যে পরিবারে কেউ বইয়ের মুখ পর্যন্ত দেখেননি, সেই পরিবারের ছেলে কি না আইএএস অফিসার! স্বপ্নেও পরিবারের কেউ কখনও ভাবেননি যে এমনটাও সম্ভব।
অন্ধ্রপ্রদেশের কারনুল জেলার কোটাপারু গ্রামে এক চাষি পরিবারে জন্ম গন্ধম চন্দ্রুদুর। পরিবারে তিনিই ‘ফার্স্ট জেনারেশন লার্নার’।
অর্থাত্ পরিবারে তাঁর আগে আর কেউই বইয়ের মুখ দেখেননি। এমন এক পরিবেশে থাকতেন তিনি, যেখানে স্কুলের প্রাথমিক স্তর পাশ করাই দূরুহ, সেখানে নিজের প্রতিক্ষা আর ইচ্ছাশক্তির জোরে আইএএস-এর মতো কঠিন পরীক্ষাতেও উতরে যান প্রথম চেষ্টাতেই।
২০০৯ সালে আইএএস পরীক্ষায় তিনি সারা ভারতে ১৯৮ র্যাঙ্ক করেন। ২০১০ সালে নিজের রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশেই প্রথম কাজে যোগ দেন। ইচ্ছাশক্তি আর কঠোর পরিশ্রমের কাছে যে অর্থকষ্ট কোনও বাধা নয়, গন্ধমের থেকে এখন সেই অনুপ্রেরণাই পান তাঁর মতো কোটাপারুর অলিতে গলিতে ঘুরে বেড়ানো ছেলেমেয়েরা।
ছোটবেলায় বাবা-মা গ্রামেরই এক সরকারি প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিল তাঁকে। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ওই স্কুলেই পড়েন। তারপর পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াকালীন জওহর নবোদয় বিদ্যালয়ের নির্বাচনী পরীক্ষা পাশ করে এই স্কুলে ভর্তি হন তিনি। স্কুলের পরিকাঠামো ছিল ভাল আর বেতন ছিল সাধ্যের মধ্যে। কিন্তু সেখানে সুযোগ পাওয়া ছিল বেশ কঠিন।
তিনি যখন দশম শ্রেণিতে পড়েন, রেলওয়ে রিক্রুটমেন্ট বোর্ড স্কুলের নবম-দশম শ্রেণিতে একটি পরীক্ষা নেয়। উদ্দেশ্য ছিল উত্তীর্ণদের রেলওয়ের একটি ভোকেশনাল কোর্সের সুযোগ করে দেওয়া। তাতে পরে চাকরির সুযোগও ছিল।
সেকেনদরাবাদে রেলওয়ে জুনিয়র কলেজ থেকে হাইস্কুলের গণ্ডি টপকান গন্ধম। তারপর ওই ভোকেশনাল কোর্সের সুবাদে টিকিট কালেক্টরের চাকরি পান ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই। পরিবারের জন্য চাকরিটা তাঁর দরকার ছিল।
টিকিট কালেক্টর হয়েই থেমে যেতে চাননি তিনি। আরও বড় কিছু হয়ে ওঠার ইচ্ছা ছিল। তাই প্রথমেই চাকরির পাশাপাশি দূরশিক্ষার মাধ্যমে স্নাতক হন।
২০০০ সালে তিনি টিকিট কালেক্টরের কাজ পান। কিন্তু সরকারি চাকরিটা তাঁকে স্বস্তি দিচ্ছিল না। এর নয় বছর পর, ২০০৯ সালে তিনি আইএএস পরীক্ষায় বসেন। সারা দিনের চাকরির পরে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। তাই সিনিয়রকে বলে নাইট শিফট নিয়ে নিয়েছিলেন।
সারাদিন পড়তেন আর রাতে রেলের ডিউটি করতেন। রাতে যাত্রীদের চাপও কিছুটা কম থাকে। ফলে সেই সময়টাও পড়াশোনার কাজে লাগাতেন তিনি। পরীক্ষায় বসার আগের এক বছর ৮-৯ ঘণ্টা পড়াশোনা করতেন তিনি। পরিশ্রমের ফলও সে রকমই হয়েছে।
প্রথম বারের চেষ্টাতেই আইএএস-এর মতো কঠিন পরীক্ষায় ভাল নম্বর নিয়ে উত্তীর্ণ হন। আইএএস অফিসার হওয়ার পর অন্ধ্রপ্রদেশের প্রত্যন্ত এলাকায় ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি। পিছিয়ে পড়া বিভিন্ন উপজাতি সম্প্রদায়কে সাহায্য করেছেন।
তাঁদের জন্য ঋণের ব্যবস্থা করে দিয়ে ব্যবসার সুযোগ করে দিয়েছেন। অর্থের অভাবে যাতে গ্রামের কাউকে পড়াশোনা ছাড়তে না হয়, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সে দিকেও।