ক্য়ামেরার সামনেই গুলি করে খুন সমাজবাদী পার্টির নেতা ও তাঁর ছেলেকে। ছবি: ভিডিয়ো গ্র্যাব।
জমির উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ ঘিরে বিবাদের জেরে প্রকাশ্যে গুলি করে খুন করা হল সমাজবাদী পার্টির নেতা ও তাঁর ছেলেকে। তাতে বাধা দেওয়া তো দূর, বরং ‘গুলি চালা, মেরে ফেল’ বলে দুষ্কৃতীদের উৎসাহ দিতে দেখা গেল একদল মানুষকে। আর এ সব কিছুই ঘটল ক্যামেরার সামনে। সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে যা ইতিমধ্যেই সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। গোটা ঘটনায় ফের একবার প্রশ্নের মুখে উত্তরপ্রদেশের আইন শৃঙ্খলা।
রবিবার সকালে রাজধানী লখনউ থেকে ৩৭৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সম্ভল জেলার শামসোই গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গিয়েছে। ১০০ দিনের কাজের আওতায় সেখানে কৃষি জমির উপর দিয়ে যাওয়া একটি রাস্তা মাটি ফেলে চওড়া করা হচ্ছিল। কাজের তদারকি করছিলেন সমাজবাদী পার্টির স্থানীয় নেতা ছোটেলাল দিবাকর ও তাঁর ছেলে সুনীলকুমার।
সেইসময় একদল স্থানীয় লোকের সঙ্গে বচসা বাধে তাঁদের। কথা কাটাকাটি চলাকালীন রাইফেল নিয়ে তাঁদের দিকে তেড়ে আসেন এক ব্যক্তি। জানিয়ে দেন, বাকিদের জমির উপর দিয়ে রাস্তা এগোলেও, তাঁদের জমির উপর মাটি ফেলা যাবে না। জবাবে ছোটেলাল জানান, সরকারি নির্দেশ অনুযায়ীই কাজ চলছে। রাস্তা নির্মাণের কাজ বন্ধ করা যাবে না। তাই নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বচসা চরমে ওঠে। রাইফেল উঁচিয়ে তাঁদের দিকে তেড়ে যান দুই স্থানীয় বাসিন্দা।
এই ভিডিয়োই সামনে এসেছে।
আরও পড়ুন: মেডিক্যাল কলেজের মধ্যেই চোর সন্দেহে পিটিয়ে খুন
সেইসময় পাশ থেকে ‘গুলি চালা, মেরে ফেল’ বলে তাঁদের উৎসাহ দিতে থাকেন কয়েক জন। তাতেই আরও আগ্রাসী হয়ে ওঠেন ওই দু’জন। ছোটেলাল ও তাঁর ছেলেকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে দেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ২ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের যে ভিডিয়ো সামনে এসেছে, তাতে সাদা ও গোলাপী রঙের জামা পরিহিত দুই ব্যক্তিকে রাইফেল থেকে উঁচিয়ে তেড়ে যেতে দেখা গিয়েছে। গুলি লাগা মাত্র রাস্তার পাশের জমিতে লুটিয়ে পড়তে দেখা গিয়েছে এক জনকে। তা দেখে চিৎকার চেঁচামেচি জুড়ে দেন আশেপাশের লোকজন। ঘটনাস্থল থেকে ছুটে পালিয়ে যেতে থাকেন সকলে।
স্থানীয় পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গুলি লাগার পর ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ছোটেলাল ও তাঁর ছেলে সুনীলকুমারের। ছোটেলালের স্ত্রী শামসোইয়ের গ্রাম প্রধান। অভিযুক্তদের মধ্যে এক জন এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি বলে জানা গিয়েছে। ঘটনার পর থেকেই ফেরার তাঁরা। এখনও পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। তবে বেশ কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলে জানিয়েছেন সম্ভলের সিনিয়র পুলিশ অফিসার যমুনা প্রসাদ।
আরও পড়ুন: ১৩০ কিমি গতিতে কলকাতাকে তছনছ করতে পারে আমপান, বাড়িতে থাকার পরামর্শ
এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন সমাজবাদী পার্টির প্রাক্তন সাংসদ ধর্মেন্দ্র যাদব। তিনি বলেন, ‘‘ছোটেলাল পরিশ্রমী নেতা ছিলেন। ২০১৭-য় চন্দোসী বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে দাঁড়ান। কিন্তু জোটসঙ্গী কংগ্রেসের কাছে পরে আসনটি চলে যায়।’’ একই সঙ্গে গোটা ঘটনায় নাম না করে বিজেপিকে নিশানা করেন তিনি। ধর্মেন্দ্র যাদবের অভিযোগ, পুলিশ অপরাধীদের নিরাপত্তা দিচ্ছে। উত্তরপ্রদেশে বিরোধী দলগুলি বিশেষ করে সমাজবাদী পার্টির নেতাদেরই বেছে বেছে খুন করা হচ্ছে। তবে বিজেপির তরফে এ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।