দিল্লির হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ড। — ফাইল চিত্র।
স্থানীয়দের মধ্যে কেউ পাঁচিল টপকে, কেউ দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। সেখানে তখন সদ্যোজাতেরা সমান তালে কেঁদে চলেছে। অন্যান্য রোগীদের মধ্যে আতঙ্কের ছাপ। চারপাশে আগুন ছড়াচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে শিশুদের কোনও রকমে বার করে আনেন স্থানীয়েরা। নিজের জীবনের কথা চিন্তা না করেই শিশুদের বাঁচাতে আগুনে ‘ঝাঁপ’ দিয়েছিলেন তাঁরা।
পূর্ব দিল্লির বিবেক বিহার এলাকার এক শিশু হাসপাতালে শনিবার রাতের দিকে ভয়াবহ আগুন লাগে। দ্রুত সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে। আগুনের লেলিহান শিখা বাইরে থেকে নজরে আসে স্থানীদের। দেখা মাত্রই সময় নষ্ট না করে সদ্যোজাতদের বাঁচাতে হাসপাতালে ঢুকে পড়েন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, স্থানীয় বাসিন্দা এবং এলাকার একটি অলাভজনক সংস্থা ‘শহিদ সেবাদলে’র সংস্থার সদস্যরাই প্রথম উদ্ধারকাজে নামেন। ছুটে যান সাহায্যের জন্য। একদল বাসিন্দা হাসপাতালের পিছনের দিকের পাঁচিল টপকে ভিতরে ঢোকেন। তার পর পাইপ বেয়ে উপরে উঠে সোজা পৌঁছে যান সদ্যোজাতদের ওয়ার্ডে। কয়েকটি শিশুকে উদ্ধার করতে সক্ষম হন তাঁরা।
পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্থানীয় বাসিন্দা রবি গুপ্তা বলেন, ‘‘হাসপাতালের আগুন দেখতে পেয়ে আমরাই প্রথমে ভেতরে ঢুকে যতটা সম্ভব শিশুদের অক্ষত অবস্থায় বার করে আনি। একই সঙ্গে পুলিশ এবং দমকলের সঙ্গে যোগাযোগ করি।’’ সেবাদলের সদস্যদের অভিযোগ, আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই হাসপাতালের কর্মীরা সব পালিয়ে যান। আর এক বাসিন্দা মুকেশ বনসল জানান, ওই হাসপাতালে অক্সিজেন রিফিলিংয়ের কাজ চলছিল। তা গোটাটাই বেআইনি ভাবে হচ্ছিল।
মুকেশের কথায়, ‘‘আমরা এ ব্যাপারে স্থানীয় পৌর প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। বিষয়টি জানিয়েছিলাম। কিন্তু কিছুই লাভ হয়নি। পুলিশ সব জানে। তবে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।’’ শনিবার রাত ১১টা ৩২ মিনিট নাগাদ দমকলের কাছে ফোন যায়। দমকলের ১৬টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে যায়। বেশ কিছু ক্ষণের চেষ্টায় হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে তারা।
দমকলের এক উচ্চপদস্থ অফিসার রাজেন্দ্র অটওয়াল জানান, হাসপাতালের দোতলায় রাখা অক্সিজেন সিলিন্ডার বিস্ফোরণে পাশের বিল্ডিংগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়াও একটি অ্যাম্বুল্যান্স, দু’টি স্কুটি এবং একটি দোকানও আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত। রাষ্ট্রপতি থেকে প্রধানমন্ত্রী— সকলেই ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল জানিয়েছেন, এই ঘটনার তদন্ত হবে। আগুন লাগার নেপথ্যে দোষীদের খুঁজে বার করে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে। ইতিমধ্যেই ওই হাসপাতালের মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে।