রেললাইনের ব্যবধান ঘুচিয়েছে গাছের সেতু। ছবি বন দফতরের সৌজন্যে।
লোহার সেতু ছিলই। কিন্তু তা পছন্দ নয় তাদের। অবশেষে প্রকৃতিক সেতু বানিয়ে ঘোচানো হল ১৩২ বছরের ব্যবধান। এ পারের গিবন বা উল্লুক এখন পাড়ি দিচ্ছে পড়শিদের এলাকায়। যোরহাটের হলংপারে আছে হুলক গিবন অভয়ারণ্যে।
১৮৮৭ সালে এই এলাকায় রেললাইন পাতে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল। ফলে অভয়ারণ্যটি ১ ও ২– এই দুই শাখায় বিভক্ত হয়ে যায়। বিপন্ন প্রজাতির হুলক গিবনের আবাসও রেল লাইনের দু’পাশে আলাদা হয়ে যায়। রেলপথের এক দিকের জঙ্গলে ওয়েস্টার্ন হুলক গিবন ও অন্য দিকে ইস্টার্ন হুলক গিবনরা। এরা সাধারণত গাছ থেকে মাটিতে নেমে হাঁটাচলা করা পছন্দ করে না। তাই তাদের মধ্যে যোগাযোগও বন্ধ হয়ে যায়। এ দিকে উল্লুকদের ধর্ম হল, তারা একই পরিবারের মধ্যে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয় না। ফলে অভয়ারণ্যে উল্লুকের সংখ্যা ক্রমেই কমছে।
দু’পারের উল্লুকদের মধ্যে যোগাযোগ শুরু করাতে বন দফতর ও রেল পাঁচ লক্ষ টাকা খরচ করে রেললাইনের উপরে লোহার সেতু তৈরি করে দিয়েছিল। কিন্তু তা একেবারেই ব্যবহার করছিল না তারা। ব্যবহার করেনি বাঁশের সেতুও। এর পরে আরণ্যকের গবেষক দিলীপ ছেত্রী ও বন দফতরের উদ্যোগে রেললাইনের উপরে প্রাকৃতিক সেতু গড়ার কাজ শুরু হয়। ২০০৬ সালে রেললাইনের দু’দিকে ৭১টি প্রজাতির বাছাই করা তিন হাজার গাছের চারা লাগানো হয়। তারা বড় হয়ে উঠতে থাকে। ১৩ বছরে সেই গাছগুলি বড় হয়েছে। এ পাশের ডাল ও পাশের ডালকে জড়িয়ে তৈরি হয়েছে প্রাকৃতিক সেতু।
গিবন অভয়ারণ্যের বিট অফিসার রূপক ভুঁইয়া জানান, উল্লুকরা ওই গাছের সেতু দিয়ে দিব্যি যাতায়াত চালাচ্ছে। এ বার পশ্চিমের উল্লুক পুরুষ ও পারের উল্লুক মহিলার সঙ্গে মেলামেশা করছে অনায়াসে। সকলের আশা, এর ফলে উল্লুকদের প্রজনন বাড়বে। বাড়বে সংখ্যা। ডিএফও দেবিন্দর সুমন জানান, এখনও পর্যন্ত একটি এলাকাতেই সফল ভাবে তৈরি হয়েছে প্রাকৃতিক সেতু। আরও বেশ কয়েকটি সেতু তৈরির চেষ্টা চলছে।