ছবি: এএফপি।
চিনের উদ্দেশে বার্তা দিয়ে গত কালই বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছিল, সীমান্তে শান্তি ও সুস্থিতি বজায় রাখতে হলে গালওয়ান উপত্যকা থেকে দ্রুত সেনা সরাতে হবে। পাশাপাশি সীমান্তেও চিনের বিপুল সেনার সংখ্যা কমাতে হবে। আজ ভারত এবং চিনের সীমান্ত সংক্রান্ত কূটনৈতিক মেকানিজম ডবলিউএমসিসি (ওয়ার্কিং মেকানিজম ফর কনসালটেশন অ্যান্ড কোঅর্ডিনেশন)-এর বৈঠকে এই ব্যাপারটিতেই জোর দিল ভারত। পাশাপাশি পূর্ব লাদাখের সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে আজ বৈঠক করলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়ত-সহ তিন সেনা প্রধান।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-র ফোনে কথাবার্তা হয় জুলাই মাসের ৫ তারিখ। সে দিন থেকেই গালওয়ান উপত্যকায় একটি বাফার জোন তৈরি করে দু দেশের সেনা পিছু হটতে শুরু করে। কিন্তু নিজের ভূখণ্ডেই ভারতীয় সেনাকে কেন পিছু হটতে হবে, সেই প্রশ্নের সদুত্তর আজকের বৈঠকের পরেও পাওয়া যায়নি বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা। আজ এই বৈঠকে ভারতের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন বিদেশ মন্ত্রকের পূর্ব এশিয়া বিভাগের যুগ্মসচিব নবীন শ্রীবাস্তব এবং চিনের প্রতিনিধি দলের অগ্রভাগে ছিলেন সে দেশের বিদেশ মন্ত্রকের সীমান্ত এবং সমুদ্র বিষয়ক বিভাগের ডিজি উই জিয়াংঝাও।
বৈঠকের পর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “৫ জুলাই দু’দেশের বিশেষ প্রতিনিধির মধ্যে এবং ১৭ জুন বিদেশমন্ত্রীর মধ্যে ফোনে কথোপকথনের মাধ্যমে যে চুক্তিতে পৌঁছনো গিয়েছে, আজকের বৈঠকে সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়েছে। দু-পক্ষই ফের জানিয়েছে যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) থেকে পুরোপুরি ভাবে সেনা সরানো এবং ভারত চিন সীমান্ত এলাকা থেকে সেনার পিছু হটার বিষয়টিকে নিশ্চিত করা হবে। তাঁরা এ ব্যাপারেও সহমত হন যে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সামগ্রিক উন্নতির জন্য সীমান্তবর্তী এলাকায় শান্তি বজায় রাখা আবশ্যক।”
আরও পড়ুন: ‘সংঘর্ষে’ নিহত উত্তরপ্রদেশের বাহুবলী বিকাশ, হুবহু মিলে গেল ‘ভবিষ্যদ্বাণী’
আরও পড়ুন: কোভিড-১৯-এ মধ্যবয়সিদের মৃত্যুহারে উদ্বেগ
বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ভারত চিন সীমান্তের পশ্চিম সেক্টরের এলএসি অঞ্চল বরাবর সেনার পিছু হটার যে প্রক্রিয়া চলছে, তা আজকের আলোচনায় খতিয়ে দেখা হয়েছে। সিনিয়র কমান্ডাররা যে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন তাকে একান্ত ভাবে বাস্তবায়িত করা যে খুব জরুরি সে বিষয়েও সহমত হয়েছে দু-পক্ষ। কূটনৈতিক এবং সামরিক স্তরে যে আলোচনা চলছে তাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে স্থির হয়েছে। সেনার সম্পূর্ণ সরে যাওয়ার ধাপগুলি যাতে মসৃণ হয়, তা নিশ্চিত করতে খুব শীঘ্রই ফের বৈঠকে বসবে এই মেকানিজমটি।”
গত কাল গালওয়ান, গোগরা ও হটস্প্রিং এলাকায় শেষ হয়েছে দু’দেশের সেনা প্রত্যাহারের প্রথম পর্ব। আজ সেনার তরফ থেকে গোটা বিষয়টি বিস্তারিত ভাবে জানানো হয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে। সেনা সূত্রের খবর, লাদাখ সীমান্ত-সহ অরুণাচলপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড ও সিকিমে সেনাবাহিনী কী ভাবে যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি নিয়ে রয়েছে, তা-ও রাজনাথকে সবিস্তার জানানো হয়।
সেনা সূত্রে জানানো হয়েছে, প্রথম পর্বের ওই পিছু হটার ভিত্তিতে আগামী সপ্তাহে ফের দু’দেশের সেনার কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠক হওয়ার কথা। বৈঠকে লাদাখ সীমান্তে উভয় পক্ষের সেনা সংখ্যা কমানোর বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সঙ্গেই প্যাংগং লেকের উত্তরে ফিঙ্গার পাঁচ থেকে আট পর্যন্ত চিন সেনা যে ঘাঁটি বানিয়ে বসে রয়েছে, তা সরিয়ে নেওয়ার দাবিতে সরব হতে চলেছে নয়াদিল্লি।
এ দিনই কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী ভারতের জমিতে চিনা অনুপ্রবেশের বিষয়টি নিরপেক্ষ সংস্থার মাধ্যমে খতিয়ে দেখার দাবি তুলেছেন।