Modi on Manipur

বিরোধীদের লাগাতার আক্রমণের মধ্যেই মণিপুর নিয়ে অবশেষে রাজ্যসভায় মুখ খুললেন প্রধানমন্ত্রী

কেন্দ্রে নতুন সরকার গঠনের পর বুধবার রাজ্যসভায় প্রথম ভাষণ ছিল মোদীর। সেখানে বিরোধীদের তোলা নানা প্রশ্নের জবাব দেন মোদী। বিরোধীরা অবশ্য তার মধ্যেই রাজ্যসভা থেকে ওয়াক আউট করেন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪ ১৮:৫৩
Share:

বুধবার রাজ্যসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

এক বছর হল মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘হিরণ্ময়’ নীরবতার সমালোচনা করে আসছেন বিরোধীরা। লোকসভার চলতি অধিবেশনেও বিরোধীরা মণিপুর নিয়ে মোদীর ‘নীরবতা’র সমালোচনা করেছেন। মঙ্গলবার লোকসভায় মোদীর ভাষণের সময়েও বিরোধীপক্ষের সাংসদের অনবরত টেবিল চাপড়ে ‘মণিপুর-মণিপুর’ বলে চিৎকার করে গিয়েছেন। তার আগে সোমবার প্রায় ফাঁকা লোকসভায় মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেন মণিপুরের কংগ্রেস সাংসদ এ বিমল আকোইজাম।

Advertisement

অবশেষে মণিপুর নিয়ে মৌনব্রত ভাঙলেন মোদী। বুধবার রাজ্যসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘মণিপুর নিয়ে যাঁরা আগুনে ঘৃতাহুতি দিচ্ছেন, তাঁরা জেনে রাখুন, মণিপুরই একদিন তাঁদের প্রত্যাখ্যান করবে।’’ কারণ ব্যাখ্যা করে মোদী বলেন, ‘‘কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার মিলে মণিপুরের পরিস্থিতি শোধরানোর নিরন্তর চেষ্টা চালাচ্ছে। আর সেই চেষ্টায় ধীরে ধীরে সাড়াও দিচ্ছে মণিপুর। স্বাভাবিকত্ব ফিরছে সেখানে।’’

কেন্দ্রে নতুন সরকার গঠনের পর বুধবার রাজ্যসভায় প্রথম ভাষণ ছিল মোদীর। সেখানে বিরোধীদের মণিপুর নিয়ে তোলা প্রশ্নের জবাব দেন মোদী। যদিও মোদীর কথার মাঝেই রাজ্যসভায় ‘ঝুট-ঝুট’ (মিথ্যা মিথ্যা) রব ওঠে। রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গেকে বলতে দেওয়ার দাবিতে সরব হন বিরোধীরা। সেই দাবি না মানায় রাজ্যসভা থেকে ওয়াক আউটও করেন তাঁরা। ‘বিরোধীশূন্য’ রাজ্যসভাতেই মণিপুর নিয়ে বিরোধীদের প্রশ্নের ‘জবাব’ দেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে বিরোধীদের কটাক্ষ করে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘এঁরা যে প্রশ্ন করেছেন, তার জবাব শোনার মত ধৈর্যও নেই এঁদের।’’ যদিও বুধবার মণিপুর নিয়ে মোদীর বক্তৃতার পরে বিরোধীরা পাল্টা বলেছেন, মণিপুর নিয়ে যে অবশেষে মুখ খুলতে হল মোদীকে, তা আসলে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র সাফল্য।

Advertisement

মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই ‘জবাবী ভাষণে’র পরে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা সর্বভারতীয় মুখপাত্র সাকেত গোখলে একটি বিবৃতি দিয়ে বলেন, ‘‘একবছর পরে অবশেষে মোদী মণিপুর নিয়ে কথা বললেন। যদিও যা বলেছেন, তার সবটাই অসত্যভাষণ। কিন্তু সেটা তো ওঁর স্বভাব!’’

সাকেত আরও বলেছেন, ‘‘গত বছর শুধু এই মণিপুর নিয়ে মোদীর বক্তব্যের দাবি তোলার ‘অপরাধে’ সাংসদদের সাসপেন্ড হতে হয়েছিল। কিন্তু এ বছর সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানো মোদী আর তাঁর ‘ইগো’র জোর খাটাতে পারেননি।’’

বুধবার মোদী তাঁর ভাষণে বিরোধীদের বলেছিলেন, ‘‘গত ১০ বছর যা যা করেছি, তা স্রেফ ‘অ্যাপেটাইজ়ার’ (অর্থাৎ ক্ষুধাবর্ধক খাবার বা পানীয়), মেনকোর্স (মূল খাবার) এখনও বাকি।’’ সাকেত মোদীর সেই কথাই টেনে এনে বলেছেন, ‘‘সংসদের প্রথম অধিবেশনেই মণিপুর নিয়ে মুখ খুলতে বাধ্য হলেন মোদী। গত ২৪ ঘণ্টায় ‘ইন্ডিয়া’র এটাই কৃতিত্ব। তবে এ তো শুধু অ্যাপেটাইজার প্রধানমন্ত্রী মোদী! আপনার জন্য মেন কোর্স এখনও অপেক্ষা করে আছে।’’

বুধবারের ভাষণে মোদী বলেন, ‘‘মণিপুরে স্বাভাবিকত্ব ফেরাতে সরকার ক্রমাগত কাজ করে চলেছে। মণিপুরে এ পর্যন্ত ১১ হাজার এফআইআর দায়ের হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ৫০০ জনকে। ধীরে ধীরে হিংসাত্মক ঘটনা কমছে মণিপুরে। স্কুল-কলেজ খুলছে। এমনকি, কিছু দিন আগে যখন দেশের সমস্ত স্কুল-কলেজে পরীক্ষা হয়েছে, তখন পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে মণিপুরেও।’’

এর পরেই মণিপুর নিয়ে বিরোধীদের সমালোচনার নিন্দা করে মোদী বলেন, ‘‘মণিপুরে যা হচ্ছে, তার শিকড় অনেক গভীরে। কংগ্রেসের মনে রাখা উচিত, মণিপুরে ১০ বার রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করতে হয়েছিল। কিছু তো কারণ ছিল, যার জন্য এমন করতে হয়েছিল। অথচ কংগ্রেসই এখন ওই বিষয়ে রাজনীতি করতে ব্যস্ত।’’ কংগ্রেসের শাসনকালেও যে মণিপুরে ‘অশান্তি’ হয়েছিল, তা মনে করিয়ে দিয়ে মোদী বলেন, ‘‘১৯৯৩ সালে মণিপুরে এই একই জিনিস হয়েছিল। পাঁচ বছর ধরে চলেছিল সেই অশান্তি। তাই আমি বলব, এখন মণিপুরের যা পরিস্থিতি, তার সমাধান করতে যদি কেউ আমাদের পাশে দাঁড়াতে চান, আমি তাঁদের সাদরে অভ্যর্থনা জানাব। কিন্তু যাঁরা মণিপুরের আগুনে ঘি ঢালার চেষ্টা করছেন, তাঁদের সতর্ক করব। কারণ, এটা করলে মণিপুরই একদিন ওঁদের প্রত্যাখ্যান করবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement