ছোট ছোট পাহাড় ও ঝর্নায় ঘেরা কেরলের কাকাদামপয়িল গ্রাম। প্রকৃতি তাঁর রূপের শোভা নিয়ে বিরাজ করছে সেখানে। নিজেদের প্রচেষ্টায় সেই সৌন্দর্যে অন্য মাত্রা যোগ করেছেন সেই গ্রামেরই দুই ভাই— আব্দুল হামিদ হাজি ও আব্দুল সালিম
বাড়ির কাছে প্রায় ১৮ একর জায়গা জুড়ে তাঁরা তৈরি করেছেন ফার্মল্যান্ড। দুর্লভ প্রজাতির বিভিন্ন বিদেশি ফল থেকে সবজি, মাছ... কী নেই সেখানে! সেই ফার্মল্যান্ড এখন সেখানকার পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্র। কেমন ছিল এই দুই ভাইয়ের সাফল্যের যাত্রা?
কেরলে পাথরের ব্যবসা আছে এই দুই ভায়ের। কিন্তু তাঁদের দু’জনেরই শখ ছিল চাষের। সেই মতো ২০১১তে জমি কেনেন তাঁরা। তার পর পাথরের ব্যবসার পাশাপাশি শুরু করেন ফার্মল্যান্ড তৈরির কাজ। এ ব্যাপারে আব্দুল সালিম বলেছেন, ‘‘আমরা দুই ভাই কাজ ভাগ করে নিয়েছিলাম। সেই মতো আমাদের দুটো ব্যবসা সুন্দর ভাবে চলছে।’’
মালাবার উপকূলের এই গ্রামে আবহাওয়া বেশ সুন্দর। ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে বিদেশি বিভিন্ন ফল সহজেই বেড়ে ওঠে এখানে। পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চাষ করেন তাঁরা। তার পর বেড়ে ওঠে সেই গাছ। বারাসু, এলিফ্যান্ট আপেল, স্ট্রবেরি, ড্রাগন ফ্রুটের মতো বিদেশি ফলের পাশাপাশি পেয়ারা ও আমের মতো ফলের চাষও নিজেদের ফার্মল্যান্ডে করেন ওই দুই ভাই।
একটা ফার্মল্যান্ডে এত রকম ফলের বৈচিত্র সত্যিই খুব কম জায়গায় দেখা যায়। সালিম বলেছেন, ‘‘আমরা এখনও অবধি সবথেকে দামি যে চারা কিনেছি, তা হল বার্মিজ আঙুর। কিন্তু দাম দিয়ে চারা কিনতে আমরা দু’বার ভাবিনি। কারণ দুর্লভ ফলেই আমরা সাজাতে চেয়েছি আমাদের বাগান।’’
ফলের পাশাপাশি কফি, গোলমরিচ, লবঙ্গও নিজেদের ফার্মল্যান্ডে চাষ করেন সালিম ও হামিদ।
খুব পরিকল্পনা করে ফার্মল্যান্ড বানিয়েছেন দুই ভাই। পর্যটকরা এখানে ঘুরতে ঘুরতেই চেখে দেখতে পারেন ফলের স্বাদ। পাশাপাশি তাঁরা যাতে চারা কিনে নিয়ে যেতে পারেন, সে ব্যবস্থাও রেখেছেন কাকাদামপয়িলের দুই ভাই।
পাঁচ বছর আগে কর্নাটকের গুন্ডালপেট্টুতেও ফার্মল্যান্ড বানানোর জন্য জমি কিনেছিলেন তাঁরা। বিশেষত আম ও ফলের জন্যই কেনা হয়েছিল সেই জমি। সে কাজ ভাল ভাবে শুরু হলেও খরা ও জলের অভাবে তাঁরা বিক্রি করে দেন সেই জমি।
তবে কেরলের এই গ্রামে জলের অভাব হয়নি তাঁদের। কারণ, সেই গ্রামের কাছেই আছে জলপ্রপাত। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় জল খুব সহজেই পেয়ে যান তাঁরা। সেই জলপ্রপাত দেখতে যাওয়া পর্যটকদের জন্য ঝর্নার কাছে একটি স্টলও খুলেছেন তাঁরা। তাঁদের ফার্মল্যান্ডের বিভিন্ন ফল বিক্রিও করা হয় সেখানে।
এ ব্যাপারে আব্দুল হামিদ বলেছেন, ‘‘কাকাদামপয়িল জলপ্রপাতে ঘুরতে আসা পর্যটকরা যাতে দুর্লভ ফল ও চারা কিনতে পারেন, সে জন্য আমরা একটা স্টল বানিয়েছি। কারও আগ্রহ জন্মালে সেখান থেকে আমাদের ফার্মল্যান্ডেও ঘুরতে চলে আসেন।’’
ফলের পাশাপাশি ওই ফার্মল্যান্ডে সবজিও চাষ করেন তাঁরা। সালিম বলেছেন, ‘‘আমরা দেখলাম ফলের পাশাপাশি সবজি চাষও ভালই হয় এই জমিতে। তাই আমরা ফুলকপি, বাঁধাকপি, বিট এ সব চাষ করা শুরু করলাম। যদিও এটা বিক্রির জন্য নয়। এই সবজি দিয়ে আমাদের পরিবারের রোজের দরকার মিটে যায়।’’
হামিদ ও সালিমের ১৮ একরের ওই ফার্মল্যান্ডে রয়েছে একাধিক জলাশয়। এই জলাশয়গুলিতে মাছ চাষ শুরু করেন তাঁরা।
তেলাপিয়া, রুই, নাটার ছাড়াও বিভিন্ন রকমের মাছ সেখানে চাষ করেন তাঁরা। নিজেদের ফার্মল্যান্ড থেকে সাত কিলোমিটার দূরে একটি জমি ভাড়াও নিয়েছেন তাঁরা। স্থানীয় ফিশারি বিভাগের সাহায্যে সেখানেও চলছে মাছ চাষ।
এই সব চাষ নিয়ে হামিদ বলেছেন, ‘‘কেবল মাত্র ব্যবসার জন্য এটি গড়ে তুলিনি আমরা। খাদ্যের ব্যাপারে বাজারের মুখাপেক্ষী না হয়ে স্বনির্ভর হওয়া যায় তাই দেখাতে চেয়েছিলাম আমরা। আমাদের দেখাদেখি আশেপাশের অনেকেই নিজ উদ্যোগে এ রকম চাষ শুরু করেছেন।’’