Manipur Violence

মোবাইলে নজর রেখেই মণিপুরে সফল সিবিআই

মোবাইল ফোনের সিগন্যাল ধরে গ্রেফতার হওয়া পাওমিনলুন হাওকিপ, এস মালসাওন হাওকিপ, লিংনেইচং বাইতে ও টিন্নুফিং আদৌ হত্যাকাণ্ডে জড়িত কি না- তা প্রমাণ হবে আদালতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৩ ০৭:৫৮
Share:

—প্রতীকী ছবি।

‘টার্গেট ইজ় মুভিং!’ খুব সম্ভবত গাড়িতেই। সঙ্গী মণিপুরি কমান্ডো অফিসারের কাছ থেকে আশপাশের পথের হদিস চট করে জেনে নিলেন সিবিআই অফিসার ও প্যারা কমান্ডোরা। কপাল ভাল বলতে হবে, গাড়িটা তাঁদের দিকেই আসছে। রাস্তার দু’পাশে প্যারা এসএফ ‘পজিশন’ নিয়ে নিল। বিকেল নামছে। পরের সময়টা অপেক্ষা ও উৎকণ্ঠার। দূর থেকে বোলেরো গাড়িটা আসতে দেখেই রাস্তা আটকে দেওয়া হল। সামনে, পিছনে। সিগন্যাল দেখে বোঝা যাচ্ছে ওই গাড়িতে থাকা এক মহিলার ব্যাগেই রয়েছে নজরে রাখা মোবাইলটা। তার সঙ্গে রয়েছে দুই পুরুষ, আরও এক মহিলা। কিন্তু গাড়িতে রয়েছে দুই শিশুও!

Advertisement

এ বার কী হবে! মায়েদের ধরলেও, বাচ্চাদের তো পরিবারের অন্যদের হাতে, বা জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিকের হাতে তুলে দেওয়া দরকার। কিন্তু এত সময় কোথায়! জেলা পুলিশকেও না জানিয়ে চলছে অপারেশন! খবর রটার আগেই যা করার করতে হবে। সিবিআইয়ের সব মামলার ভার যেহেতু গৌহাটি হাই কোর্টকে দেওয়া হয়েছে, তাই ধৃতদের নিয়ে যেতে হবে গুয়াহাটিও। এ দিকে গুয়াহাটি যাওয়ার শেষ বিমান ছাড়বে সন্ধ্যা ৫টা ৪০ মিনিটে। বিমান আটকে রাখতে উড়ান নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিজিসিএ, বিসিএএস-এর সঙ্গে শুরু হল কথা। চূড়াচাঁদপুরে হাজির হল সেনা হেলিকপ্টার।

সকলকে উঠিয়ে আনা হল ইম্ফল বিমানবন্দর। সেখান থেকে, দাঁড় করিয়ে রাখা এয়ার এশিয়ার বিমানে তাঁদের আনা হল গুয়াহাটি। রাতে বাচ্চাদের কামরূপ মহানগর শিশু সুরক্ষা আধিকারিকদের হাতে তুলে দিলেন সিবিআইয়ের অফিসারেরা। এ ভাবেই শেষ হল মণিপুরে সিবিআইয়ের রবিবাসরীয় সার্জিকাল স্ট্রাইক!

