এ ভাবেই লালকেল্লায় ওড়ানো হয় আন্দোলনকারীদের পতাকা। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া
প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে একটু আগেই। জাতীয় পতাকা উড়ছে। তার মধ্যেই লালকেল্লায় ঢুকে পড়লেন আন্দোলনকারী কৃষকরা। শুধু ঢুকে পড়া নয়, টাঙিয়ে দেওয়া হল কৃষক আন্দোলনকারীদের পতাকাও। এই নিয়েই তৈরি হল তীব্র বিতর্ক। অনেকেই বলছেন, এই ‘জঙ্গি’ আন্দোলনকে সমর্থন করা যায় না। যদিও আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, রাজনৈতিক দলের কর্মীরা ঢুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আন্দোলনকে কলুষিত করার চেষ্টা করছেন।
প্রজাতন্ত্র দিবসে কৃষকদের ট্র্যাক্টর প্যারেডের অনুমতি দিয়ে রুট নির্ধারণ করে দিয়েছিল দিল্লি পুলিশ। কিন্তু আন্দোলনকারীরা সে সব মানলেন না। কার্যত গোটা দিল্লির দখল নিয়ে ফেললেন তাঁরা। রণক্ষেত্রের চেহারা নিল আইটিও চত্বর, নাংলোই এলাকা। তার মধ্যেই নজিরবিহীন ছবি দেখা গেল লাককেল্লায়। পুলিশের বাধা পেরিয়ে দুপুরের দিকে এক দল কৃষক ঢুকে পড়েন লালকেল্লা চত্বরে। পুরো চত্বর চলে যায় আন্দোলনকারীদের দখলে। চলতে থাকে স্লোগান। তাঁরা পৌঁছে যান লালকেল্লায় জাতীয় পতাকার কাছাকাছি। গম্বুজের মাথায় জাতীয় পতাকা উড়ছিল। নীচে পোঁতা ছিল আরও একটি পাইপ। সেই পাইপ বেয়ে উঠে সংগঠনের পতাকা টাঙিয়ে দেন এক জন। লালকেল্লার গম্বুজের উপরেও উঠে পড়েন অনেকে।
স্বাভাবিক ভাবেই এ নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। পুলিশের নির্দিষ্ট রুট না মানা, বিভিন্ন জায়গায় বিশৃঙ্খল আন্দোলন, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পাশাপাশি লালকেল্লায় এ ভাবে পতাকা উত্তোলনের সমালোচনা করেন অনেকেই। দিল্লির পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের বক্তব্য, ট্র্যাক্টর প্যারেডের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নির্দিষ্ট রুট মানেননি কৃষকরা। সকাল থেকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের আহ্বান জানানো হচ্ছে, কিন্তু তাঁরা কিছুতেই কর্ণপাত করছেন না। এটা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন নয়।
পুলিশের পাশাপাশি রাজনৈতিক মহলেও এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া। খোদ কৃষকদের একাধিক সংগঠনই এই আন্দোলন থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করতে শুরু করেছেন। সংযুক্ত কিসান মোর্চার বক্তব্য, ‘‘আন্দোলনে অভূতপূর্ব সাড়া দেওয়ার জন্য কৃষকদের ধন্যবাদ জানাই। তবে অনভিপ্রেত ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশও করছি। এই ধরনের আন্দোলনের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের সঙ্গে আমাদের কোনও যোগ নেই।’’ কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুরের টুইট, ‘অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। প্রথম দিন থেকে কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন করে আসছি। কিন্তু এই শৃঙ্খলাহীন আন্দোলনকে মেনে নিতে পারছি না। প্রজাতন্ত্র দিবসে লালকেল্লায় পবিত্র তেরঙা (জাতীয় পতাকা) ছাড়া অন্য কোনও পতাকা ওড়া উচিত নয়।’
অন্য দিকে কৃষক আন্দোলনের নেতা তথা ভারতীয় কিসান ইউনিয়নের মুখপাত্র রাকেশ টিকাইত প্রথম দিকে বলেন, কোনও সংঘর্ষের খবর নেই তাঁর কাছে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলছে। পরে তিনিই আবার বলেন, ‘‘আমরা জানি কারা অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছেন, তাঁদের চিহ্নিত করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলের কিছু কর্মী আমাদের আন্দোলনকে কলুষিত করার চেষ্টা করছেন।’’