ছবি— সংগৃহীত
‘‘পুলিশের তদন্ত তো নয়, যেন গ্যাং ওয়ার! এমন ঘটনা রোহিত শেট্টিকে পাঠিয়ে দিন। তিনি এ নিয়ে অ্যাকশন সিনেমা বানিয়ে ফেলতে পারবেন।’’
কোনও বিরোধীর ব্যঙ্গ বা সমালোচনা নয়। নগাঁও জেলার বটদ্রবায় বুলডোজ়ার চালিয়ে অভিযুক্তের বাড়ি ভেঙে ফেলার ঘটনা নিয়ে জেলার এসপি লীনা দোলেকে এই ভাষাতেই তুলোধোনা করলেন খোদ গৌহাটি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি আর এম চ্ছায়া। তিনি বলেন, “সন্দেহের বশেই যদি কারও বাড়ি ভাঙা যায়, তবে তো নিছক সন্দেহ করে পুলিশ কাল এই আদালতও ভেঙে ফেলতে পারে!”
উল্লেখ্য, এ বছর ২১ মে মাছ ব্যবসায়ী সফিকুল ইসলামের হাজতে মৃত্যুর ঘটনার পরে তাঁর বাড়ির লোক ও গ্রামবাসীদের একাংশ বটদ্রবা থানায় চড়াও হয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। পুলিশ পরের দিনই সফিকুলের পরিবার ও আরও চার অভিযুক্তের বাড়িতে বুলডোজার নিয়ে চড়াও হয়ে বাড়িগুলি ভেঙে ফেলে। বিনা বিচারে, কোনও আইনের পরোয়া না করে পুলিশের এই কাণ্ড নিয়ে দুই আইনজীবী হাইকোর্টে অভিযোগপত্র পাঠালে হাইকোর্ট তা নিয়ে স্বতপ্রণোদিত মামলা রুজু করেছিল। সেই মামলার শুনানিতেই প্রধান বিচারপতি পুলিশের তীব্র সমালোচনা করলেন।
তাঁর কথায়, “আইন ও শৃঙ্খলা শব্দবন্ধটি নিছক কথার কথা নয়। তার অর্থ ও গুরুত্ব রয়েছে। কিন্তু নগাঁওতে পুলিশ যা করেছে তার অনুমতি দিলে দেশে আইনের শাসন বা শৃঙ্খলা লোপ পাবে। কোনও নাগরিক নিরাপদ থাকবেন না! তদন্তের নামে যা ইচ্ছে করবে পুলিশ!” তিনি বলেন, “আমি কখনও কোনও এসপিকে সার্চ ওয়ারেন্টের ভিত্তিতে বুলডোজ়ার নিয়ে সন্দেহভাজনের বাড়ি ভেঙে ফেলতে দেখিনি! এ সব পুলিশের তদন্ত না গ্যাং ওয়ার! এ সব ঘটনা তো হিন্দি ছবিতে হয়! যদিও তেমন মশলা ছবি আমি দেখি না, কিন্তু এমন এসপির কথা জানতে পারলে আপনাকে নিয়ে তো রোহিত শেট্টি সিনেমা বানিয়ে ফেলবে!”
প্রধান বিচারপতি এসপি লীনা দোলের সমালোচনা করে বলেন, “কোন আইনের অধীনে, কার অনুমতি নিয়ে আপনি অভিযুক্তদের বাড়ি ভাঙলেন? আইনের কোনও ধারাই এই ঘটনাকে সমর্থন করে না। এই ঘটনা ফৌজদারি আইনের ক্ষেত্রে কলঙ্ক।”
পুলিশ নিজের কাজের সমর্থনে হলফনামা দিয়েছিল। সেখানে বলা হয়, তদন্তের স্বার্থে, তল্লাশির প্রয়োজন এক্সক্যাভেটর নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তল্লাশিতে একটি ৯ মিলিমিটার বোরের পিস্তল মিলেছে।
চ্ছায়া প্রশ্ন তোলেন, পিস্তল বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে না পুলিশই রেখেছে— তার কোনও প্রমাণ নেই। কাল যদি আপনার মনে হয় আদালতে কিছু লুকোনো আছে তবে কি আপনি আদালত ভবনও গুঁড়িয়ে দেবেন? কেউ যদি জোর করে আমার চেয়ারে এসে বসে, তাহলে অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আগে আপনি কি তদন্তের অজুহাত দিয়ে আমার চেয়ারটা আগে নষ্ট করে ফেলবেন?
তিনি সতর্ক করে দেন, “এসপি হোক বা ডিআইজি, আইজি বা ডিজিপি— সকলকেই আইনের অধীনে থেকে কাজ করতে হবে।”