Mahua Moitra

মহুয়ার বিরুদ্ধে মামলা করবেন? প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি আস্থা রাখতে পারছেন না আদালতে

রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ, অসম এনআরসি-র মতো গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল মামলার রায় দিয়েছেন রঞ্জন গগৈ।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২০:০৪
Share:

—ফাইল চিত্র

সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি থাকাকালীন রঞ্জন গগৈ-এর বিরুদ্ধে ওঠা ধর্ষণের অভিযোগ এবং তার বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে লোকসভায় প্রশ্ন তুলেছিলেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। বর্তমানে রাজ্যসভার সাংসদ গগৈ এ নিয়ে আর যাই হোক আদালতে যাওয়ার পক্ষপাতী নন। তাঁর মতে, গিয়ে কোনও লাভ নেই, গিয়ে কোনও বিচার পাওয়া যাবে না। এই গগৈ-ই অযোধ্যার জমিতে রামমন্দির নির্মাণের রায় দিয়েছেন, রায় দিয়েছেন অসম এনআরসি-র মতো আর একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল মামলার।

Advertisement

একটি সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের কনক্লেভের সঞ্চালক তুলে আনেন লোকসভায় তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূল সংসদ মহুয়া মৈত্রের বক্তব্যের প্রসঙ্গ। প্রশ্ন করেন, তিনি কি মহুয়ার বিরুদ্ধে মামলা করবেন? জবাবে পাল্টা এক গুচ্ছ প্রশ্ন তুলে দেন নিজেই। বলেন, ‘‘মামলা করে আর কী হবে। আদৌ কি বিচার পাওয়া যায় আদালতে? কে আদালতে যায় বলুন তো? আদালতে গিয়ে ঘষতে ঘষতে জুতো ক্ষয় করা ছাড়া আর কিছু হয় না। ব্যবসায়ীরা, যাঁদের জিতলে বিপুল অঙ্কের প্রাপ্তির সম্ভাবনা আছে, অথবা সম্পত্তি লাভের যোগ আছে, তাঁরাই আদালতে যান।’’

ঘটনাচক্রে কয়েক দিন আগে লোকসভায় মহুয়া মৈত্র রঞ্জন গগৈ-এর নাম না করেও তাঁর বিষয়ে কথা বলেন। তাঁর বক্তব্য় ছিল, দেশের বিচার ব্যবস্থার পবিত্রতা সেই দিনই নষ্ট হয়ে গিয়েছে, যখন এক জন প্রাক্তন প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠেছিল এবং তিনি নিজেই নিজের বিচার করেছিলেন। অবসরের পরে তাঁকেই আবার রাজ্যসভার সাংসদও মনোনীত করেছে সরকার পক্ষ। আর
বৃহস্পতিবার কনক্লেভে গগৈ-এর ওই বক্তব্য ট্যাগ করে টুইটে মহুয়ার খোঁচা, ‘‘ভারতীয় বিচারব্যবস্থা নিয়ে কান্নাকাটি করছেন একজন প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি, যিনি আবার রাজ্যসভার সাংসদও মনোনীত হয়েছেন। এটা হাস্যকর।’’

Advertisement

আলোচনার গোড়াতেই বিচার ব্যবস্থার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘‘দেশের নিম্ন উচ্চ ও শীর্ষ আদালতগুলিতে গড়ে ৫০ শতাংশ কর্মী নিয়ে কাজ চলছে। বিচারপতিদের নিয়োগ হচ্ছে না। ফলে জমছে মামলার পাহাড়।’’ বিচারপতি নিয়োগের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে গগৈ বলেন, ‘‘বিচারপতি নিয়োগে কেন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থাকবেন? কেন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের আলোচনা-পর্যালোচনার মাধ্যমে বিচারপতি নিয়োগ করা হবে না?’’

বিচারপতিদের মানসিকতা নিয়েও খেদ ঝরে পড়েছে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতির গলায়। তাঁর কথায়, ‘‘এটা তো আর সরকারি অন্য দফতরের মতো ১০টা-৫টার মতো চাকরি নয়। এটা একটা চব্বিশ ঘণ্টার চাকরি। তার জন্য ভালবাসা, আবেগ থাকা দরকার।’’ উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘হয়তো রাত ২টোয় কোনও একটা পয়েন্ট আপনার মাথায় এল। তখনই বিছানা ছেড়ে সেটা লিখে রাখতে হবে এবং তা নিয়ে ভাবতে হবে।’’ এমন মনোভাব বিচারপতিদের একটা বড় অংশের মধ্যেই নেই বলেও আক্ষেপ প্রকাশ করেন গগৈ। একই সঙ্গে প্রশিক্ষণের সময় কেন শুধুই আইনি ভাষা ও খুঁটিনাটি শেখানো হবে, কেন এই মনোভাব তৈরির উপর গুরুত্ব দেওয়া হবে না, তা নিয়েও সরব হয়েছেন বিচারপতি।

২০১৯ এর ১৭ নভেম্বর গগৈ অবসর নিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি পদে। তার ৪ মাস পরেই তিনি রাজ্যসভায় মনোনীত সাংসদ হয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement