ফাইল চিত্র।
তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘোষণার পরেও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করল কৃষক সংগঠনগুলি। তাদের যৌথ মঞ্চ, সংযুক্ত কিসান মোর্চার একটি বৈঠকের পর আজ জানানো হয়েছে, পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির কোনও বদল হচ্ছে না। অর্থাৎ, এই মাসেই লখনউয়ে কিসান মহাপঞ্চায়েত, দিল্লিতে জমায়েত ও সংসদ অভিযানের বিষয়ে তাঁরা আগে যে সব ঘোষণা করেছিলেন, তা বহাল থাকছে। দিল্লির সীমানায় আন্দোলন স্থল থেকেও সরছেন না কৃষকেরা। তিনটি কৃষি আইন নিয়ে সরকার পিছু হটার কথা ঘোষণা করলেও একে কী ভাবে বাস্তবায়িত করা হবে, তা জানানো হয়নি। ফলে সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে নজর রাখছে কৃষক সংগঠনগুলি। পাশাপাশি, ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের (এমএসপি) গ্যারান্টির মতো বকেয়া দাবিগুলি নিয়েও আরও চাপ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
গত কাল প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েও কৃষক নেতারা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, যত ক্ষণ না পর্যন্ত কাগজে-কলমে আইনগুলি প্রত্যাহার হচ্ছে, তত ক্ষণ আন্দোলনের পথ থেকে সরে আসবেন না তাঁরা। আজ দিল্লির কুন্ডলী সীমানায় সংযুক্ত কিসান মোর্চার নেতারা তাঁদের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করেছেন। নয় সদস্যের কোর কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী ২২ নভেম্বর লখনউয়ে কিসান মহাপঞ্চায়েত বসবে। ২৬ নভেম্বর কৃষকদের এই আন্দোলনের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে। চল্লিশটি কৃষক সংগঠনের যৌথ মঞ্চ, সংযুক্ত কিসান মোর্চা ওই দিনটিকে দেশ জুড়ে বড় আকারে পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বৈঠকে ঠিক হয়েছে, সে দিন দিল্লির সীমানায় বড়সড় জমায়েত হবে। মোর্চা জানিয়েছে, ২৬ তারিখ বিভিন্ন রাজ্যের রাজধানীতে বিক্ষোভ কর্মসূচি রাখা হবে। সেখানে ট্র্যাক্টর ও গরুর গাড়িতে চেপে মিছিল করবেন কৃষকেরা। এর পরে ২৯ নভেম্বর সংসদ ভবনের দিকে ট্র্যাক্টর মিছিলের কর্মসূচি রাখা হয়েছে।
সে দিনই সংসদের অধিবেশন শুরু হচ্ছে। ওই দিন থেকে রোজ পাঁচশো জন করে আন্দোলনকারী সংসদের দিকে শান্তিপূর্ণ মিছিল করবেন ট্র্যাক্টরে চড়ে। এ ছাড়া, ২৮ নভেম্বর মুম্বইয়ের আজাদ ময়দানে মহারাষ্ট্রের কিসান-মজদুর মহাপঞ্চায়েত বসবে। তার নেতৃত্ব দেবে সংযুক্ত শ্বেতকরী কামগার মোর্চা। এই মঞ্চে রয়েছে প্রায় একশোটি সংগঠন। কৃষক আন্দোলনের ভবিষ্যৎ রূপরেখা ঠিক করতে আগামিকাল সংযুক্ত কিসান মোর্চার নেতারা ফের বৈঠকে বসছেন।
সংযুক্ত কিসান মোর্চার নেতা দর্শন পাল সিংহ আজ জানিয়েছেন, তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহার ছাড়াও এমএসপি-র গ্যারান্টি, আন্দোলনরত কৃষকদের উপর থেকে মামলা প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়ে আসছেন তাঁরা। এ সব বিষয়ে সরকার কোনও পদক্ষেপ করেনি। কৃষক নেতা গুটনাম সিংহের মতে, তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করা হবে বলে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন ঠিকই। তবে কবে এগুলি প্রত্যাহার করা হচ্ছে, তা জানানো হয়নি। কথা হয়নি এমএসপি-র বিষয়েও। অনিশ্চয়তা থেকে গিয়েছে আন্দোলনরত কৃষকদের উপর পুলিশের মামলাগুলি তোলা নিয়েও। মোর্চার দাবি, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ-সহ বিভিন্ন রাজ্যে কৃষকদের বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা সাজানো হয়েছে। এগুলি অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। কৃষক নেতা গুরনাম সিংহ চারুনি আজ বলেছেন, আন্দোলনের সময়ে যে সব কৃষকের মৃত্যু হয়েছে, তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আগামিকালের বৈঠকে এই বিষয়টি নিয়েও আলোচনা করবেন তাঁরা। তাঁর মতে, শুধু বিতর্কিত কৃষি আইনগুলি প্রত্যাহার করার দাবি নিয়েই আন্দোলনে নামেনি কৃষক সংগঠনগুলি। ফসলের এমএসপি-র নিশ্চয়তাও চেয়েছেন। ফলে এ নিয়ে এখন কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে নির্দিষ্ট পদক্ষেপ দাবি করছেন।
সব মিলিয়ে কৃষক সংগঠনগুলি স্পষ্ট করে দিয়েছে, তিনটি কৃষি আইন নিয়ে মোদী সরকার পিছু হটার ইঙ্গিত দিলেও যতক্ষণ না পর্যন্ত তাঁদের দাবি নিয়ে নির্দিষ্ট পদক্ষেপ করা হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত আন্দোলন থেকে সরে আসবেন না তাঁরা। তবে গতকাল মোদীর ঘোষণার পর আন্দোলকারীদের একটি অংশের বক্তব্য ছিল, এ বার ঢিলে দেওয়া হোক। মূল দাবি সরকার যখন মেনেই নিয়েছে তখন বাকিটা পরে দেখা যাবে। কিন্তু কিসান মোর্চার সংখ্যাগরিষ্ঠ সংগঠনের বক্তব্য, আন্দোলনে যখন সুফল পাওয়া যাচ্ছে, তখন মাঝপথে তা থেকে সরে আসা যাবে না। কারণ, বারবার লড়াইয়ের এই উদ্যম তৈরি করা সম্ভব নয়। তবে এটাও ঠিক, সংসদে কৃষি আইন তিনটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হলে, শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষায় খোলা আকাশের তলায় এক বছর ধরে বসে থাকা চাষিদের কতটা ধরে রাখা যাবে, তা নিয়ে সংশয় থাকছে। কৃষক সংগঠনের এক নেতার মতে, আন্দোলনের উপসংহার নিয়ে এখনও বলার সময় আসেনি। ঘটনার গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে তা চলবে। উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাবে বিজেপি-বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি অবশ্য চাইছে, কৃষকেরা যতদিন সম্ভব রাস্তায় থাকুন। তাতে প্রচারের সুবিধা। কিন্তু কিসান মোর্চার সূত্রে জানানো হয়েছে, কোনও রাজনৈতিক দলকে সুবিধা করে দিতে এই লড়াই লড়ছেন না তাঁরা।