India-China

উত্তর চান বিরোধীরা, কাল সর্বদল প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক ডাকার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও বিরোধী শিবির স্পষ্ট করে দিয়েছে, ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীকে কড়া প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০২০ ০৫:২৪
Share:

লাদাখে সেনা-মৃত্যু নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দিকে বিরোধীদের একাধিক প্রশ্নের তির। ছবি: পিটিআই।

অটলবিহারী বাজপেয়ী বরাবরই বিদেশনীতির প্রশ্নে সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে এগোতেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সে পথে হাঁটেন না বলেই অভিযোগ। কিন্তু লাদাখে সেনা-মৃত্যু নিয়ে বিরোধীদের প্রশ্নের তির ছুটে আসছে দেখে আজ কৌশল বদলিয়ে ১৯ জুন বিকেলে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকলেন তিনি।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক ডাকার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও বিরোধী শিবির স্পষ্ট করে দিয়েছে, ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীকে কড়া প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে। কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী আজ স্পষ্ট জানান, প্রধানমন্ত্রীকে সামনে এসে বলতে হবে, চিন ভারতের জমি কী ভাবে দখল করল? ২০ জন সেনা কী ভাবে মারা গেলেন? ঘটনাস্থলে এখনকার পরিস্থিতি কী? এখনও কি সেনার অফিসার ও জওয়ানরা নিখোঁজ? কত জন জওয়ান গুরুতর আহত? চিন আর কোথায় কোথায় ভারতের জমি দখল করে রেখেছে? এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় ভারত সরকারের নীতি, ভাবনা ও সমাধানসূত্র কী?

মোদী জমানায় এখনও পর্যন্ত মাত্র তিন বার প্রধানমন্ত্রী সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছেন। প্রথম বার ২০১৬-র সেপ্টেম্বরে, সার্জিকাল স্ট্রাইক সম্পর্কে বিরোধী দলের নেতাদের অবহিত করতে। কিন্তু সেই পদক্ষেপ করার আগে মোদী সরকার বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনায় যায়নি। ২০১৯-এর ফেব্রুয়ারিতে পুলওয়ামায় সিআরপি কনভয়ে জঙ্গি হামলার পরে প্রধানমন্ত্রী সর্বদলীয় বৈঠক ডাকেন। তার পরেই বালাকোটে বায়ুসেনা অভিযান চালায়। সম্প্রতি করোনা পরিস্থিতি নিয়েও সব দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে মোদী বৈঠক করেছেন।

Advertisement

আরও পড়ুন: লাদাখে সেনা বাড়াচ্ছে দুই দেশই || আমরা জবাব দিতে তৈরি: মোদী

আরও পড়ুন: সংযমে ইতি? নীতি বদলাচ্ছে দিল্লি, সীমান্ত সঙ্ঘাতে ‘ফ্রি হ্যান্ড’ সেনাকে

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, চিনকে যে পাকিস্তানের মতো রক্তচক্ষু দেখানো যাবে না, তা মোদী সরকার ভালই বুঝতে পারছে। আবার লাদাখের ঘটনার পরে হাত গুটিয়ে বসে থাকলেও মোদীর ‘৫৬ ইঞ্চি ছাতির’ মজবুত ভাবমূর্তিতে ধাক্কা লাগবে। আজ তাই বাধ্য হয়েই মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে করোনা-বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীকে লাদাখের ঘটনা নিয়ে মুখ খুলতে হয়েছে। চিনের নাম না-করেও ‘যথোচিত জবাব’-এর হুঁশিয়ারি দিতে হয়েছে। মোদী যেমন আজ মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে চিনের নাম করেননি, তেমনই প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহও জওয়ানদের মৃত্যুতে দুঃখপ্রকাশ করে বিবৃতিতে চিনের নাম করেননি। রাহুল গাঁধীর প্রশ্ন, ‘‘এতই দুঃখজনক হলে চিনের নাম না করে সেনাকে অপমান করছেন কেন? সহানুভূতি জানাতে দু’দিন লাগল? কেন এর মধ্যেও জনসভা করছেন?’’
আজ সকালে রাহুল এ প্রশ্নও তোলেন, কেন প্রধানমন্ত্রী লুকিয়ে রয়েছেন? ইউপিএ জমানায় মুম্বই হামলার পরে, মোদী নিজে ঠিক এ ভাবেই মনমোহন সিংহকে ‘দুর্বল প্রধানমন্ত্রী’ বলে তাঁর নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতেন। এখন মোদীর বিরুদ্ধে সেই প্রশ্ন ওঠায় আজ তাঁকে মুখ খুলতে হয়েছে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, চিন ও পাকিস্তান এক নয় বুঝেই তিনি চিনের নাম করেননি এবং কোনও রকম পদক্ষেপের আগে সব দলের সঙ্গে কথা বলে এগোনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যদিও চিন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর জাতির উদ্দেশ্যে কোনও বক্তৃতার পরিকল্পনা এখনই নেই বলে সূত্রের খবর। ২১ জুন সকাল সাড়ে ৬টায় তিনি জাতির উদ্দেশে বক্তৃতা দেবেন। তা অবশ্য আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উপলক্ষে।

সিপিএম, সিপিআই ও অন্য দলেরও দাবি, সর্বদলীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বাস্তব পরিস্থিতি খোলসা করে জানান। সনিয়া বলেন, ‘‘সবাই জানি, দেড় মাস ধরে চিনা সেনা লাদাখে ভারতীয় এলাকায় অনুপ্রবেশ করেছে। এই ঘটনায় দেশে যখন আক্রোশ তৈরি হয়েছে, তখন প্রধানমন্ত্রীকে সত্য বলতে হবে।’’ সিপিএম কালই এই দাবি তুলেছিল। সিপিআই আজ বলেছে, চিনের সেনাকে লাদাখে পুরনো অবস্থানে ফিরে যেতে হবে।

সংযত থাকার নীতি নিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্বও। বাজপেয়ী জমানার বিদেশমন্ত্রী, তথা প্রাক্তন বিজেপি নেতা যশবন্ত সিন্হার কটাক্ষ, ‘‘তিব্বতে সার্জিকাল বিমান হানা হবে না? আমাদের তো ‘ঘর মে ঘুস কর মারেঙ্গে’ নীতি বলে জানতাম! না কি সে সব শুধুই পাকিস্তানের জন্য?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement