন মোদী। চলতি সপ্তাহে যে-প্যাকেজ ঘোষণা হতে পারে, তাতে আর্থিক সংস্কার, ব্যবসার পরিবেশ সহজ করতে বেশ কিছু ঘোষণার পাশাপাশি ছোট-মাঝারি শিল্পের জন্য নগদ পুঁজির জোগান, ঋণের গ্যারান্টির তহবিলের মতো সুরাহাও থাকতে পারে। রাজ্যগুলিও কেন্দ্রের কাছে আর্থিক সাহায্যের দাবি তুলছে।
প্রথম থেকেই বিরোধীদের অভিযোগ, রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা না করে মোদী সরকার একতরফা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। অনেকটা তার জবাব দিতেই আজ প্রধানমন্ত্রীর দফতর সোমবারের বৈঠকের কথা ঘোষণা করে জানিয়েছে, এই নিয়ে পঞ্চম বার মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভিডিয়ো-বৈঠকে বসছেন মোদী। মুখ্যমন্ত্রীদের অভিযোগ ছিল, রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা না-করেই কেন্দ্র ‘রেড জ়োন’, ‘গ্রিন জ়োন’ ভাগাভাগি করছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের দুরবস্থা নিয়েও কেন্দ্রের দিকে আঙুল উঠছে। সোমবারের বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীরা তা নিয়ে সরব হন কি না, সে-দিকে নজর রয়েছে রাজনৈতিক শিবিরের।
প্রথম দফার লকডাউন শেষের পর থেকেই সরকার ধীরে ধীরে অর্থনীতির ঝাঁপ খুলতে সক্রিয়। ৩ মে দ্বিতীয় দফার লকডাউন শেষে সেই পরিধি বাড়াতে বেশ কিছু ক্ষেত্রে কাজকর্ম শুরু করার ছাড়পত্র দিয়েছিল কেন্দ্র। তৃতীয় দফার লকডাউন শেষে আরও বেশ কিছু ক্ষেত্র খুলে দিতে হবে বলেই সরকারি কর্তারা মনে করছেন। যদিও করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা না-কমে দ্রুত গতিতে বেড়েই চলেছে। ফলে লকডাউন করে আদৌ লাভ হল কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। এই অবস্থায় অর্থ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কর্তারা মনে করছেন, অর্থনীতিকে আর অচল রাখা সম্ভব নয়। সাবধানতা অবলম্বন করেই কাজকর্ম শুরু করে দিতে হবে।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)