ফাইল চিত্র।
সংগঠনে গতি আনার লক্ষ্যে নেতাদের বয়স বাঁধছে কেন্দ্রীয় এবং বাংলার সিপিএম। এই প্রশ্নে আরও এক ধাপ এগিয়ে যেতে চলেছে কেরলের সিপিএম। এ বারের সম্মেলন-পর্বে তারা দলের সদস্য থাকার বয়ঃসীমাই ৭৫ বছরে বেঁধে দিচ্ছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে শুধু কমিটি নয়, গোটা সংগঠনেরই গড় বয়স ও চেহারা অনেকটা বদলে যাবে বলে সিপিএম নেতৃত্বের মত।
সিপিএমের শাখা কমিটি স্তরে সম্মেলন শুরু হয়ে গিয়েছে প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যেই। সম্মেলন-পর্ব সম্পূর্ণ হবে আগামী বছর এপ্রিলে কেরলের কান্নুরে ২৩তম পার্টি কংগ্রেসে। দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকার জন্য সর্বোচ্চ বয়স ৭৫-এ বেঁধে দেওয়ার নীতি পার্টি কংগ্রেস থেকেই চালু করতে চাইছে সিপিএম। তার ফলে কত পরিচিত, প্রতিষ্ঠিত নেতাকে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে হবে, তা নিয়ে চর্চাও চলছে। কেন্দ্রীয় স্তরের নীতির সঙ্গে সাযুজ্য রেখে বাংলায় সিপিএম রাজ্য কমিটির জন্য ৭২, জেলা কমিটিতে ৭০ এবং এরিয়া কমিটিতে ৬৫ বছরের বয়ঃসীমা স্থির করতে চলেছে। কিন্তু কেরলে সিপিএম এই লক্ষ্যে এগোতে চাইছে একটু ভিন্ন পথে। সম্মেলনের জন্য রাজ্য সিপিএমের যে রূপরেখা তৈরি হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে সক্রিয় দলীয় সদস্যদের সর্বোচ্চ বয়স ৭৫-এর মধ্যে রাখতে হবে। তার চেয়ে বেশি বয়সের ক্ষেত্রে সদস্যপদ আর নবীকরণ হবে না। রাজ্য বা জেলা কমিটির সদস্যদের জন্য আলাদা করে কোনও সর্বোচ্চ বয়সের সীমা তারা এখনও বাঁধেনি।
দলের কেরল রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের মতে, ‘‘শুধু নেতাদের বয়স আলাদা করে কমানোই তো শেষ কথা নয়। গোটা সংগঠনের চেহারা কেমন থাকবে, সেটা বড় অংশে নির্ভর করে কর্মীদের উপরেও। আমরা হিসেব নিয়ে দেখেছি, শাখা বা লোকাল কমিটি স্তরে ৭৫ বছরের বেশি বয়সের সদস্য আছেন প্রায় ১০ থেকে ১৫%। এই ক্ষেত্রে সীমা বেঁধে দিলে সেই জায়গায় তরুণতর অংশ উঠে আসবে। তার ফলে সার্বিক ভাবে সংগঠনের মধ্যে এর প্রভাব পড়বে।’’ তারই পাশাপাশি শাখা ও লোকাল স্তরে প্রতি কমিটিতে দু’জন করে ৪০-এর কমবয়সি সদস্যের অন্তর্ভুক্তি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। নিচু তলায় কমিটির কলেবরও ১৫ জনের বেশি করা যাবে না। সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা, এই ধরনের নীতির ফলে নবাগতদের প্রায় ২০% এর পর থেকে কমিটিতে জায়গা পেতে পারেন।
বাংলায় এখন সিপিএম ক্ষমতার বাইরে। সর্বভারতীয় স্তরেও সিপিএমের প্রভাব ক্ষয়ে গিয়েছে। ক্ষমতার বাইরে থাকার সময়টাই সংগঠন ঢেলে সাজার জন্য আদর্শ, রাজনীতিতে প্রচলিত তত্ত্ব এমনই। কিন্তু দক্ষিণী রাজ্যের শাসক সিপিএম যে ভাবে সংগঠন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পথে যাচ্ছে, তাকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক শিবির। কেরল সিপিএমের নেতা ও দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘এ বার বিধানসভা ভোটে পুরনো অনেককে বদলে নতুন মুখ এনে এলডিএফ সাফল্য পেয়েছে। ভোটে জয়ের পরে প্রায় গোটা মন্ত্রিসভাই নতুন করে গড়া হয়েছে। এখন সংগঠনেও নতুনদের তুলে আনতে পারলে এই সার্বিক প্রক্রিয়া গতি পাবে।’’