অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই, সচেতনতা জরুরি, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। ফাইল ছবি।
করোনাভাইরাসের নয়া রূপ নিয়ে আদৌ কি উদ্বেগের কোনও কারণ আছে? বিশেষ করে যদি কারও টিকাকরণ সম্পূর্ণ হয়ে গিয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, ওমিক্রন নিয়ে কোনও নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো যথেষ্ট তথ্য এখনও নেই। কিন্তু এর মধ্যেই সামনে এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকার সেই চিকিৎসকের বয়ান, যিনি সর্বপ্রথম করোনার ওমিক্রম রূপ নিয়ে সতর্ক করেছিলেন। নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে সেই চিকিৎসক অ্যাঞ্জেলিক কোয়েটজে বলেছেন, ‘‘গত ১০ দিনে অন্তত ৩০ জন রোগী দেখেছি যাঁরা ওমিক্রন রূপে সংক্রমিত। তাঁদের কাউকেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়নি। সামগ্রিক মৃদু উপসর্গ লক্ষ্য করা গেলেও তা উদ্বেগজনক বলে মনে হয়নি।’’ কার্যত একই কথার প্রতিধ্বনি দেশ বিদেশের বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের গলাতেও। তাঁদেরই একটি অংশের মতে, জোড়া টিকা নেওয়া থাকলে আপনি অনেকটাই সুরক্ষিত এ কথা প্রাথমিক ভাবে বলা যায়। কিন্তু যাঁদের জোড়া টিকা হয়নি?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার ক্ষেত্রে বেশির ভাগ টিকাই নিশানা করে ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন অংশকে। এই স্পাইক প্রোটিন অংশ মানব কোষে প্রবেশ করে। টিকা মানব শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনকে চিহ্নিত করতে শেখায় এবং ভাইরাস যখন শরীরে প্রবেশ করে তখন আক্রমণ তাকে করে। ওমিক্রনের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, এটির স্পাইক প্রোটিনের অন্তত ৩০টি মিউটেশন ইতিমধ্যেই ঘটে গিয়েছে। মিউটেশনের পরিমাণ যত বাড়বে ততই পাল্লা দিয়ে বাড়বে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ভাইরাসের ধোঁকা দেওয়ার পাল্লা। এ ক্ষেত্রে উপায় হল টিকা নেওয়া। কারণ মিউটেশনের পরিমাণ বেশি হওয়ার কারণে ওমিক্রন অপেক্ষাকৃত বেশি সংক্রামক। তাই যত দ্রুত সম্ভব জোড়া টিকা নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)।
বিশেষজ্ঞরা তথ্য দিয়ে বলছেন, জোড়া টিকা নেওয়া ব্যক্তি যদি করোনার ডেল্টা রূপে সংক্রমিত হন, তা হলে তাঁর মৃত্যুর আশঙ্কা ৯ ভাগের এক ভাগ। জোড়া টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের তুলনায় টিকা না নেওয়া ব্যক্তিদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা তিন গুণ বেশি।
আর ডেল্টা রূপে সংক্রমিত এবং জোড়া টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের শারীরিক সুরক্ষা ব্যবস্থা বাকিদের চেয়ে অনেক মজবুত। এই প্রসঙ্গে ইংল্যান্ডের ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটির ভাইরোলজির অধ্যাপক ডেভিড ম্যাথেউজ সে দেশের একটি সংবাদপত্রকে বলেছেন, ‘‘যদি জোড়া টিকা নেওয়া থাকে এবং ডেল্টা রূপে সংক্রমিত হয়ে আবার সেরে ওঠেন, তা হলে আপনি বৃহত্তর এবং অত্যন্ত কার্যকরী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অধিকারী। যা আপনাকে ভাইরাসের যে কোনও রূপ থেকে সুরক্ষা জোগাবে।’’ এর কারণ হিসেবে ডেভিড বলছেন, চিনের উহান থেকে যে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে সেই মূল ভাইরাসটির বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতেই টিকা আবিষ্কার। দিনে দিনে যা স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও পোক্ত করে চলেছে। স্বভাবতই ওমিক্রন রূপ থেকে টিকা নেওয়া ব্যক্তিরা অনেকটাই সুরক্ষিত থাকবেন, এটা ধরে নেওয়া যায়।
যদিও মনে রাখা প্রয়োজন, ওমিক্রন নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো যথেষ্ট তথ্য এখনও বিজ্ঞানীদের হাতে আসেনি। গবেষণা চলছে। ফলে অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। তবে সচেতনতা জরুরি।