প্রতীকী ছবি।
দার্জিলিংয়ের চা বাগানে চিনের নজর! অন্তত তেমন সন্দেহের বশেই পাহাড়ের তিনটি চা বাগানের হস্তান্তর আটকে দিয়েছে দার্জিলিং জেলা প্রশাসন। নবান্নের ভূমি দফতরের সন্দেহের তিরও চিনের দিকেই। চা বাগানের হস্তান্তরে যে তিন গুজরাতি ব্যবসাদারের নাম সামনে এসেছে, তাঁদের নেপথ্যে হংকংয়ে পঞ্জিকৃত এক চিনা লগ্নি সংস্থার যোগসূত্র রয়েছে বলে নবান্নের কর্তাদের একাংশ দাবি করেছেন। তাই শ্রমিকদের পাওনাগণ্ডা ও জমির লিজের কাগজপত্র চেয়ে নতুন মালিকদের নামে কাগজপত্র হতে দেয়নি জেলা প্রশাসন।
তবে শুধু তিনটি বাগানই নয়, পাহাড়ের আরও অন্তত ১০টি বাগানে ঘুরপথে চিনা লগ্নিকারীরা ঢুকতে চাইছে বলে জেনেছে সরকার। বাগানগুলি প্রায় দ্বিগুণ দামে কিনে নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে বেশ কিছু সংস্থা। যেগুলি আসলে চিনা সংস্থার ভারতে পঞ্জিকৃত ‘মুখোশ’ সংস্থা বলে মনে করছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলি। গত দু’তিন বছর ধরে ডুয়ার্সের বেশ কিছু ছোট বাগান থেকে একচেটিয়া সিটিসি চা কিনতে শুরু করেছে বেশ কিছু চিনা সংস্থা। প্রয়োজনে সিটিসি তৈরির যন্ত্রচালিত প্রক্রিয়াকরণে বিনিয়োগ করতেও তারা আগ্রহী বলে ডুয়ার্সের বাগান মালিকদের প্রস্তাব দিয়েছেন চিনা ব্যবসায়ীরা। কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারও সে ব্যাপারে সজাগ বলে জানাচ্ছেন ভূমি দফতরের কর্তারা। কারণ, পাহাড়ের সমস্ত চা বাগানের জমির মালিক আসলে ভূমি দফতর। জমির লিজ চুক্তির প্রশ্নে তাই সরকারের মালিকানা হস্তান্তরে নাক গলানোর সুযোগ রয়েছে বলে জানাচ্ছেন ভূমি কর্তারা।
যদিও চা শিল্পে ১০০% বিদেশি বিনিয়োগ চালু হওয়ায় সরকারের হাতে চিনা সংস্থাকে ঠেকানোর কোনও আইন নেই। শ্রমিকদের পাওনাগণ্ডা আর জমির লিজের শর্তেই তাঁদের উপর কেবল নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
আরও পড়ুন: চিনা পণ্য বর্জনে ঝোঁক, উপদেষ্টার কথা শোনে কে
দার্জিলিং জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, দার্জিলিংয়ের ধোত্রে কালেজভ্যালি এবং পেশক এই দু’টি চা বাগানের মালিক ছিলেন তৃণমূলের প্রাক্তন রাজ্যসভা সাংসদ কে ডি সিংহ। তাঁর চিট ফান্ড সংস্থা অ্যালকেমিস্ট ২০০৬ সালে এই দু’টি বাগান কিনেছিল। কিন্তু ২০১৩-তে চিটফান্ড কেলেঙ্কারি সামনে আসার পরে সমস্যায় পড়েন কে ডি সিংহ। মুম্বইয়ে পঞ্জিকৃত একটি সংস্থাকে ২০১৬-তে বাগান দুটি বিক্রি করে দেয় অ্যালকেমিস্ট। ঘটনাচক্রে মুম্বইয়ের সংস্থাটি হল হংকংয়ে পঞ্জিকৃত একটি রাসায়নিক সংস্থার শাখা। হংকংয়ের সংস্থাটির লগ্নিকারীরা আসলে চিনের বলে খবর পান প্রশাসনের কর্তারা। ২০১৬তে প্রথম হাতবদলের পর মুম্বইয়ের সংস্থাটি আবার আমদাবাদে পঞ্জিকৃত একটি সংস্থাকে ধোত্রে কালেজভ্যালি এবং পেশক বাগান দুটি বিক্রি করে দেয়। ঘটনাচক্রে, আমদাবাদের তিন গুজরাতি ব্যবসায়ী মুম্বইয়ের সংস্থাটির ডিরেক্টর বলে জানতে পারে দার্জিলিং জেলা প্রশাসন।
আরও পড়ুন: ৩ অস্ত্র নিয়ে ফিরুন রাহুল, ভাবনা দলে
২০১৮ সালে আমদাবাদের সংস্থাটি বাগান দু’টির দখল নিতে আসে। নবান্নের একাংশ জানাচ্ছে, সন্দেহজনক হাতবদল এবং তাতে চিনা যোগসূত্রের সন্দেহে শ্রমিকদের পাওনাগণ্ডা নিয়ে নতুন দখলদারকে দেখা করতে বলা হয়। ১৯৮৬-তে চা বাগানের লিজ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও বারবার হাতবদল হয়ে বাগান দু’টি চলছিল। লিজ নবীকরণের প্রশ্নেও নতুন মালিক পক্ষকে নোটিস দেয় সরকার। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানাচ্ছেন, আমদাবাদের ওই সংস্থা কার্যত উধাও হয়ে যায়। ভূমি দফতরও বর্তমান মালিকের হদিস পাচ্ছে না।
রাজ্যের কর্তারা জানাচ্ছেন, সুকনা, লেবং এবং কালিম্পং সেনা ছাউনির আশপাশে বাগানগুলির হাত বদল নিয়ে সরকার এর পর থেকে স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছে। দার্জিলিং জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, আরও ১৩টি বাগানের হাতবদল নিয়েও কথাবার্তা এগোচ্ছে বলে জেনেছে সরকার। মুলতার, সিপাহিধুর, নুরবং, সিভিটারের মতো ‘অর্গানিক’ চায়ের বাগান নিয়েও কথাবার্তা শুরু হয়েছে।