যোগেন্দ্র যাদব। —ফাইল চিত্র।
প্রায় দু’মাস ধরে রাজধানীর উপকণ্ঠে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা। কিন্তু তাল কাটল রাজধানীতে ট্র্যাক্টর মিছিল করতে গিয়ে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন মুহূর্তের মধ্যে হিংসাত্মক আকার ধারণ করল। প্রজাতন্ত্র দিবসে রাজধানীর বুকে রক্তও ঝরল। এমন পরিস্থিতিতে বিক্ষুব্ধদের শান্ত করতে এগিয়ে আসতে হল কৃষক সংগঠনের নেতা যোগেন্দ্র যাদবকে। এত দিনের লড়াই নষ্ট হয়, এমন কোনও পদক্ষেপ না করতে অনুরোধ জানালেন তিনি।
ট্র্যাক্টর মিছিল ঘিরে এই মুহূর্তে কার্যত আগুন জ্বলছে রাজধানীতে। বিভিন্ন জায়গায় দিল্লি পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এমনকি পুলিশের দিকে ট্র্যাক্টর নিয়ে তাঁদের তেড়ে যাওয়ার ভিডিয়োও সামনে এসেছে। ব্যারিকেড ভেঙে লালকেল্লায় সংগঠনের পতাকাও ওড়ানো হয়েছে। আবার পুলিশের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগও সামনে এসেছে। তাতে ট্র্যাক্টর মিছিলের সপক্ষে গলা চড়াচ্ছিলেন যাঁরা, তাঁদের দিকেও আঙুল উঠতে শুরু করেছে।
এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার আন্দোলনকারীদের শান্ত হতে অনুরোধ করেন জন কিসান আন্দোলনের নেতা যোগেন্দ্র। বিক্ষুব্ধদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘কৃষক আন্দোলনের মর্যাদা এখন আপনাদের হাতে। এমন কিছু করবেন না, যাতে এতদিনের লড়াই বৃথা যায়। কেউ যদি উর্দিধারী পুলিশকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করে থাকেন, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এই ধরনের ঘৃণ্য আচরণ বরদাস্ত করা হবে না। কারণ ওঁদের সঙ্গে কোনও বিবাদ নেই আমাদের। বারবার সতর্ক করার পরও এই ধরনের ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি আমি।’’
পুলিশ অনুমোদিত রাস্তা দিয়েই মিছিল এগিয়ে নিয়ে যেতে আন্দোলনকারীদের আর্জি জানান যোগেন্দ্র। তিনি বলেন, ‘‘সংযুক্ত কিসান মোর্চার সব সদস্যের কাছে বারবার অনুরোধ করছি, পুলিশ যে রাস্তা ধরে এগনোর অনুমতি দিয়েছে, সেই রাস্তা ধরেই এগোন। আমি জানি, আন্দোলনকারীদের মধ্য ৯০ শতাংশ মানুষ শৃঙ্খলা বজায় রেখেছেন, কিন্তু হাতে গোনা কিছু মানুষের জন্য গোটা আন্দোলন কলঙ্কিত হচ্ছে।’’
বিশৃঙ্খলার জন্য যে বা যাঁরা দায়ী, তা খুঁজে বার করা হবে বলেও জানান যোগেন্দ্র। তিনি বলেন, ‘‘কাদের জন্য আন্দোলন হিংসাত্মক আকার ধারণ করল, তা বার করবই আমরা। কারণ এতে সমস্ত কৃষকদের বদনাম হয়েছে। লালকেল্লার প্রাচীর বেয়ে উঠে পতাকা ঝোলানো অন্যায় কাজ। সবাইকে অশান্তি বজায় রাখতে আবেদন জানাচ্ছি। গত দু’মাসে গোটা দেশ তো বইকি বিদেশ বিভুঁই থেকেই প্রশংসা কুড়িয়েছেন কৃষকরা। তাঁদের ধৈর্যশক্তি, শান্তিপূর্ণ আচরণের প্রশংসা করেছেন সকলে। শান্তিভঙ্গ হলে আমাদের শক্তি হারাব আমরা।’’ আন্দোলনকারীদের কোনও রকম গুজবে কান না দেওয়ার পরামর্শও দেন যোগেন্দ্র।
বিতর্কিত ৩টি কৃষি আইনের প্রতিবাদে প্রজাতন্ত্র দিবসে রাজধানীতে ট্র্যাক্টর মিছিলের অনুমতি পেতে বহু কষ্ট করতে হয় আন্দোলনকারী কৃষকদের। সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত ছুটতে হয়েছিল তাঁদের। তার পরই নির্দিষ্ট পথ ধরে শান্তিপূর্ণ ভাবে মিছিল নিয়ে যাওয়ার অনুমতি পান তাঁরা। কিন্তু মঙ্গলবার সকালে মিছিল শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ছন্দপতন ঘটে। দিল্লি সীমানায় পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে রাজধানীতে ঢুকে পড়ার অভিযোগ ওঠে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে। পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ চলাকালীন এক কৃষক প্রাণও হারিয়েছেন।