প্রতীকী ছবি
আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে ভারতে করোনা আক্রান্ত ‘অ্যাক্টিভ’ (মোট সংক্রমিত রোগী থেকে সুস্থ ও মৃত রোগীর সংখ্যা বাদ দিলে যা থাকে) কেসের সংখ্যা পৌঁছতে পারে লাখ তিনেকে। কিন্তু এ দেশে সংক্রমণ কোথায় গিয়ে থামবে, সে সম্পর্কে কোনও আভাস দিতে পারছেন না বিশেষজ্ঞেরা। ফলে ‘আনলক ফেজ় ওয়ান’-এর পরিবর্তে ফের লকডাউন শুরু জরুরি কি না, তা নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ-চিকিৎসকদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। এমনকি, ফের লকডাউন শুরু হতে চলেছে বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টও ঘুরছে। যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের প্রেস ইনফরমেশন বুরো জানাচ্ছে, লকডাউন সংক্রান্ত এই সব পোস্ট বা প্রচারের কোনও ভিত্তি নেই।
অথচ গত তিন দিনের (১১-১৩ জুনের) হিসেব অনুযায়ী, মোট সংক্রমিত রোগীর নিরিখে চতুর্থ স্থানে থাকলেও দিনে গড়ে সংক্রমিত রোগীর নিরিখে ব্রাজিল (দিনে গড়ে ২১ হাজার ১০৮ জন) এবং আমেরিকার (দিনে গড়ে ১৪ হাজার ২০ জন) পরেই রয়েছে ভারত (দিনে গড়ে ৭ হাজার ৪৭১ জন)।
যার ভিত্তিতে কানপুরের ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি’-র ‘ম্যাথমেটিক্স অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিক্স’-এর অধ্যাপক মলয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে সেখানে ফের লকডাউনের পাশাপাশি কোন এলাকা থেকে সংক্রমণ বেশি ছড়াচ্ছে, তার উপরে নজরদারির প্রয়োজন রয়েছে। কারণ সেই এলাকাগুলিকে চিহ্নিত করে সেখান থেকে মানুষের অবাধ যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সংক্রমণ রোধ করা মুশকিল। মলয়বাবুর কথায়, ‘‘নামমাত্র লকডাউনে কোনও সুরাহা হবে না। সংক্রমণের হার কমাতে গেলে আক্ষরিক অর্থে সব নিয়ম মেনেই লকডাউন করতে হবে। ভারতের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে পরিস্থিতি এক বার হাতের বাইরে চলে গেলে তা নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব হয়ে যাবে।’’ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক তথা ম্যাথমেটিক্যাল-বায়োলজি বিশেষজ্ঞ প্রীতিকুমার রায়ের বক্তব্য, ‘‘ফের সম্পূর্ণ লকডাউন ছাড়া অন্য কোনও পথ নেই। প্রয়োজনে কার্ফু জারি করতে হবে। না হলে এই সংক্রমণ কোথায় গিয়ে থামবে, তা আমরা কেউই জানি না!” গবেষকদের মতে, সরকারি স্তরে সংক্রমণের যে সংখ্যাটা জানা যাচ্ছে, তা প্রকৃত নয়। কারণ, যত সংখ্যক পরীক্ষা হওয়ার দরকার ছিল, তা হয়নি। তাই সংক্রমণের পূর্ণাঙ্গ চিত্রও পাওয়া যাচ্ছে না।
তবে বর্তমান সংক্রমণের হারের নিরিখে আগামী দু’সপ্তাহে তা কী রকম হতে পারে তার একটি আভাস দিয়েছেন চেন্নাইয়ের ‘দ্য ইনস্টিটিউট অব ম্যাথমেটিক্যাল সায়েন্সেস’-এর অধ্যাপক তথা বেঙ্গালুরুর ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড স্টাডিজ’-এর ফ্যাকাল্টি শীতাভ্র সিংহ। তাঁর কথায়, ‘‘লোকজনের এক জায়গা থেকে অন্যত্র যাতায়াত (পপুলেশন মুভমেন্ট), এক জনের থেকে অন্যের দেহে প্যাথোজেনের সংক্রমণ, মাস্ক পরা, দূরত্ব-বিধি মানায় অনীহা-সহ একাধিক বিষয়ের উপরে সংক্রমণের হার নির্ভর করে। বর্তমান হারে সংক্রমণ ছড়াতে থাকলে আগামী দু’সপ্তাহে করোনার অ্যাক্টিভ কেসের সংখ্যা ১ লক্ষ ৮৪ হাজার থেকে ২ লক্ষ ৩৬ হাজার হতে পারে। তবে নিয়মে শিথিলতা চলতে থাকলে আগামী ১৫ দিনে অ্যাক্টিভ কেসের সংখ্যা ২ লক্ষ ৯৬ হাজার বা তিন লক্ষও হতে পারে।’’
‘পপুলেশন অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা’-র সদস্য তথা ‘পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়া’-র গবেষক-বিজ্ঞানী বিজয়কুমার মিশ্রের কথায়, ‘‘আমেরিকা নিজেদের যাবতীয় তথ্য গবেষকদের দিচ্ছে। কারণ, সেখানকার সরকার বুঝতে পেরেছে ঠিক তথ্য ছাড়া সংক্রমণের গতিপ্রকৃতি বোঝা সম্ভব নয়। তাই নির্ভুল তথ্য পাওয়াটা জরুরি। তা না হলে এ দেশে সংক্রমণ কোথায় থামবে বোঝা অসম্ভব।” ‘দ্য ইন্ডিয়ান ম্যাথমেটিক্যাল সোসাইটি’-র প্রেসিডেন্ট তথা বেঙ্গালুরুর ‘ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট’ (আইএসআই)-এর ‘স্ট্যাট-ম্যাথ’ ইউনিটের অধ্যাপক বি সুরির কথায়, ‘‘বর্তমানে সংক্রমিত রোগীর যে সংখ্যাটা পাচ্ছি, ফলিত স্তরে তার থেকে সংখ্যাটা অনেকটাই বেশি হওয়ার আশঙ্কা। তাই অসম্পূর্ণ তথ্য থেকে দীর্ঘকালীন ভিত্তিতে পূর্বাভাস করা কঠিন।’’
আরও পড়ুন: ‘কোনওকিছুই অন্ধকারে রাখব না’, লাদাখ নিয়ে বিরোধীদের জবাব রাজনাথের