ফাইল চিত্র।
অসমে এনআরসির কাজ ঝুলে থাকায় প্রায় ২৭ লক্ষ মানুষ আধার কার্ড পাচ্ছেন না। তাঁদের বায়োমেট্রিক তথ্য লক হয়ে রয়েছে। সেই সমস্যা মেনে নিয়ে কেন্দ্র প্রস্তাব দিল, যত দিন না এনআরসি চূড়ান্ত হচ্ছে, বিকল্প হিসেবে আধার চেয়ে করা আবেদন সংখ্যাকে ভিত্তি করে আধার সংক্রান্ত সব ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।
অ্যাটর্নি জেনারেল আদালত আর বেঙ্কটরামানি আদালতকে জানান, কেউ আধার না পেয়ে থাকলে আধারে নাম তোলা বা এনরোলমেন্টের জন্য আবেদন জানাতে পারেন। সেই আবেদনপত্রের এনরোলমেন্ট নম্বর ও স্লিপের ভিত্তিতেই তাঁরা সব সরকারি সুবিধা, ভর্তুকি ইত্যাদি পেতে পারেন।
কিন্তু তৃণমূলের তরফে আইনজীবী বিশ্বজিৎ দেব তার প্রতিবাদ করে বলেন, আইনত আধারের সঙ্গে এনআরসি বা রেজিস্ট্রার জেনারেলের দফতরের কোনও যোগ নেই। এনআরসিতে নাম থাক বা না থাকা, তার জন্য আধার দেওয়া আটকায় না। অসমের আধার-বঞ্চিতদের অস্থায়ী-বিকল্প ব্যবস্থা নয়, স্থায়ী আধার কার্ডই দিতে হবে। তিনি আপত্তি প্রদর্শনের অনুমতি চান। পরের শুক্রবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের তারিখ নির্ধারিত করে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি হিমা কোহলির বেঞ্চ।
বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিলেন তৃণমূলের সাংসদ সুস্মিতা দেব। এ নিয়ে কেন্দ্র সরকার ও অসম সরকারের জবাব তলব করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়, সরকার এই সমস্যার সমাধানের জন্য একটি ‘অফিস মেমোরান্ডাম’ জারি করেছিল। তার ভিত্তিতেই আধারের বদলে আবেদনপত্রের এনরোলমেন্ট নম্বর ব্যবহার করে অস্থায়ী ভাবে সমস্যার সমাধান করা যায়।
তৃণমূলের তরফে মামল লড়া আইনজীবী বিশ্বজিৎ দেব দাবি করেন, ২০১৯ সালের ৩১ অগস্ট রেজিস্ট্রার জেনারেলের উপস্থিতিতে যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল, তাকে আনুষ্ঠানিক ভাবে ‘ফাইনাল এনআরসি’ বলা হয়েছিল। এনআরসি-র ওয়েবসাইটেও সেই উল্লেখ রয়েছে। আদালতও তাকেই চূড়ান্ত এনআরসি বলে মেনে নিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কোথাও বলা হয়নি যে এনআরসি না হওয়া পর্যন্ত আধার নম্বর দিতে পারবে না। আরজিআইয়ের সঙ্গেও আধারের কোনও সম্পর্ক নেই। ২০০৩ নাগরিকত্ব আইনের ৭ নম্বর রুল অনুযায়ী ন্যাশনাল আইডেন্টিটি কার্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে আরজিআইয়ের কর্তৃত্ব থাকলেও আধারের ক্ষেত্রে তারা বাধা দিতে পারে না। তিনি আরও বলেন, আধার আইনে বলা হয়েছে যে কেউ ভারতে ১৮২ দিনের বাসিন্দা হলে বা আধারের জন্য আবেদন করার আগে ১২ মাস ভারতে থাকলেই আধার নম্বর পেতে পারেন। আধার নম্বরের সঙ্গে নাগরিকত্বেরও কোনও যোগ নেই।
কিন্তু কেন্দ্র ফের জানিয়ে দেয়, আরজিআই স্বীকৃতি না দেওয়া পর্যন্ত এনআরসি চূড়ান্ত হবে না। রাজ্য এনআরসি দফতরও বায়োমেট্রিক তথ্য অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারবেন না।
বিশ্বজিৎ বলেন, কেন্দ্র আসলে নাকের বদলে নরুণ দিয়ে কাজ সারতে চাইছে। এ কোনও স্থায়ী সমাধান হতে পারে না। আধারের সঙ্গে এনআরসি ও আরজিআইয়ের যে কোনও সম্পর্ক নেই— আমাদের এই দাবির বিরুদ্ধে একটিও কথা বলেনি রাজ্য ও কেন্দ্র। পরোক্ষে তারাও এই দাবি মেনে নিয়েছে। আগামী শুক্রবার দুই পক্ষের বক্তব্য শুনে চূড়ান্ত রায় দেবে সুপ্রিম কোর্ট।