ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ।—ছবি সংগৃহীত।
বিজেপি নেতৃত্বের পাখির চোখ বাংলা দখল। যার নেতৃত্বে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ঘটনাচক্রে দু’জনেই গুজরাতি। উভয়েরই দাবি, ক্ষমতায় এলে সোনার বাংলা গড়বে বিজেপি। অতীতে যে বাংলা বৌদ্ধিক ভাবে দেশে শ্রেষ্ঠ আসন নিয়েছিল সেই বাংলার ‘হৃত অতীত’কে ফিরিয়ে আনবে বিজেপি। কিন্তু অর্থ না সংস্কৃতি, কোনও জাতির শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি ঠিক কি, এই প্রসঙ্গে সরাসরি বাংলা ও গুজরাতের তুলনা টেনে এনে আজ বিতর্কে জড়িয়ে পড়লেন ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ।
সামাজিক মাধ্যমে যা নিয়ে চলল পরস্পর আক্রমণ ও প্রতি-আক্রমণ। বিজেপির মতে, দু’রাজ্যের মধ্যে তুলনা টানা হল এক শ্রেণির বিশিষ্ট জনের ভারতকে নতুন করে ভাঙার কৌশল।
বিতর্কের সূত্রপাত আজ সকালে। রামচন্দ্র গুহ ব্রিটিশ লেখক ও বামপন্থী নেতা ফিলিপ স্পাটের ১৯৩৯ সালের একটি উদ্ধৃতি টুইট করেন। সে সময়ে ফিলিপ লিখেছিলেন, ‘‘গুজরাত আর্থিক ভাবে উন্নত হলে, বৌদ্ধিক ভাবে পিছিয়ে পড়া প্রদেশ। বিপরীতে বাংলা আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকলেও, সাংস্কৃতিক ভাবে এগিয়ে।’’
রামচন্দ্র গুহের ওই টুইট সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই শুরু হয় বিতর্ক। প্রথম আক্রমণটি শানান গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণী। পাল্টা টুইটে তিনি লেখেন, ‘‘অতীতে ব্রিটিশেরা বিভাজনের রাজনীতি করে শাসন করত। আর বর্তমানে সেই দায়িত্ব নিয়েছে সমাজের এক শ্রেণির ‘এলিট’। ভারতীয়রা ওই চালে পা দেবেন না। গুজরাত মহান। বাংলাও মহান। ভারত ঐক্যবদ্ধ।’’ মুখ্যমন্ত্রীর টুইটের পাল্টা জবাবে গুহের কটাক্ষ, ‘‘গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী যখন আমার মতো নীরস ইতিহাসবিদের টুইট খেয়াল রাখছেন (তখন বুঝতে হবে) গুজরাত নিরাপদ হাতে রয়েছে।’’
গুজরাতিদের সংস্কৃতিবোধ নিয়ে প্রশ্ন তোলায় এর পরে আক্রমণে নামেন একের পর এক বিজেপি নেতা। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন টুইট করে বলেন, ‘‘গুহ ১৯৩৯ সালের যে ফিলিপ স্পাটের উদাহরণ টানছেন, সেই সময়ে জামনগরের মহারাজা জাম সাহেব দিগ্বিজয়সিংহ জাদেজা পোলান্ডের হাজার খানেক লোকের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন।’’ যার জবাবে গুহ টুইট করেন, ‘‘এখন দেখছি খোদ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নীরস ইতিহাসবিদের টুইট নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন। (দেশের) অর্থনীতি সত্যিই সুরক্ষিত হাতে!’’
গুহকে ‘স্বঘোষিত ইতিহাসবিদ’ বলে কটাক্ষ করেন বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক বি এল সন্তোষ। শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় টুইট করেন, ‘‘এক জন ক্রিকেট ঐতিহাসিক, ব্যর্থ পরিবেশবিদ, তিনি এ নিয়ে মুখ খুলেছেন। এর লক্ষ্যই হল বিভেদ সৃষ্টিকারী অ্যাজেন্ডা ছড়ানো।’’ দিনের শেষে গুহ বলেন, ‘‘গত ত্রিশ বছর ধরে ফিলিপ স্পাটকে পরিচিত করার চেষ্টা করে আসছিলাম। আজ এক দিনে বিজেপির ট্রোল সেনা ফিলিপকে সেই পরিচিতি দিয়েছে।’’