ঠাকুমা ইন্দিরার সিদ্ধান্ত নিয়ে মুখ খুললেন রাহুল। —ফাইল চিত্র।
ইন্দিরা গাঁধীর জরুরি অবস্থা ঘোষণার সিদ্ধান্ত আজও তাড়িয়ে বেড়ায় কংগ্রেসকে। তাই প্রসঙ্গ উঠলেই কৌশলে তা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন দলের নেতারা। কিন্তু রাহুল গাঁধী নিজেই এ বার তার ব্যাতিক্রম ঘটালেন। জানিয়ে দিলেন, জরুরি অবস্থা ঘোষণা তাঁর ঠাকুমার ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।
আমেরিকার কর্নেল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক তথা অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসুর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনায় বসেন তিনি। সেখানেই জরুরি অবস্থা থেকে শুরু করে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে অকপট ছিলেন রাহুল। সেখানেই ইন্দিরার শাসনকালে ১৯৭৫ থেকে ’৭৭ পর্যন্ত টানা ২১ মাস জরুরি অবস্থার প্রসঙ্গ উঠে আসে।
সে নিয়ে মতামত চাইলে রাহুল বলেন, “আমার মনে হয় ওটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। ঠাকুমা নিজেও তা মেনেছিলেন। কিন্তু কংগ্রেস কখনও দেশের সাংবিধানিক পরিকাঠামোকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেনি। সত্যি কথা বলতে কী, কংগ্রেসের সেই ক্ষমতাও নেই। আমাদের দলীয় পরিকাঠামোই তাতে অনুমোদন দেয় না।’’
জরুরি অবস্থার সময় গেরুয়া শিবিরের বহু নেতাকে জেলবন্দি করা হয়েছিল। বর্তমানে বিজেপি যখন ক্ষমতায়, তা নিয়ে লাগাতার আক্রমণের মুখে পড়েছে কংগ্রেস। বিশেষ করে বাক্স্বাধীনতা, বিরোধিতার অধিকার এবং সংবাদমাধ্যমের উপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে নিজেদেরই আক্রমণে জর্জরিত হয়েছে তাদের। গত বছর জুনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জরুরি অবস্থার প্রসঙ্গ টেনে গাঁধী পরিবার এবং কংগ্রেসকে তুলোধনা করেন। একটি পরিবারের ক্ষমতার লোভ রাতারাতি গোটা দেশকে জেলখানায় পরিণত করেছিল বলে তোপ দেগেছিলেন তিনি।
কিন্তু রাহুলের দাবি, জরুরি অবস্থা এবং বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যে একটি মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। বর্তমানে রাষ্ট্রীয় স্বয়ম সেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)-এর লোকজন এনে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিকে ভরিয়ে তোলা হচ্ছে। নির্বাচনে বিজেপি-কে যদি পরাজিতও করে কংগ্রেস, প্রাতিষ্ঠানিক পরিকাঠামো থেকে গেরুয়া শিবিরের লোকজনকে ছেঁটে ফেলার উপায় নেই। রাহুল বলেন, ‘‘প্রাতিষ্ঠানিক ভারসাম্যই আধুনিক গণতন্ত্রের পরিচয়। প্রতিষ্ঠানগুলি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র ভাবে কাজ করে। বর্তমানে আরএসএস সেই স্বাধীনতার উপরই আঘাত হানছে। সুকৌশলে, নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসারে গোটা বিষয়টি সম্পাদন করা হচ্ছে। গণতন্ত্রের অবক্ষয় হচ্ছে বলব না, ভারতে গণতন্ত্রের শ্বাসরোধ করা হচ্ছে।’’ এ নিয়ে মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কমলনাথের সঙ্গে নিজের কথোপকথনের প্রসঙ্গ টেনে রাহুল জানান, সরকার পড়ে যাওয়ার আগে কমলনাথ জানিয়েছিলেন, আরএসএস অনুগত আমলারা কেউ তাঁর কথা শুনছেন না। এখানেই জরুরি অবস্থার সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতির পার্থক্য বোঝা যায়।
বিগত গত কয়েক বছরে কংগ্রেসের অন্দরে যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্নের মুখে পড়েন রাহুল। বিশেষ করে বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলের প্রবীণ নেতা আনন্দ শর্মার সঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর টুইট যুদ্ধের পর সেই কাজিয়া এখন প্রকাশ্যে। সভাপতি নির্বাচনের দাবি নিয়ে যে ২৩ জন নেতা কংগ্রেস নেতা সনিয়াকে চিঠি দিয়েছিলেন, তার মধ্যে আনন্দ অন্যতম। সেই কারণেই ‘সনিয়া-অনুগত’ অধীরের সঙ্গে তাঁর বিরোধ চরমে উঠেছে।
কিন্তু সভাপতি নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করলে রাহুল বলেন, ‘‘আমি প্রথম ব্যক্তি যে মনে করে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দলে নির্বাচন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। তবে একটা ব্যাপার খুব আশ্চর্য, অন্য কোনও দলকে এই প্রশ্ন করা হয় না। বিজেপি, বিএসপি এবং সমাজবাদী পার্টির মতো দলগুলির অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেন না।’’