বাজেট বিতর্কে বিরোধীদের তীব্র আক্রমণ করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। —ফাইল চিত্র।
বাজেট নিয়ে ভুয়ো ধারণা ছড়াচ্ছেন বিরোধী নেতারা। তাঁদের স্বভাবই হল সরকারের প্রচেষ্টাকে খাটো করে দেখানো। চলতি বাজেটে কেবলমাত্র ধনীদের দিকেই নজর দেওয়া হয়েছে, এমন ধারণাও সঠিক নয়। শুক্রবার এ ভাবেই বিরোধীদের তীব্র আক্রমণ করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। বললেন, “করোনাকালে গোটা বিশ্বেরই অর্থনীতিতে ধাক্কা লেগেছে। এই বাজেটে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলিকে সুরাহা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু, বিরোধীদের স্বভাবই হল ভুয়ো ধারণা ছড়িয়ে সরকারের সমস্ত প্রচেষ্টাকে নস্যাৎ করে দেওয়া।”
শুক্রবার রাজ্যসভায় বাজেট বিতর্কে অংশগ্রহণ করেন নির্মলা। নিজের ভাষণে তাঁর চলতি বাজেট নিয়ে বিরোধীদের সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে তাঁদের দিকে একের পর এক অভিযোগ করেন তিনি। কংগ্রেস, বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি), আম আদমি পার্টি (আপ), সিপিএম-সহ বিরোধীদের অভিযোগ, নির্মলার বাজেটে কেবলমাত্র ধনীদের সুবিধা দেবে। তাঁদের আরও ধনবান করবে এই বাজেট। অন্য দিকে, এটি দেশের আম জনতাকে কোনও ভাবেই স্বস্তি দিতে পারেনি। বাজেট নিয়ে বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করেছেন কংগ্রেস-সহ ওই বিরোধী দলের নেতারা। কংগ্রেসের শক্তিসিংহ গোহিলের অভিযোগ, চলতি বাজেটে পুঁজিপতিদের আরও ধনবান করে তুলতে সহায়তা করবে। অথচ দেশের দরিদ্র, নিপীড়িতদের আত্মনির্ভর হওয়ার কথা বলেছে এই বাজেট। তাঁর কথায়, “নোটবন্দি বা জিএসটি-র মতো সিদ্ধান্তের ফলে দুঃসময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে দেশ। এক দিকে ধনীদের সাহায্য করছে সরকার আর অন্য দিকে গরিব মানুষকে বলছে, আত্মনির্ভর হতে।”
কংগ্রেসের মতোই বাজেটের সমালোচনায় সরব হয়েছে বামপন্থী দলগুলি। সিপিআইয়ের বিনয় বিশ্বমের কটাক্ষ, “এই ‘আত্মনির্ভর ভারত’ কি আসলে পুঁজিবাদীদের হাতে আত্মসমর্পণ করার মডেল? এই সরকারকে পুঁজিবাদীদের কাছে বিনিয়োগের সরকার বলা যেতে পারে।” তাঁর দাবি, নরেন্দ্র মোদী সরকারে চোখ বুজে ধনতন্ত্রে নমুনা অনুসরণ করছে। সেই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, “দেশের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে অর্থনীতিকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে এই সরকার।” বাজেট নিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বিএসপি-র অশোক সিদ্ধার্থ বা সঞ্জয় সিংহের মতো আপ নেতাও। অশোকের মতে, “সরকার চায় ধনীরা আরও ধনবান হোক এবং গরিবেরা আরও গরিব।” আপ নেতার দাবি, বিকেন্দ্রীকরণের নামে সব কিছুই বড় বড় সংস্থা এবং শিল্পপতিদের কাছে বিক্রি করছে মোদী সরকার।
বিরোধীদের সমালোচনার উত্তরে নির্মলার দাবি, বাজেটে স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্যের বদলে মাঝারি এবং দীর্ঘময়াদি উন্নতির রাস্তা খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। সড়ক নির্মাণ, কৃষিক্ষেত্র, আবাসন প্রকল্প থেকে শুরু করে বিদ্য়ুৎ— সব দিকেই মানুষকে সুুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তাঁর মন্তব্য, “অর্থনৈতিক প্যাকেজের মাধ্যমে বাজেটে বহু ক্ষেত্রে যাতে সুরাহা হয়, সেই চেষ্টাই করা হয়েছে। স্বল্পকালীন উন্নতির বদলে দেশ যাতে মাঝারি এবং দীর্ঘমেয়াদি ভাবে উন্নতির পথে এগোয়, তা লক্ষ্য রাখা হয়েছে। যাতে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিশ্বে দ্রুত উন্নতির পথে অগ্রসর হওয়া দেশগুলির মধ্যে থাকা যায়। তবে যাঁদের অত্যন্ত প্রয়োজন, তাঁদের জন্য স্বল্পমেয়াদি সুরাহা দেওয়ারও চেষ্টা করা হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “প্রধানমন্ত্রী গ্রামসেবক যোজনার আওতায় ২০১৪-’১৫ এবং চলতি অর্থবর্ষে যে ২ লক্ষ ১১ হাজার ১৯২ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে, সেই রাস্তা তো গ্রামেই পৌঁছবে! সেই গ্রামগুলি কি ধনীদের জন্য? সেই গ্রামগুলিতে গরিবেরা থাকেন না? প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ১ কোটি ৬৭ লক্ষ বাড়ি তৈরি করা হয়েছে। এটাও কি ধনীদের জন্য়? ২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে প্রধানমন্ত্রী সৌভাগ্য যোজনায় ২ কোটি ৬৭ লক্ষ্য ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সরকারি ই-মার্কেটে ৮,২২,০৭৭ কোটি অর্থমূল্যের অর্ডার দেওয়া হয়েছে। এগুলি কি বড় বড় সংস্থাগুলির জন্য করা? এগুলি সব ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প (এমএসএমই)-কে দেওয়া হয়েছে।” এর পরেই নির্মলার দাবি, “সরকারের যা-ই করুক না কেন, প্রতিবার তার সমালোচনা করাটা বিরোধীদের স্বভাবই হয়ে দাঁড়িয়েছে।”