—ফাইল চিত্র।
ভারত-চিন সীমান্তের গোগরা এলাকা থেকে সেনা পিছিয়ে নিল দু’দেশই। গত ৩১ জুলাই দু’দেশের মধ্যে দ্বাদশ বৈঠকে হওয়া আলোচনার ভিত্তিতে গত বুধবার থেকে লাদাখের গোগরা সীমান্তে সেনা পিছোতে শুরু করে দু’দেশ। গত কাল সেই সেনা পিছনোর প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে বলে আজ জানিয়েছে কেন্দ্র। গোগরা থেকে সেনা সরলেও এখনও প্যাংগং লেকের উত্তর প্রান্তে ফিঙ্গার ফোর থেকে ফিঙ্গার আটে সেনা টহল বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে ভারতীয় সেনা। বিরোধীদের অভিযোগ, নরেন্দ্র মোদী সরকার আলোচনার মাধ্যমে অচলাবস্থা কাটার দাবি করলেও ভুললে চলবে না, এখনও প্রায় হাজার কিলোমিটার জমি চিনের দখলে রয়েছে। অতীতে সেখানে ভারতীয় সেনা টহল দিতে সক্ষম হলেও বর্তমানে সেই এলাকার দাবি ছেড়ে পিছিয়ে আসতে হয়েছে নয়াদিল্লিকে।
আজ ভারতীয় সেনা বিবৃতিতে জানিয়েছে, গোগরা সীমান্তে গত ১৫ মাস একে অপরের চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে থাকার পরে গত বুধবার থেকে দু’দেশই ওই বিতর্কিত এলাকা থেকে ধাপে ধাপে সেনাকে তাদের স্থায়ী ব্যারাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া শুরু করেছিল। বৃহস্পতিবার সেনার ওই পশ্চাদপসরণ প্রক্রিয়া শেষ হয়। গোগরা সীমান্তের উভয় দু’দেশের অস্থায়ী কাঠামো ও সেনা ছাউনি ভেঙে ফেলা হয়েছে। কেন্দ্রের দাবি, সংঘর্ষের আগে গোগরা এলাকায় সীমান্তের যে চিত্র ছিল, তা আবার ফিরে এসেছে। সেনা সূত্রের মতে, ভবিষ্যতে গোগরা এলাকার আন্তর্জাতিক সীমান্ত দু’দেশের সেনা মেনে চলতে বাধ্য থাকবে এবং সম্মান করবে। কোনও দেশ একক ভাবে সেই স্থিতাবস্থা ভাঙতে পারবে না। সূত্রের মতে, গত ৩১ জুলাই মলডো-য় দু’দেশের মধ্যে যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তার ভিত্তিতেই ওই ঐকমত্যে পৌঁছেছে উভয় শিবির।
গত বছর চিনা সেনার আগ্রাসনে অচলাবস্থা তৈরি হয় লাদাখের গালওয়ান, প্যাংগং লেকের উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্ত, গোগরা, ডেপস্যাং, হটস্প্রিং— সব মিলিয়ে মোট ছ’টি এলাকায়। গত প্রায় দেড় বছরের বেশি সময় ধরে অচলাবস্থার পরে জট খুলতে শুরু করে। সেনা সূত্রের মতে, গোগরা থেকে এ পর্বে গত ফেব্রুয়ারিতে প্রথম জট কাটে। গালওয়ান, প্যাংগং লেকের উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তে ‘ফ্ল্যাশ পয়েন্ট’-গুলিতে বছরের শুরুতে প্রথম অচলাবস্থা কাটে। সেনা সূত্রের দাবি, মোট চারটি ফ্ল্যাশ পয়েন্ট নিয়ে সমস্যা মিটে যাওয়ায় এর পরে কেবল ডেপস্যাং ও হট স্প্রিং এলাকার সমাধান বাকি রইল।
দু’পক্ষের সেনা সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তকে বিরোধীরা স্বাগত জানালেও প্রশ্ন উঠেছে, যে ভাবে প্যাংগং এলাকায় ভারতকে স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে চিনকে এলাকা ছেড়ে দিতে হয়েছিল, এ ক্ষেত্রেও তা হয়নি তো! অতীতে প্যাংগং লেকের উত্তর প্রান্তে থাকা ফিঙ্গার আট পর্যন্ত টহল দিতে পারত ভারত। কিন্তু স্থিতাবস্থার শর্তে রাজি হতে ফিঙ্গার পাঁচ থেকে আট পর্যন্ত এলাকায় টহলের অধিকার হারায় ভারত। বর্তমানে ভারতের সীমান্ত ফিঙ্গার ফোরেই কার্যত শেষ হয়ে গিয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, চিনের দাবি মেনে নেওয়ায় বিস্তীর্ণ ভূ-ভাগ হাতছাড়া হয়েছে ভারতের। এ ক্ষেত্রে সে রকম শর্তের ভিত্তিতে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়েছে কি না, তা প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়ে জানানোর জন্য কেন্দ্রের কাছে দাবি জানিয়েছেন বিরোধীরা।