রাজকোটের গেমিং জ়োনে অগ্নিকাণ্ড। ছবি: পিটিআই।
আনন্দে বিভোর ছিলেন সকলেই। কেউ বোলিং করছিলেন, কেউ আবার রেসিং গেমে ব্যস্ত ছিলেন। চারিদিকে যুবক-যুবতীদের ভিড়। আবার বাবা-মায়েরা তাঁদের সন্তানদের নিয়েও এসেছিলেন। হাসিখুশি পরিবেশে আচমকাই নেমে আসে বিষাদের ছায়া। এক জন এসে খবর দেন, এক তলায় আগুন লেগেছে। ব্যস, এই একটা ঘোষণাই নিমেষে পাল্টে দেয় গেমিং জ়োনের পরিবেশ। প্রাণ বাঁচতে দৌড়দৌড়ি শুরু হয়ে যায় সেখানে উপস্থিত সকলের মধ্যে। আগুনের কবল থেকে বাঁচতে দোতলার জানলা দিয়ে অনেকে লাফ মারেন! আর তাতেই মাথা ফাটল অনেকের, কেউ কেউ আবার হাত-পায়ে চোট পেয়েছেন।
শনিবার সন্ধ্যায় গুজরাতের রাজকোটের এক গেমিং জ়োনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার বিভীষিকা তাড়া করছে প্রাণে বেঁচে যাওয়া মানুষদের। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর সঙ্গে কথা বলার সময় প্রুথভিরাজ সিংহ জাডেজা নামে এক ব্যক্তি অগ্নিকাণ্ডের সময়কার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘বন্ধুরা মিলে বিকেলের দিকে ওই গেমিং জ়োনে যাই। অবসর সময় কাটানোর ভাল ঠিকানা ছিল এটা। বুঝতে পারিনি এমন বিপদে পড়ব আমরা। কোনও রকমে প্রাণ নিয়ে পালাতে পেরেছি।’’
এখানেই থেমে থাকেননি প্রুথভিরাজ। তিনি বলেন, ‘‘আমরা তখন বোলিং করছিলাম। তখন নীচের তলা থেকে ওই গেমিং জ়োনের দু’জন কর্মী এসে জানান, আগুন লেগেছে। শোনামাত্রই সকলের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। আমাদের জানানো হয়, যত দ্রুত সম্ভব ওই গেমিং জ়োন ছাড়তে হবে।’’ গেমিং জ়োন থেকে বেরোনোর একটি দরজা ছিল। সেটা পিছনের দিকে। সকলেই সেই দরজা দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। তাতেই ঘটে আরও বিপত্তি। দরজার কাছে থাকা এক অস্থায়ী কাঠামো হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। আর তাতেই বাইরে যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়।
প্রুথভিরাজ যোগ করেন, ‘‘আমরা বাইরে দেখতে পাই আগুনের লেলিহান শিখা। আমরা কয়েক জন তখন জানলা ভেঙে নীচে লাফ মারি। আমাদের দেখাদেখি অনেকেই সেই পথ অনুসরণ করেন।’’ স্থানীয়দের কথায়, কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছিল ওই গেমিং জ়োনের ভিতর থেকে।
রাজকোটের গেমিং জ়োনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩২। এর মধ্যে রয়েছে ৯টি শিশু। হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে আরও অনেকে। শীর্ষ আইপিএস আধিকারিক সুবাষ ত্রিবেদীর নেতৃত্বে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) ঘটনার তদন্তভার গ্রহণ করেছে। রাজকোটের অ্যাসিস্ট্যান্ট পুলিশ কমিশনার (এসিপি) বিনায়ক পটেল জানিয়েছেন, এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের দেহগুলি এমন ভাবে ঝলসে গিয়েছে যে, শনাক্ত করতে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে। ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রবিবার সকালেই ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছিলেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র পটেল। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।