সব শ্রমিকদের বাসে ফেরানো সম্ভব নয় বলে জানাল রাজ্যগুলি।—ছবি পিটিআই।
লকডাউনের বাজারে বাস জোগাড় করা অসম্ভব। তা ছাড়া, বাসে পারস্পরিক ব্যবধান বজায় রাখাও সমস্যার। তাই পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরাতে বিশেষ ট্রেন চালানোর জন্য কেন্দ্রের কাছে অনুরোধ জানাল একাধিক রাজ্য। নবান্নেরও বক্তব্য, কিছু রাজ্য থেকে সম্ভব হলেও মহারাষ্ট্র, কেরল, গুজরাত ও দিল্লিতে রাজ্যের লক্ষাধিক শ্রমিক আটকে রয়েছেন। বাসে করে তাঁদের ফেরানো সম্ভব নয়।
বিভিন্ন রাজ্যে আটকে থাকা শ্রমিক, পড়ুয়া, পর্যটক-তীর্থযাত্রীদের গত কাল ঘরে ফেরার অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্র। ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় তাঁদের বাসে করে ফেরানোর দায়িত্ব রাজ্যগুলিকেই নিতে হবে বলে জানিয়েছে তারা। আজ বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যসচিবদের সঙ্গে ক্যাবিনেট সচিবের বৈঠকে কেন্দ্রের নির্দেশিকা রূপায়ণের সমস্যাগুলি তুলে ধরেন বিজেপি-বিরোধী রাজ্যের প্রতিনিধিরা। বলা হয়, লক্ষ লক্ষ লোক বাড়ি ফেরার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন। কিন্তু লকডাউনের বাজারে কয়েক হাজার বাস ও পথে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা কার্যত অসম্ভব। তা ছাড়া, দুই রাজ্যের মধ্যে দূরত্বও অন্যতম প্রধান অন্তরায়। বিরোধী রাজ্যগুলির ওই দাবি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন ক্যাবিনেট সচিব।
বাসে করে ফেরানোর পরিকল্পনা যুক্তিহীন বলে ইতিমধ্যেই নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়েছেন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত। ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন টুইট করে বলেন, ‘আমি রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়ালকে ফোন করে বিশেষ ট্রেন চালানোর অনুরোধ করেছি। যাতে বিভিন্ন রাজ্যে আটকে থাকা পড়ুয়া ও রাজ্যের পাঁচ লক্ষ শ্রমিককে ঘরে ফেরাতে সক্ষম হই।’ তামিলনাড়ু জানিয়েছে, তাদের রাজ্যে ৪ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক রয়েছেন। যাঁদের অধিকাংশ বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসা। তাঁদের বাসে করে ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়। নিমরাজি মহারাষ্ট্র সরকার। তারা কিছু বাস চালাবে বলে ঠিক করেছে। আপত্তি জানিয়েছে শরিক রাজ্য বিহারও। উপমুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা সুশীল মোদী টুইট করে ট্রেনের পক্ষে সওয়াল করেন।
শ্রমিক সংগঠন এআইটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক অমরজিৎ কউরের দাবি, “রাতারাতি পরিযায়ী কর্মীদের বাড়ি ফেরা বন্ধ করে দেওয়া, তাঁদের অসহনীয় পরিবেশে ত্রাণ শিবিরে থাকতে বাধ্য করা থেকে শুরু করে হঠাৎ বাসে করে ফেরানোর পরামর্শ— সবটার মধ্যেই পরিকল্পনার অভাব স্পষ্ট। চাই বিশেষ ননস্টপ ট্রেন!”
কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে ফাঁপরে পড়েছে বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলি। বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশ। তাদের পক্ষে প্রকাশ্যে কেন্দ্রের ওই নীতির বিরোধিতা করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই অন্য রাজ্যের মুখাপেক্ষী হয়েছে যোগী আদিত্যনাথের প্রশাসন। উত্তরপ্রদেশ সরকারের মতে, তাদের রাজ্যের প্রায় দশ লক্ষ শ্রমিক এই মুহূর্তে বিভিন্ন রাজ্যে আটকে আছেন। রাজ্যগুলিকে যোগী সরকার জানিয়েছে, তাদের পক্ষে এত বাসের ব্যবস্থা করা কঠিন। তাই সংশ্লিষ্ট রাজ্য প্রশাসন যেন উত্তরপ্রদেশের শ্রমিকদের বাসে করে রাজ্যের সীমানা পর্যন্ত ছেড়ে দেয়।
এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লা আজ সব রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি লিখে পণ্যবাহী ট্রাকের সুষ্ঠু চলাচলের বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক দেখেছে, বেশ কিছু রাজ্য চলাচলের জন্য আন্তঃরাজ্য পাস জারি করেছে। যা ট্রাক চালকদের কাছ থেকে চাওয়া হচ্ছে। তা যাতে না-চাওয়া হয়, তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে রাজ্য প্রশাসনকে।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)