প্রবল বৃষ্টিতে ভাসছে দেহরাদূন। ছবি: পিটিআই।
এক দিকে হিমাচল প্রদেশ, অন্য দিকে উত্তরাখণ্ড, উত্তর ভারতের এই দুই রাজ্য বৃষ্টি, বন্যা পরিস্থিতি আর ভূমিধসের সঙ্গে যুঝে চলেছে। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে লন্ডভন্ড দুই রাজ্যের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে শুধুমাত্র হিমাচলেই মৃত্যু হয়েছে ৫১ জনের। তিন জনের মৃত্যু হয়েছে উত্তরাখণ্ডে।
গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে উত্তরাখণ্ডের বহু জেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দেহরাদূন, টিহরী, পৌড়ী, উধম সিংহ নগর, নৈনিতাল, চম্পাবতে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করেছে মৌসম ভবন। অন্য দিকে, হরিদ্বারেও কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে রাজ্যের বেশির ভাগ নদীগুলি বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি হরিদ্বার এবং হৃষীকেশে। এখানে গঙ্গা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। বিপদসীমা ছাড়িয়ে বইছে গঙ্গার জল। ফলে নদী তীরবর্তী বহু এলাকা প্লাবিত। ঘরবাড়ি ছাড়া বহু মানুষ। হৃষীকেশে পরমার্থ নিকেতন আশ্রমের কাছে যে বিশাল শিবমূর্তি রয়েছে, সেই মূর্তির নিম্নভাগ ডুবে গিয়েছে। গঙ্গার ভয়ঙ্কর সেই রূপে ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে। যদিও ভিডিয়োটির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।
শুধু হরিদ্বার বা হৃষীকেশই নয়, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর জানিয়েছে, রুদ্রপ্রয়াগ, শ্রীনগর এবং দেবপ্রয়াগে অলকানন্দা, মন্দাকিনী এবং গঙ্গার জল বিপজ্জনক ভাবে বাড়ছে। এই নদীগুলির জলস্তর বাড়তে থাকায় বহু জেলা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। চামোলি জেলায় পরিস্থিতি ক্রমে অবনতি হচ্ছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। অলকানন্দার শাখানদী পিন্ডার, নন্দকিনী এবং বিরহী ফুলেফেঁপে ওঠায় প্লাবনের আশঙ্কায় প্রহর গুনছেন ওই জেলার বাসিন্দারা।
কেন্দ্রীয় জল কমিশনের জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার সানি বিষ্ণোই জানিয়েছেন, গঙ্গার জল বিপদসীমায় পৌঁছেছে। রবিবার রাতে হৃষীকেশে ৪৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আর সেই বৃষ্টির জেরে রবিবার থেকে জলে ভাসছে হৃষীকেশ, চন্দ্রেশ্বর নগর এবং শ্রীশাম ঝারির মতো নিচু এলাকাগুলি। শুধু বন্যা পরিস্থিতিই নয়, এই রাজ্যের বাসিন্দারা ভূমিধসের সঙ্গেও যুঝছেন। ধসের কারণে বহু রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ধসের কারণে বন্ধ বদ্রীনাথ জাতীয় সড়ক।
পরিস্থিতি ক্রমে খারাপ হওয়ায় মঙ্গলবারই দেহরাদূনে নিজের বাসভবনে জরুরি বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামি। জেলা প্রশাসনগুলিকে তিনি পরিস্থিতির উপর সর্বক্ষণ নজর রাখতে নির্দেশ দিয়েছন। সেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও করতে বলেছেন।
রাজ্য পুলিশের ডিজি অশোক কুমার এই পরিস্থিতিতে রাজ্যবাসীকে ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। সংবাদ সংস্থা এএনআইকে তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যের বহু জেলায় চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করেছে মৌসম ভবন। ১২ অগস্ট থেকে বহু জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। পুলিশ এবং রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী উদ্ধারের কাজ চালাচ্ছে।’’