Advertisement

৬ জুলাই মেইতেই প্রেমিক-প্রেমিকাকে বিষ্ণুপুর-চূড়াচাঁদপুর সীমানায় হত্যা করার পরে সেই ছবি ভাইরাল হয়েছিল সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে। তা নিয়ে তীব্র অসন্তোষ, প্রতিবাদ, ছাত্র বিক্ষোভের মধ্যে খোদ সিবিআইয়ের বিশেষ অধিকর্তা দিল্লি থেকে বিশেষ তদন্ত দল নিয়ে হাজির হয়েছিলেন ইম্ফলে। জনরোষের মুখে হাতে সময় ছিল না। কিন্তু হত্যাকারীদের যে ছবি দেখা যাচ্ছিল- তাতে নির্দিষ্ট করে কাউকে চেনা সম্ভব হয়নি। কিন্তু পড়ে পাওয়া সূত্র মিলল সিবিআইয়ের ট্র্যাকারে। খুন হওয়া দু’জনের কারও একটা মোবাইল তখনও ব্যবহার করা হচ্ছিল। নম্বর বদলে গেলেও মোবাইলের সেই সূত্রই ছিল দুঁদে তদন্তকারীদের পক্ষে যথেষ্ট। কিন্তু, একেবারে কুকি এলাকার বুক থেকে অচেনা ব্যক্তিদের খুঁজে বার করে উঠিয়ে আনা তো দুরুহ মিশন! প্রতিরোধ তো বটেই, সংঘর্ষও প্রায় অনিবার্য! কুকি জঙ্গিদের হাতে রয়েছে বিদেশি আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র। সিবিআই অফিসারদের পিস্তলের তার সঙ্গে এঁটে ওঠার প্রশ্নই নেই। তাই সেনার প্যারা কমান্ডোকে সঙ্গে নিয়েই রবিবার চূড়াচাঁদপুরের হেংলেপে রুদ্ধশ্বাস অভিযান চালিয়েছিল সিবিআই।

মোবাইল ফোনের সিগন্যাল ধরে গ্রেফতার হওয়া পাওমিনলুন হাওকিপ, এস মালসাওন হাওকিপ, লিংনেইচং বাইতে ও টিন্নুফিং আদৌ হত্যাকাণ্ডে জড়িত কি না- তা প্রমাণ হবে আদালতে। কিন্তু এ ভাবে কুকি এলাকা থেকে এমন ‘সরকারি অপহরণ’-এর প্রতিবাদে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। গত কালের ৪ জন ও আগে গ্রেফতার আরও এক কুকি শিক্ষকের অবিলম্বে মুক্তি দাবি করেছে কুকি যৌথ মঞ্চ আইটিএলএফ। গোটা জেলায় অনির্দিষ্টকালীন বন্‌ধ শুরু হয়েছে আজ থেকে। সব সরকারি দফতর সোমবার থেকে বন্ধ। সিল করা হয়েছে মেইতেই জেলাগুলির সব সীমানা। ফলে ফের পণ্য সঙ্কটে পড়তে পারেন মেইতেইরা। হুমকি দেওয়া হয়েছে, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সকলকে না ছাড়লে আরও তীব্র আন্দোলন হবে।

কুকিদের দাবি, স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে এলে বাচ্চাদের অন্য আত্মীয়দের কাছে রাখা যেত। বদলে এখন অসহায় দুই শিশু অন্য রাজ্যে, নিজের ভাষা না জানা, অপরিচিতদের মধ্যে আতঙ্কের জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে। অভিযোগ, এর আগে এনআইএ বাংলাদেশ ও মায়ানমারের জঙ্গিদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মণিপুরে সংঘর্ষে মদত দেওয়ার অভিযোগে সেইমিনলুন গাংতে নামে যাঁকে গ্রেফতার করে জঙ্গি বলে দাগিয়ে দিয়েছে- তিনি আদতে স্কুল শিক্ষক। জীবনে কখনও বাংলাদেশ বা মায়ানমার যাননি।

মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের টুইট আগুনে ঘি ঢেলেছে। ছাত্র বিক্ষোভে নাজেহাল বীরেন গ্রেফতারির ঘটনা টুইট করে লিখে দেন, ‘‘চার জন গ্রেফতার হয়েছে। কেউ পালিয়ে পার পাবে না। আমরা ওদের কৃতকর্মের জন্য প্রাণদণ্ড-সহ সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।’’ কুকিদের দাবি, বিনা জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারির পরে এ বার মুখ্যমন্ত্রী বিনা বিচারের ফাঁসির কথাও বলে দিলেন। বোঝাই যাচ্ছে, বিজেপির বিরুদ্ধে ইম্ফলের গণরোষ দেখে কেন্দ্র মুখ্যমন্ত্রীর গদি বাঁচাতে কাজ করছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement