নিতিন পটেল। ফাইল চিত্র।
পাঁচ বছর আগে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর পদে রদবদলের সময়ে নিতিন পটেল এক রকম নিশ্চিত ছিলেন, তিনিই মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন। কিন্তু বিজেপির পরিষদীয় দলের বৈঠকে বিজয় রূপাণীর নাম ঠিক হওয়ার পরে নিতিন বলেছিলেন, “ঈশ্বর জানেন কী হল!”
পাঁচ বছর পরে এ বার বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে রূপাণীকে সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় উপমুখ্যমন্ত্রী নিতিনের ঘনিষ্ঠ মহল আশা করেছিল, তিনিই নতুন মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন। অথচ এ বারও নিতিনের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়ল না। দ্বিতীয় বার মুখ্যমন্ত্রীর পদ ফসকে যাওয়ার পরে নিতিন বিদ্রোহ করবেন কি না, তা নিয়ে বিজেপির অন্দরমহলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। গুজরাতে বিজেপির প্রভাবশালী নেতা নিতিন এ বার নিজের ক্ষোভ চেপে রাখেননি। রবিবার দুপুরে আমদাবাদে বিজেপির সদর দফতরের বৈঠকে নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ভূপেন্দ্র পটেলের নাম ঠিক হওয়ার পরেই নিতিন সেখান থেকে বেরিয়ে যান। এর পরে বিজেপি নেতারা রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে ভূপেন্দ্রকে পরিষদীয় দলের নেতা নির্বাচিত করার কথা জানান। নিতিন কিন্তু সেখানে অনুপস্থিত ছিলেন। এর পরে ভূপেন্দ্র পটেলের সরকারে তিনি উপমুখ্যমন্ত্রী থাকতে চাইবেন কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।
দল তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী না করায় তিনি যে ক্ষুব্ধ, তা স্পষ্ট করে দিয়ে নিতিন আজ সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, “খারাপ তো লেগেইছে। খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক।” একই সঙ্গে কার্যত বিজেপি নেতৃত্বকে বার্তা দিয়ে নিতিন বলেছেন, “যত দিন জনতার হৃদয়ে রয়েছি, তত দিন কেউ বার করে দিতে পারবে না।” শনিবার বিজয় রূপাণী মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরে নতুন মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে নিতিন ছাড়াও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবিয়া, পুরুষোত্তম রুপালা এবং রাজ্যের অন্য পোড়খাওয়া নেতা-মন্ত্রীরা ছিলেন। সে দিকে ইঙ্গিত করে নিতিন বলেন, “আমি একা নই। অনেক বড় বড় নেতাই আটকে গেলেন।”
একটি সূত্রের দাবি, নিতিনের সঙ্গে রাজ্যের পাঁচ-ছ’জন বিধায়ক যোগাযোগ করেছেন। পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে কথাবার্তা চলছে।
ভূপেন্দ্র পটেলের মতো নিতিন পটেলও গুজরাতের প্রভাবশালী পাটীদার সম্প্রদায়ের নেতা। ফলে তাঁকে বাদ দিয়ে কেন প্রথম বারের বিধায়ক, রাজ্য প্রশাসনে অনভিজ্ঞ ভূপেন্দ্রকে বেছে নেওয়া হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিজেপি নেতাদের একাংশ মনে করছেন, নিতিনের মতো পোড়খাওয়া মন্ত্রীকে মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসালে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পক্ষে দিল্লি থেকে রিমোট কন্ট্রোলে গুজরাতের সরকার চালানো কঠিন হত। সেই কারণেই অনভিজ্ঞ ভূপেন্দ্রকে বেছে নেওয়া হয়েছে। বিজেপির আর একটি সূত্রের যুক্তি, নিতিন গত বার মুখ্যমন্ত্রী হতে না পেরে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের থেকে শুধু উপমুখ্যমন্ত্রীর পদই আদায় করেননি, দর কষাকষি করে নিজের পছন্দমতো দফতরও নিয়ে ছেড়েছিলেন।
বিজেপির বর্তমান শীর্ষ নেতৃত্ব এই ধরনের দর কষাকষি একেবারেই ভাল ভাবে নেন না। বিজেপির এক কেন্দ্রীয় নেতা আবার বলছেন, “মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বিজয় রূপাণীর বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ ছিল, তিনি ঠিক মতো কোভিডের মোকাবিলা করতে পারেননি। নিতিন পটেল ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। কোভিড মোকাবিলায় ব্যর্থতার কারণে যদি রূপাণীকে ইস্তফা দিতে হয়, তা হলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে নিতিনকে কী ভাবে মুখ্যমন্ত্রী করা সম্ভব?”
বিজেপিতে গুজরাতের ভারপ্রাপ্ত ভূপেন্দ্র যাদব, সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক বি এল সন্তোষ ছাড়াও কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক হিসেবে নরেন্দ্র সিংহ তোমর, প্রহ্লাদ জোশীকে দিল্লি থেকে আমদাবাদে পাঠানো হয়েছিল। রবিবার নতুন মুখ্যমন্ত্রী বেছে নিতে বিজেপির বৈঠক শুরুর আগে নিতিন বলেছিলেন, এমন কাউকে মুখ্যমন্ত্রী বাছতে হবে, যিনি সকলের কাছে পরিচিত, গ্রহণযোগ্য, জনপ্রিয়, দৃঢ় ও অভিজ্ঞ। তখনই বোঝা গিয়েছিল, সরাসরি না বললেও নিতিন আসলে নিজের কথাই বলছেন। বিজেপির বৈঠকে তিনি একেবারে প্রথম সারিতে বসেছিলেন। ভূপেন্দ্র পটেল বসেছিলেন শেষ সারিতে।
পাঁচ বছর আগে বিজেপির বৈঠকে যখন অমিত শাহ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বিজয় রূপাণীর নাম প্রস্তাব করছেন, তখন বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন নিতিন। শাহ তাতেও পিছু হটেননি। এ বার নিতিন কী করবেন?
অমিত শাহ সোমবার গুজরাতের নতুন মুখ্যমন্ত্রীর শপথে যোগ দিতে গাঁধীনগরে যাচ্ছেন। বিজেপির অনেক নেতারই ধারণা, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বার্তা গাঁধীনগরে এসে পৌঁছলেই সব বিদ্রোহ, বিক্ষোভ ধামাচাপা পড়ে যাবে।