এআইসিসির পর্যবেক্ষকদের গাড়ি ঘিরে হিমাচলে বিক্ষোভ কংগ্রেসেরই একাংশের! ছবি: সংগৃহীত।
ভোটের পরেই শুরু হয়ে গেল গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব! হিমাচল প্রদেশের নবনির্বাচিত কংগ্রেস বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করতে শুক্রবার শিমলায় পৌঁছে বিক্ষোভের মুখে পড়লেন এআইসিসির পর্যবেক্ষক, ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বঘেল, হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিংহ হুডা এবং রাজ্যসভার সাংসদ রাজীব শুক্ল।
কংগ্রেসের একটি সূত্র জানাচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রিত্ব ঘিরে দলের অন্দরে টানাপড়েনের জেরেই এই বিক্ষোভ। শুক্রবার সন্ধ্যায় হিমাচল প্রদেশ কংগ্রেসের সদর দফতর রাজীব ভবনের অদূরে বঘেল-হুডাদের গাড়ি ঘিরে কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের যে অংশ বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, স্লোগান তুলেছেন, তাঁরা প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিংহের স্ত্রী তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভানেত্রী প্রতিভা সিংহের সমর্থক।
মান্ডির সাংসদ প্রতিভা মুখ্যমন্ত্রিত্বের অন্যতম দাবিদার। বৃহস্পতিবার ভোটগণনার প্রবণতা স্পষ্ট হওয়ার পরেই প্রতিভা সেই ‘বার্তা’ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘প্রয়াত বীরভদ্র সিংহের কাজের স্বীকৃতিতেই হিমাচলবাসীর সমর্থন পেয়েছে কংগ্রেস। তাঁর পরিবারকে যেন দূরে সরিয়ে দেওয়া না হয়।’’ দলের বিধায়কদের বড় অংশের সমর্থনও প্রতিভার দিকে রয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। শেষ পর্যন্ত অবশ্য বিক্ষোভকারীদের শান্ত করে রাজীব ভবনের অন্দরে গিয়ে বৈঠকে বসেন বঘেল-হুডারা।
প্রতিভা ছাড়াও প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান সুখবিন্দর সিংহ সুখু এবং বিদায়ী বিরোধী দলনেতা মুকেশ অগ্নিহোত্রীও রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রিত্বের দৌড়ে। তাঁরা দু’জনেই বিধানসভা ভোটে জিতে এসেছেন। জিতেছেন প্রদেশ কংগ্রেসের আরও আর এক প্রভাবশালী প্রাক্তন সভাপতি, কুলদীপ রাঠৌরও।
কংগ্রেসের ওই সূত্র জানাচ্ছে, শুক্রবারে বিধায়কদের বৈঠকে পরিষদীয় নেতা নির্বাচনের সম্ভবনা কম। বরং সর্বসম্মত ভাবে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হতে পারে সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের হাতে। হুডা শুক্রবার সেই ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘‘আমরা বিধায়কদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের মত কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানাব।’’
এরই মধ্যে শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রিত্বে দৌড় থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানিয়েছেন প্রতিভার ছেলে তথা নবনির্বাচিত বিধায়ক বিক্রমাদিত্য। তিনি বলেন, ‘‘আমি এই বার মুখ্যমন্ত্রীর দাবিদার নই।’’ তবে বিক্রমাদিত্য সরে দাঁড়ালেও তাঁর মা প্রতিভা ইতিমধ্যেই ‘বীরভদ্র পরিবারের চাহিদা’র কথা প্রকাশ্যে জানিয়ে দিয়েছেন।
মান্ডির সাংসদ তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভানেত্রী প্রতিভাই ছিলেন এ বার হিমাচলে কংগ্রেসের প্রচারের মুখ।কংগ্রেসের অন্দরে জল্পনা রয়েছে, জাতপাতের অঙ্ক মিলিয়ে ঠাকুর ও ব্রাহ্মণ জনগোষ্ঠী থেকে মুখ্যমন্ত্রী ও উপমুখ্যমন্ত্রী মনোনীত করতে পারে কংগ্রেস। ঠাকুর জনগোষ্ঠীর প্রতিভা, সুখু, বা কুলদীপ মুখ্যমন্ত্রী হলে ব্রাহ্মণ মুকেশ উপমুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন। মুকেশ মুখ্যমন্ত্রী হলে উপমুখ্যমন্ত্রী করা হতে পারে কোনও ঠাকুর নেতাকে।
সম্প্রতি রাজস্থানে অশোক গহলৌত-রাজেশ পাইলটের দ্বন্দ্ব মেটাতে গিয়ে দলের একাংশের বিক্ষোভ মুখে পড়েছিলেন এআইসিসির তৎকালীন দুই পর্যবেক্ষক মল্লিকার্জুন খড়্গে এবং অজয় মাকেন। হিমাচলে তারই ছায়া দেখা গেল।
হিমাচলের ৬৮টি আসনের মধ্যে ৪০টিতে জিতে ৫ বছর পরে ক্ষমতা দখল করতে চলেছে কংগ্রেস। বিজেপি ২৫টিতে জয় পেয়েছে। ৩টিতে জিতেছে নির্দলেরা। তবে আসনের ফারাক ১৫ হলেও দু’দলের ভোটের পার্থক্য ১ শতাংশেরও কম! কংগ্রেসের ৪৩.৯ শতাংশ ভোটের জবাবে বিজেপির প্রাপ্তি ৪৩ শতাংশ। বহু আসনেই জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়েছে মাত্র কয়েকশো ভোটের ব্যবধানে। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের গোষ্ঠী লড়াইয়ের জেরে বিজেপির সামনে মধ্যপ্রদেশের মতো ‘সুযোগ’ তৈরি করতে পারে বলে ‘হাত’ শিবিরের অন্দরে আশঙ্কা রয়েছে।