(বাঁ দিকে) অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। রোহিত আর্য (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।
তাঁর একাধিক রায় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। বিতর্ক তৈরি হয়েছিল তাঁর অনেক মন্তব্য ঘিরে। অনেকে তাঁকে মধ্যপ্রদেশের ‘অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়’ বলেন। এ বার মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্টের সেই প্রাক্তন বিচারপতি রোহিত আর্য যোগ দিলেন বিজেপিতে। শনিবার ভোপালে সে রাজ্যের সভাপতির হাত ধরে বিজেপির সদস্যপদ নেন রোহিত। তবে পদত্যাগ করে রাজনীতিতে আসেননি তিনি। অবসর নেওয়ার দু’মাস পরে তিনি রাজনীতিতে যোগ দিলেন।
গতানুগতিক ছকের বাইরে গিয়ে মানুষকে বিচার দেওয়ার কথা বলেছিলেন প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ। তাঁর মতে, মানুষকে দ্রুত বিচার পাইয়ে দিতে ওই সব সিদ্ধান্ত নিতেন। অভিজিতের বিচার করার ‘ধরন’ নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে। প্রাক্তন বিচারপতি রোহিতের ক্ষেত্রেও অনেকে এমন ধারণা পোষণ করেন। ২০২০ সালে একটি মামলায় প্রথম তাঁর নাম শিরোনামে উঠে আসে। শ্লীলতাহানির একটি মামলায় তিনি অভিযুক্তকে ‘অদ্ভুত’ শর্ত দিয়ে জামিন দিয়েছিলেন। শর্ত হিসাবে বলেছিলেন, অভিযুক্তকে রাখিবন্ধন উৎসবের দিন ওই মহিলার বাড়িতে রাখি এবং মিষ্টি নিয়ে যেতে হবে। ওই মহিলা তাঁকে রাখি পরালে জামিন মিলবে। বিচারপতির যুক্তি, ভাই-বোনের সম্পর্ক তৈরি হলে এই ধরনের অপরাধের প্রবণতা কমবে। যদিও পরে সুপ্রিম কোর্ট রোহিতের ওই নির্দেশ খারিজ করে দিয়েছিলেন। এর পরে ২০২১ সালে কৌতুকশিল্পী মুনওয়ার ফারুকি জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছিলেন প্রাক্তন বিচারপতি। সে বার মুনওয়ারও সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিন পান।
প্রাক্তন বিচারপতি রোহিতের এজলাসের ভার্চুয়াল শুনানির অনেক ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই সব ভিডিয়োতে দেখা যায়, তদন্তে গাফিলতির দায়ে তিনি পুলিশ ও সরকারি আধিকারিকদের ধমকাচ্ছেন, আইনজীবীকে ভর্ৎসনা করছেন। একটি মামলায় এক পুলিশ আধিকারিকের উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আপনি এমন তদন্ত করেছেন কেন? আপনি কি অফিসার থেকে কনস্টেবল হতে চান?’’ অন্য এক ভিডিয়োয় দেখা যায়, এক পুলিশকর্মীকে ভর্ৎসনা করে তিনি বলছেন, ‘‘আপনার পায়ে কি মেহেন্দি রয়েছে যে আপনি তদন্ত করতে যেতে পারেননি? আপনাদের এই সব কাজের জন্য পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা উঠে যাবে।’’ এ ভাবেই বারে বারে আলোচনায় উঠে এসেছে রোহিতের বিচারের পদ্ধতি।
১৯৮৪ সালে আইনজীবী হিসাবে কাজ শুরু করেন রোহিত। ২০০৩ সালে প্রবীণ আইনজীবী হিসাবে স্বীকৃতি পান। দেওয়ানি, কোম্পানি, শিল্প সংক্রান্ত মামলায় পারদর্শী ছিলেন প্রাক্তন ওই বিচারপতি। আইনজীবী হিসাবে কেন্দ্রীয় সরকারের অনেক প্রতিষ্ঠানে তিনি কাজ করেছেন। ২০১৩ সালে বিচারপতি হন রোহিত। গত ২৭ এপ্রিল মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্টের বিচারপতি পদ থেকে অবসর নেন তিনি। শনিবার মধ্যপ্রদেশ বিজেপি ভোপালে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল। সেখানেই বিজেপিতে যোগ দেন হাই কোর্টের ওই অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি।