Hathras Gangrape

যোগীর শাসনে শুধুই অবিচার: প্রিয়ঙ্কা

আদিত্যনাথের আমলে উত্তরপ্রদেশে আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে বলে বরাবরই সরব কংগ্রেস। হাথরসের ঘটনা তাদের হাতে নতুন অস্ত্র তুলে দিয়েছে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২০ ০৪:৪৭
Share:

কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা। ছবি পিটিআই।

গণধর্ষণের অভিযোগ নিতে টালবাহানা করলেও হাথরসের নির্যাতিতার দেহ রাতারাতি সৎকার করে ফেলতে সময় নষ্ট করেনি যোগী আদিত্যনাথ সরকারের পুলিশ। উত্তরপ্রদেশের হাথরসে তরুণীর উপরে নৃশংস নির্যাতন এবং জোর করে নির্যাতিতার মৃতদেহ দাহ করার ঘটনায় সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলি থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহিলা সংগঠন।

Advertisement

এই ঘটনার জন্য গো-বলয়ের সব চেয়ে বড় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর তুলোধোনা করেছেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা। যোগী আদিত্যনাথের পদত্যাগ দাবি করে তিনি বলেছেন, ‘‘আপনার শাসনে কোনও বিচার নেই। শুধুই অবিচার।’’ উত্তরপ্রদেশ পুলিশের কাছে গোটা ঘটনার ব্যাখ্যা তলব করবে জাতীয় মহিলা কমিশন। বিরোধী শিবির যখন লাগাতার যোগীকে নিশানা করছে, তখন বিজেপির সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেছেন, ‘‘দোষীরা সাজা পাবে। উত্তরপ্রদেশে তো মাঝে মধ্যে গাড়ি উল্টে যায়।’’ অনেকে মনে করেছেন, বিজয়বর্গীয় এনকাউন্টারের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। যা করতে ‘সিদ্ধহস্ত’ যোগীর পুলিশ।

আদিত্যনাথের আমলে উত্তরপ্রদেশে আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে বলে বরাবরই সরব কংগ্রেস। হাথরসের ঘটনা তাদের হাতে নতুন অস্ত্র তুলে দিয়েছে। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীকে চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করে একের পর এক টুইট করেছেন এবং ভিডিয়ো বার্তা পোস্ট করেছেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ঙ্কা। তিনি বলেছেন, ‘‘হাথরসের ওই তরুণী যখন মারা যান, তখন ওঁর বাবার সঙ্গে আমার ফোনে কথা হচ্ছিল। ওঁর কান্না শুনতে পাচ্ছিলাম। আমাকে বলছিলেন, মেয়ের জন্য বিচার চান। মেয়েকে শেষবারের জন্য বাড়ি নিয়ে যেতে পারেননি। পারেননি নিজের হাতে শেষকৃত্য করতে।’’ আদিত্যনাথের পদত্যাগ চেয়ে প্রিয়ঙ্কার টুইট, ‘‘নির্যাতিতা ও তাঁর পরিবারকে নিরাপত্তা দেওয়ার পরিবর্তে মৃত্যুর পরেও তাঁর মানবাধিকার কেড়ে নিতে মদত দিয়েছে আপনার সরকার। মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকার নৈতিক অধিকার আপনার নেই।’’

Advertisement

যোগী জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার পরে তিনি ঘটনার তদন্তে সিট গঠন করেছেন। আদিত্যনাথকে নিশানা করে প্রিয়ঙ্কার প্রশ্ন, কেন নির্যাতিতার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হল না।

কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘হাথরসের নির্ভয়ার মৃত্যু হয়নি, তাকে হত্যা করা হয়েছে। একটা নিষ্ঠুর সরকার, তার প্রশাসন, উত্তরপ্রদেশ সরকারের উপেক্ষা তাকে খুন করেছে।’’ কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীর টুইট, ‘‘ভারতের এক কন্যাকে ধর্ষণ করে খুন করা হল। যাবতীয় তথ্য ধামাচাপা দেওয়া হল। এমনকি, মেয়ের মৃতদেহ সৎকারের অধিকারটুকুও পরিবারের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হল। যা অত্যন্ত অপমানজনক এবং অন্যায় কাজ।’’

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের টুইট, ‘‘হাথরসের নির্যাতিতাকে প্রথমে কিছু পশু ধর্ষণ করেছিল। গত কাল গোটা ব্যবস্থাটাই তাকে ধর্ষণ করল। যা ঘটল তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক।’’ সিপিএম এক বিবৃতিতে বলেছে, নির্যাতিতাকে ন্যায়বিচার দিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।

নির্যাতিতার পরিবারকে দূরে সরিয়ে রেখে সৎকারের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মা। তাঁর টুইট-প্রশ্ন, ‘‘কেন রাতে দাহ করা হল? পরিবারকে কেন উপস্থিত থাকতে দেওয়া হল না?’’ এই ঘটনার প্রেক্ষিতে দেশের প্রধান বিচারপতিকে চিঠি লিখেছেন দিল্লি মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন স্বাতী মালিওয়াল। তাঁর দাবি, যে সব পুলিশ অফিসার এই অপরাধ আড়ালের চেষ্টা করেছিলেন তাঁদের সাসপেন্ড করা হোক এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হোক। নারী অধিকার আন্দোলনের কর্মী শবনম হাসমির কথায়, ‘‘২০১৪ থেকে ২০১৮ দেশে ১.৭৫ লক্ষ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। দেশ জুড়ে নারী নির্যাতন ক্রমবর্ধমান।’’

দেশজোড়া প্রতিবাদের মধ্যেই বেফাঁস মন্তব্য করে বসেছেন বিজয়বর্গীয়। তিনি বলেন, ‘‘অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলা ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে গিয়েছে। আমি জানি, যোগীজির রাজ্যে যে কোনও সময় গাড়ি উল্টে যায়।’’ অনেকের মতে, গাড়ি উল্টে যাওয়ার কথা বলে এনকাউন্টারের দিকে ইঙ্গিত করেছেন বিজয়বর্গীয়। কারণ, পুলিশ খুনে অভিযুক্ত কুখ্যাত অপরাধী বিকাশ দুবে পুলিশের এনকাউন্টারে মারা গিয়েছিল। তার আগে পুলিশের যে গাড়ি করে বিকাশকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, সেটা উল্টে যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement