২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মেঙ্গালুরুর বাস ডিপোর সামনে ফলের ঝুড়ি নিয়ে বসেন। আসা-যাওয়ার মাঝে পথচলতি মানুষ তাঁর কাছ থেকে ফল কিনে নিয়ে যান। হাসিমুখে ক্রেতাদের সেই ফল বিক্রি করেন। গল্পে মজে যান তাঁদের সঙ্গে।
সেই হরেকলা হজব্বা এক বিদেশি ক্রেতার ভাষা বুঝতে পারেননি। তাঁকে তাই তাঁর মনের মতো ফলও বেচতে পারেননি তিনি। সেই ঘটনা দাগ কেটে গিয়েছিল তাঁর মনে।
তেমন ভাবে পড়াশোনা না জানায় ইংরেজি জানতেন না হরেকলা। বিদেশি ক্রেতার ইংরেজিতে তাঁর কাছে ফলের দাম জানতে চেয়েছিলেন। কোনও উত্তর দিতে পারেননি তিনি। পড়াশোনা করতে না পারার যন্ত্রণা থেকেই পরবর্তীকালে তিনি নিজের এলাকার দুঃস্থ ছেলেমেয়েদের জন্য স্কুল খোলেন। সেই কাজের জন্য ২০২০ সালে পদ্মশ্রী সম্মান পান তিনি।
পদ্মশ্রী সম্মান প্রাপ্ত হিসাবে তাঁর নাম ঘোষিত হলেও অতিমারির কারণে এত দিন সেই স্মারক তিনি হাতে পাননি। ২০২১-এর ৮ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির হাত থেকে এই সম্মান গ্রহণ করেন তিনি।
হরেকলার জন্ম কর্নাটকের মেঙ্গালুরুতেই। সেই ১৯৭৭ সাল থেকে তিনি ফল বিক্রি করে আসছেন মেঙ্গালুরু বাস ডিপোর সামনে। এখন তাঁর বয়স ৬৬ বছর।
কন্নড় ছাড়া আর কোনও ভাষাই তিনি বুঝতে বা বলতে পারেন না। ওই ঘটনার পর তাই তিনি এলাকার সমস্ত পিছিয়ে পড়া ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করে তোলার অঙ্গীকার নেন। তাঁর গ্রামেই একটি স্কুল খুলে ফেলেন।
একটি স্কুলের পরিকাঠামোর জন্য কী কী প্রয়োজন সে সব কিছুই জানতেন না তিনি। সমস্ত খোঁজ-খবর নিয়ে সাংসদের সঙ্গে দেখা করেন। সাংসদ তহবিল এবং নিজের জমানো পুঁজি মিলিয়ে ২০০০ সালে স্কুলটি খুলে ফেলেন তিনি।
২৮ জন পড়ুয়া নিয়ে স্কুল শুরু করেছিলেন তিনি। এখন দশম শ্রেণি পর্যন্ত সেই স্কুলে ছাত্র সংখ্যা ১৭৫।
পদ্মশ্রী সম্মানের সমস্ত টাকাও স্কুলের উন্নয়নে দান করতে চান হরেকলা। তাঁর স্বপ্ন এলাকায় আরও অনেক স্কুল খোলার।
একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির জন্য স্কুল চালু করার আর্জি নিয়ে ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছেও পৌঁছে গিয়েছেন তিনি।
হরেকলা জানান, বহু মানুষ তাঁকে স্কুলের জন্য অনুদান দেন। সেই টাকা এবং নিজের জমানো পুঁজি দিয়ে একটি জমি কেনার পরিকল্পনা করছেন হরেকলা। সেই জমিতে একটি কলেজ বানাতে চান তিনি।