প্রতীকী ছবি।
ক্ষমতায় আসার বছর খানেক পরেই সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প হিসেবে অটল পেনশন যোজনা এনেছিল মোদী সরকার। মূলত অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীরাই ছিলেন এর লক্ষ্য। তবে তার বাইরেও অনেকে যোগ দেন। সেই প্রকল্পের দরজাই এ বার আয়করদাতাদের জন্য বন্ধ করে দিল কেন্দ্র। বুধবার বিজ্ঞপ্তি জারি করে অর্থ মন্ত্রক জানিয়েছে, যে সব ভারতীয় নাগরিক আয়কর দেন তাঁরা অটল পেনশন পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না। তবে আগেই যাঁরা পলিসি কিনেছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম প্রযোজ্য নয়। তা কার্যকর হচ্ছে ১ অক্টোবর থেকে। কেন্দ্রের এই ঘোষণার পরেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে দেশে। বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, এর ফলে এমন অনেকে এই আর্থিক সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হবেন, যাঁদের জন্য প্রকল্পটি জরুরি ছিল। বিশেষ করে বর্তমান আর্থিক সঙ্কটের আবহে।
অ্যাকাউন্ট খুলে ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরের মাধ্যমে অটল পেনশনে শামিল হওয়া যায়। শর্ত, আবেদনকারীর নাম অন্য কোনও সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে থাকবে না। বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, একাধিক সুযোগ নেওয়ার পথ তো আটকানোই হয়েছিল। এমন কঠোর পদক্ষেপ কি রাজকোষে রাশ টানতে?
অটল পেনশন যোজনা কী
• কেন্দ্রের পেনশন প্রকল্প। মূলত অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীদের সামাজিক সুরক্ষা হিসেবে তা আনা হয়।
• চালু ২০১৫ সালের ১ জুন।
• যোগ দেওয়ার বয়স ১৮ থেকে ৪০ বছর।
• প্রকল্পটিতে কেউ শামিল হলে তাঁকে ৬০ বছর পর্যন্ত নির্দিষ্ট হারে টাকা জমা দিতে হয়। কতটা পেনশন নিতে চান তার উপরে নির্ভর করে জমার অঙ্ক।
• কেন্দ্রও ভর্তুকি দেয়।
• ৬০ বছর বয়সের পর থেকে মাসে ১০০০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত পেনশন মেলে।
• লগ্নিকারী তহবিলে কত টাকা দিয়েছেন, তার ভিত্তিতে স্থির হয় পেনশন।
অর্থ মন্ত্রক জানিয়েছে
• আগামী ১ অক্টোবর থেকে কোনও আয়করদাতা অটল পেনশন যোজনায় যোগ দিতে পারবেন না।
• ওই দিন বা তার পরে তেমন কোনও লগ্নিকারী নাম লেখালে, তাঁর অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হবে। ফেরত দিয়ে দেওয়া হবে তহবিলে জমা পড়া টাকা।
• তবে কোনও করদাতা আগেই প্রকল্পের আওতায় এলে, তাঁদের ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম প্রযোজ্য হবে না।
• সামাজিক সুরক্ষা যাঁদের প্রয়োজন, শুধু তাঁদের হাতে তুলে দেওয়াই নিয়ম বদলের উদ্দেশ্য।
অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকার বলেন, “অটল পেনশন অল্প আয়ের মানুষকে সুরক্ষা দেয়। আয়কর দেন এমন অনেক সাধারণ মানুষেরও রোজগার তেমন বেশি নয়। তাই প্রকল্প থেকে বাদ দিতে আয়করের মাপকাঠি দুর্ভাগ্যজনক। যোগ্যতার ভিত্তি হওয়া উচিত আবেদনকারীর আয়।’’ নতুন নিয়ম আয়কর ফাঁকিতে উৎসাহ দেবে বলেও আশঙ্কা তাঁর। আর্থিক বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দত্তের দাবি, ‘‘দেশে যখন স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব পালন হচ্ছে, তখন আয়করের অছিলায় অটল পেনশনের মতো সামাজিক সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার কেড়ে নেওয়া হল এমন অনেকের থেকে, যাঁদের তা দরকার ছিল। আমার ধারণা, মূলত ভর্তুকি বাবদ খরচ কমানোই উদ্দেশ্য। বর্তমানে ওষুধ-সহ প্রায় সমস্ত পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, সুদ বাবদ কম আয়ের বাজারে বহু স্বল্প আয়ের মানুষ বঞ্চিত হলেন।’’ সরকারের অবশ্য দাবি, অপ্রয়োজনীয়দের ছেঁটে ফেলা হল। যাঁদের দরকার তাঁরা সাহায্য পাবেন।