দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিলাসবহুল গাড়ি। —ফাইল চিত্র ।
পুণের পোর্শেকাণ্ডে অভিযুক্ত কিশোরের বাবা বিশাল আগরওয়ালকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, ছেলের ‘কীর্তি’তে গ্রেফতার হতে পারেন আশঙ্কা করে পুণে ছেড়ে পালিয়ে যান ওই ইমারাতি ব্যবসায়ী। গ্রেফতারির আগে তদন্তকারীদের চোখে ধুলো দিতে অনেক ভেবেচিন্তে ছকও কষেছিলেন। তবে তাঁর সেই ফন্দি কাজে লাগেনি। ধাওয়া করে মহারাষ্ট্রের ছত্রপতি শম্ভাজিনগর (সাবেক অওরঙ্গাবাদ) থেকে তাঁকে পুলিশ গ্রেফতার করে। কিন্তু কী ভাবে পালানোর ছক কষেছিলেন ওই ব্যবসায়ী?
পুলিশ জানিয়েছে, পুত্রের নামে এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার পর পরই গা-ঢাকা দেন বিশাল। গাড়ির চালককে মুম্বইয়ের দিকে যেতে বলেন। পুলিশকে বিভ্রান্ত করার জন্য, তিনি অন্য এক চালককে তার দ্বিতীয় গাড়ি নিয়ে গোয়ার উদ্দেশে রওনা দিতে বলেন। এ দিকে মুম্বই যাওয়ার পথে, তিনি নিজের গাড়ি থেকে নেমে যান। এর পর এক বন্ধুর গাড়িতে ছত্রপতি শম্ভাজিনগরের দিকে রওনা দেন। তিনি আদতে কোথায় যাচ্ছেন সে বিষয়ে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার জন্যই একাধিক গাড়ি ব্যবহার করা হয়েছিল বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন। ওই ইমারত ব্যবসায়ী ছত্রপতি শম্ভাজিনগর যাওয়ার সময় একটি নতুন সিম কার্ড কিনেছিলেন বলেও খবর। তবে পুলিশ তদন্ত চালিয়ে জিপিএসের মাধ্যমে বিশালের বন্ধুর গাড়ি ট্র্যাক করে ফেলে। পুণের অপরাধ দমন শাখার একটি দল ওই রাস্তায় থাকা সিসি ক্যামেরার দেখে তাঁকে শনাক্ত করে ফেলে। অবশেষে, গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে শম্ভাজিনগরের একটি লজ থেকে বিশালকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বুধবারেই তাঁকে আদালতে পেশ করা হবে।
এ দিকে পুণের পুলিশ কমিশনার অমিতেশ কুমার সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে জানিয়েছেন যে, পুরো মামলাটি নিয়ে আরও গভীরে তদন্ত করতে চাইছেন তাঁরা। প্রতিটি প্রমাণ বার বার খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযুক্তকে আইনের প্রাসঙ্গিক ধারায় শাস্তি দেওয়ার জন্য তাঁরা এই মামলায় আরও জোর দিচ্ছেন বলেও তিনি জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, দ্বাদশ পরীক্ষার ফল ভাল হওয়ায় সেটি উদ্যাপন করতে বিলাসবহুল পোর্শে গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিল অভিযুক্ত কিশোর। স্থানীয় বারে গিয়েছিল সে। সেখানে মদ্যপান করে। তার পর রাস্তা ধরে ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার বেগে পোর্শে চালাচ্ছিল। কল্যাণী নগর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুই ইঞ্জিনিয়ারের বাইকে ধাক্কা মেরে পিষে দেয়। মৃত দুই ইঞ্জিনিয়ার হলেন অনীশ অবধিয়া এবং অশ্বিনী কোষ্টা। এর পরেই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে অভিযুক্ত কিশোরকে নিম্ন আদালত ঘটনার ১৪ ঘণ্টার মধ্যেই কয়েকটি শর্তে জামিন দিয়ে দেয়। আদালত জানায়, আগামী ১৫ দিন ট্র্যাফিক পুলিশের সঙ্গে কাজ করতে হবে অভিযুক্ত কিশোরকে। শুধু তা-ই নয়, সড়ক দুর্ঘটনা এবং তার ফলাফল সম্পর্কে ৩০০ শব্দের নিবন্ধও লিখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
অভিযুক্ত কিশোরের জামিন পাওয়া নিয়ে ইতিমধ্যেই ক্ষোভ তৈরি হয়েছে দেশ জুড়ে। পুলিশের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ তুলে সরব বিরোধীরাও।