কৃষি আইনের বিরোধিতায় অমৃতসরে ডেপুটি কমিশনারের দফতরের বাইরে চাষিরা। সোমবার। পিটিআই
প্রথমে পরপর বালি ভর্তি ট্রাক দাঁড় করানো। তার পরে লোহার রেলগার্ড। তার উপরে কাঁটাতার। রেলগার্ডের পরে সারি সারি কংক্রিটের ব্যারিকেড। একটির সঙ্গে অন্যটি লোহার শিকলে বাঁধা।
কৃষকদের ‘দিল্লি চলো’ রুখতে দিল্লি-হরিয়ানা সীমানায় সিংঘুতে এত দিন এমনই ছিল নিরাপত্তার আয়োজন। ১৭ দিন ধরে সিংঘুতে রাস্তা অবরোধ করে বসে থাকা কৃষকেরা সোমবার সকালে অবাক হয়ে দেখলেন, কংক্রিটের ব্যারিকেডের পরে বড় বড় লোহার কন্টেনার এনে রাস্তা আটকে দেওয়া হল। যে সব কন্টেনারে জাহাজে মালপত্র নিয়ে যাওয়া হয়।
তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনের ১৮তম দিনে কৃষক সংগঠনের নেতারা সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অনশনে বসেন। পঞ্জাব-হরিয়ানা থেকে দেশের বিভিন্ন অংশে এ দিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়। আগেই কৃষক নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, দিল্লিতে ঢোকার অন্যান্য রাস্তার সঙ্গে দিল্লি-জয়পুর জাতীয় সড়কও বন্ধ করে দেওয়া হবে। রবিবারই তাঁরা ওই সড়কের একটি লেন বন্ধ করে দিয়েছিলেন। সোমবার হরিয়ানার বাওয়ালে কৃষক সংগঠনগুলির মহাপঞ্চায়েতে ঠিক হয়, তাঁরাও এ বার দিল্লির দিকে এগোবেন। ট্র্যাক্টরের সেই মিছিল আটকাতে হিমশিম খেল পুলিশ, আধাসেনা, র্যাফ। ট্র্যাক্টরের চাবি কেড়ে নিয়ে, অনেক কৃষককে আটক করে কোনও মতে সেই মিছিল আটকানো হল।
আরও পড়ুন: আজ থেকে গ্যাসের দাম চড়ল আরও ৫০ টাকা
হরিয়ানা-রাজস্থান সীমানায় দিল্লি-জয়পুর রোডে কৃষকেরা এ দিন সংযুক্ত কিসান মোর্চার তরফে হিন্দিতে লেখা হ্যান্ডবিল বিলি করে জানিয়েছে, মাধারণ মানুষের সমস্যার জন্য তাঁরা দুঃখিত। বাধ্য হয়েই তাঁরা পথে বসে রয়েছেন। এ জন্য তাঁরা করজোড়ে ক্ষমাও চেয়েছেন আমজনতার কাছে।
হরিয়ানা, রাজস্থানের সীমানায় কৃষকদের আটকানো গেলেও দিল্লিতে মোদী সরকারের উপরে চাপ ক্রমশ বাড়ছে। পঞ্জাব, হরিয়ানার বিজেপি সাংসদ, বিধায়ক থেকে হরিয়ানা সরকারে বিজেপির শরিক জেজেপি-র মধ্যে ‘ত্রাহি, ত্রাহি’ রব উঠেছে। আজ পঞ্জাবের বিজেপি নেতারা প্রবীণ মন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে বৈঠক করে অনুরোধ করেছেন, কৃষকদের আন্দোলন থামাতে সরকার আলোচনায় বসুক। হরিয়ানার বিজেপি সাংসদ-বিধায়করা কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমরের সঙ্গে বৈঠক করেও একই দাবি জানিয়েছেন বলে সূত্রের খবর। জেজেপি নেতা, হরিয়ানার উপ-মুখ্যমন্ত্রী দুষ্যন্ত চৌটালা দিল্লিতে এসে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গডকড়ীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সরকারের পরবর্তী রণকৌশল ঠিক করতে আজও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে কৃষিমন্ত্রীর বৈঠক হয়। হাজির ছিলেন ক্যাবিনেট সচিব, স্বরাষ্ট্রসচিবও।
আরও পড়ুন: দক্ষিণ প্যাংগংয়ে চিনা সেনাকে বোকা বানায় পানাগড়ের ‘পাহাড়ি বাহিনী’
কৃষিমন্ত্রী আগেই উত্তরাখণ্ড, হরিয়ানার কিছু সংগঠনের সঙ্গে আলাদা ভাবে বৈঠক করেছিলেন। রাজনাথ বৈঠক করেছেন ভারতীয় কিসান ইউনিয়নের ভানু গোষ্ঠীর সঙ্গে। তোমর আজ তেলঙ্গানা, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, কেরলের কিছু কৃষক নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন।
‘সর্বভারতীয় কিসান সংঘর্ষ সমন্বয় কমিটি’-র ছাতার তলায় কয়েকশো সংগঠন আন্দোলনে নেমেছে। কৃষিমন্ত্রীর বৈঠকের পরে সরকার দাবি করেছে, ‘কমিটি’ প্রস্তাবিত সংশোধিত আইনে সমর্থন জানিয়েছে। কৃষক নেতাদের অভিযোগ, বিভ্রান্তি ছড়াতে আন্দোলনকারী কমিটির নামের সঙ্গে মিল রেখে আর একটি সাজানো কমিটি তৈরি খাড়া করা হয়েছে। মোদী সরকার ব্রিটিশ রাজের মতো ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ নীতি নিচ্ছে। কখনও রাজনৈতিক মদত, কখনও মাওবাদী, খলিস্তানি, পাকিস্তান বা চিনের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ তোলা হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ, বিজেপি নেতা অরুণ সিংহের দাবি, আন্দোলনের পিছনে ‘টুকড়ে টুকড়ে গ্যাং’ রয়েছে। কৃষক নেতাদের প্রশ্ন, সরকার তবে কৃষক নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসল কেন? কেন আইন সংশোধনে রাজি হয়েছে?
কৃষি মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, সরকার তিন কৃষি আইনে এক ডজনের বেশি সংশোধনে রাজি হয়েছে। কৃষিমন্ত্রী সেই সংশোধিত কৃষি বিলেই সমর্থন জোগাড়ের চেষ্টা করছেন। তোমর বলেছেন, ‘‘পরবর্তী আলোচনার দিনক্ষণ ঠিক করতে কৃষক সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।’’ কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে আজ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল-সহ আপ নেতারা অনশন করেন। অণ্ণা হজারে কৃষিমন্ত্রীকে চিঠিতে জানিয়েছেন, কৃষক-সমস্যা দ্রুত না মিটলে তিনি ফের অনশনে বসবেন। রাজনাথ বণিকসভা ফিকি-র অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘‘কৃষি ক্ষেত্রে হিতে বিপরীত হবে, এমন পদক্ষেপের প্রশ্নই নেই।”