(বাঁ দিকে) অনীশ এবং অশ্বিনী (ডান দিকে)। পোর্শে দুর্ঘটনায় মৃত দুই ইঞ্জিনিয়ার। ছবি: সংগৃহীত।
রাত ৩টে। হুটার বাজিয়ে বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল অ্যাম্বুল্যান্স। পড়িমরি করে বাড়ির ভিতর থেকে ছুটে এলেন পরিবারের সদস্যেরা। অ্যাম্বুল্যান্সের দরজা খুলতেই সাদা কাপড়ে আদ্যোপান্ত মোড়ানো জ্যেষ্ঠ সন্তানের দেহ দেখে কান্নার বাধ ভেঙে গিয়েছিল পরিবারের। বীরসিংহপুরের নিস্তব্ধতা ভেঙেছিল আর্ত চিৎকারে।
মধ্যপ্রদেশের উমারিয়া জেলা বীরসিংহপুরের অবধিয়া পরিবারের জ্যেষ্ঠ সন্তান বছর চব্বিশের অনীশের মৃত্যু হয়েছে পোর্শে গাড়ি চাপা দেওয়ায়। পুণেতে এক কিশোরের বিরুদ্ধে অনীশ এবং তাঁর এক সঙ্গী অশ্বিনীকে চাপা দিয়ে মারার অভিযোগ উঠেছে। অনীশ পুণের ডিওয়াই পাতিল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে পাশ করে একটি বহুজাতিক সংস্থায় ইন্টার্নশিপ করছিলেন। অশ্বিনীও একই সংস্থায় ইন্টার্নশিপ করেন। তবে তিনি ফেব্রুয়ারিতেই ইস্তফা দেন।
বন্ধুরা সকলে মিলে রবিবার সন্ধ্যায় কল্যাণ নগরে একটি রেস্তরাঁয় গিয়েছিলেন। অনীশের এক বন্ধু আকিব জানান, অনেক দিন ধরেই একসঙ্গে মিলিত হওয়ার একটা পরিকল্পনা করা হয়েছিল। সেই মতো রবিবার কল্যাণ নগরের ওই রেস্তরাঁয় সকলে জড়ো হয়েছিলেন। আকিব বলেন, “আমরা সকলে একই কলেজে পড়তাম। আমরা সমবয়সি। কিন্তু অনীশ আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিণতমনস্ক ছিল। রবিবার সন্ধ্যায় আমরা রেস্তরাঁয় খাওয়াদাওয়া সেরে বেরিয়েছিলাম। আমরা সকলে বাইকেই ছিলাম। সকলের পিছনে ছিল অনীশ এবং অশ্বিনী। হঠাৎই একটা আওয়াজ পেলাম। ঘুরে দেখি একটি পোর্শে অনীশ এবং অশ্বিনীকে পিষে দিয়েছে। চোখের নিমেষে ঘটনাটি ঘটেছিল।”
অনীশের পরিণতমনস্কতার জন্য বন্ধুরা সকলে তাঁকে ‘স্যরজি’ বলে ডাকতেন। আকিব জানিয়েছেন, অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন অনীশ। আমেরিকায় পড়তে এবং কাজ করতে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। আকিবের কথায়, “যখনই আমরা দেখা করতাম, কোডিং নিয়ে আলোচনা করতাম।” অত্যন্ত অমায়িক, হাসিখুশি এবং নম্র স্বভাবের ছিলেন অনীশ, এমনটাও জানিয়েছেন আকিব। বিমান নগরে ভাইয়ের সঙ্গে একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন অনীশ। ট্রেকিং করতে খুব ভালবাসতেন। তেমনই ছিলেন খাদ্যরসিকও। আকিব বলেন, “অনীশের সবচেয়ে প্রিয় খাবার ছিল ডাল-তরকা। ভাবতেই পারছি না যে ও আর আমাদের মধ্যে আর নেই।”
মধ্যপ্রদেশের জবলপুরের বাসিন্দা ছিলেন অশ্বিনী কোষ্টা। তিনিও এই দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। সোমবার রাতেই দেহ নিয়ে বাড়িতে পৌঁছন তাঁর দাদা। অশ্বিনীর বাড়ির লোকেরা এটিকে দুর্ঘটনা বলে মানতে চাইছেন না। তাঁদের দাবি, অশ্বিনী এবং অনীশকে গাড়িচাপা দিয়ে খুন করা হয়েছে। অভিযুক্ত কিশোরকে জামিন দেওয়ায় ক্ষোভ উগরে দিয়েছে দু’জনেরই পরিবার। অশ্বিনীর কাকা যুগল কিশোর বলেন, “১৫ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তকে জামিন দেওয়া হল! এটা কী করে সম্ভব? এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চাইছি।”