দিল্লিতে কাঠগড়ায় ‘আইটি সেল
Facebook

‘ফেসবুকে ভোটের খেলা’, বিস্ফোরক বহিষ্কৃত কর্মী

সোফির দাবি, শুধু আজারবাইজান, হন্ডুরাস, ব্রাজিল, বলিভিয়া, ইকুয়েডর কিংবা স্পেনে নয়, কোনও এক বিশেষ রাজনৈতিক দলকে সুবিধা পাইয়ে দিতে ভোটারদের বিভ্রান্ত করার লাগাতার চেষ্টা হয়েছিল গত ফেব্রুয়ারির দিল্লি ভোটেও!

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নিউ ইয়র্ক শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০২:৩৯
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

বিশ্ব জুড়ে ‘ভোটের খেলা’ চলছে ফেসবুকে। আর কর্তৃপক্ষ বেমালুম হাত গুটিয়ে বসে! অভিযোগটা এ বার উঠে এল ফেসবুকেরই এক প্রাক্তন কর্মীর লেখা অভ্যন্তরীণ মেমো থেকে। ফেসবুকের ডেটা সায়েন্টিস্ট হিসেবে তিন বছর কাজ করেছিলেন সোফি ঝ্যাং। বর্তমানে বহিষ্কৃত। সম্প্রতি এক মার্কিন সংবাদমাধ্যমের হাতে আসা সহকর্মীদের লেখা তাঁর প্রায় সাড়ে ছ’হাজার শব্দের ওই মেমোতে পরিষ্কার— ওই তিন বছরেই চোখ খুলে গিয়েছিল সোফির। তার পরে এ নিয়ে মুখ খোলার জন্যই তাঁর চাকরি গিয়েছিল কি না, তা জানা যায়নি। সংবাদমাধ্যমে এখনই মুখ খুলতে নারাজ সোফি নিজেও।

Advertisement

সোফির দাবি, শুধু আজারবাইজান, হন্ডুরাস, ব্রাজিল, বলিভিয়া, ইকুয়েডর কিংবা স্পেনে নয়, কোনও এক বিশেষ রাজনৈতিক দলকে সুবিধা পাইয়ে দিতে ভোটারদের বিভ্রান্ত করার লাগাতার চেষ্টা হয়েছিল গত ফেব্রুয়ারির দিল্লি ভোটেও! তাঁর সুপারিশ মতো দেরিতে হলেও বিপজ্জনক ওই ‘আইটি সেল’-কে শেষমেশ নিষ্ক্রিয় করা গিয়েছিল। তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবশালী ওই নেটওয়ার্ককে বন্ধ করেনি ফেসবুক। ঝ্যাং ও তাঁর টিমের চাপে কিছু পোস্ট বা ভুয়ো অ্যাকাউন্ট শুধু চুপচাপ মুছে ফেলে কিংবা নিষিদ্ধ করেই দায় সেরেছিল মার্ক জ়াকারবার্গের সংস্থা। সোফির অভিযোগ, বার বার রিপোর্ট করা সত্ত্বেও কিছু দেশের ক্ষেত্রে এটুকুও হয়নি। উল্টে এক সিনিয়র সোফিকে নাকি বলেছিলেন, ‘‘সামান্য ব্যাপারে বেশি মাথা ঘামাবেন না। মিডিয়া কিংবা পাবলিক হইচই করলে, ব্যবস্থা নেওয়া হবে ঠিকই।’’ সোফি তাঁর মেমোতে দিল্লি ভোটে সক্রিয় কোন দলের আইটি সেলের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন, তা অবশ্য জানা যায়নি।

ফেসবুকের সাইট ইন্টেগ্রিটি ফেক ম্যানেজমেন্ট টিমের প্রাক্তন সদস্য সোফি তাঁর মেমোতে লিখেছেন, ‘‘আমাদের ব্যবহার করে ভোটের সময়ে তাবড় সব রাষ্ট্রনেতা কী ভাবে নিজেরই নাগরিকদের লাগাতার বিভ্রান্ত করেছেন, তিন বছরে এমন অভিজ্ঞতা বিস্তর হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, তিনি নিজেই বিশ্ব জুড়ে এত বড়-ছোট নেতার হাটে হাঁড়ি ভেঙেছেন, এখন আর মনে করতে পারেন না। কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই ব্যবসার স্বার্থে ফেসবুক যে নিজ নীতি থেকে সরে এসেছে, সেই অভিযোগও স্পষ্ট সোফির মেমোতে। আর কিছু ক্ষেত্রে অনর্থক দেরি। যেমন, সোফির মেমো অনুযায়ী হন্ডুরাসের ভোটে তাঁর টিম রিপোর্ট করার ন’মাস পরে নড়ে বসেছিলেন ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। আজারবাইজানে পাক্কা এক বছর পরে! সোফি জানিয়েছেন, ব্রাজিল এবং আমেরিকার ভোটের আগে গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক এমন দেড় কোটি অ্যাকাউন্টের উপর খড়্গহস্ত হয়েছিল তাঁর টিম।

Advertisement

আরও পড়ুন: স্ত্রী করোনা পজিটিভ হয়ে আইডিতে, কোয়রান্টিনে সূর্যকান্ত মিশ্র

সোফি লিখেছেন, ‘‘একটা সময়ে আমি সত্যিই ধর্মসঙ্কটে পড়ে গিয়েছিলাম। বুঝতে পারছিলাম না, নিজের সংস্থার প্রতি দায়বদ্ধ থাকা উচিত, নাকি বিশ্বজনীন গণতন্ত্রের প্রতি!’’ তবে ইরাক, ইটালি কিংবা ইন্দোনেশিয়ায় যে তিনি ভায়া ফেসবুক এই রাজনীতির ষড়যন্ত্র সামলাতে পারেননি, সে কথাও স্বীকার করেছেন সোফি। তিনি লিখেছেন, ‘‘যখনই কোনও দেশে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি দেখতাম, নিজের অক্ষমতাকে ক্ষমা করতে পারতাম না। কত রাত ঘুমোতেই পারিনি। হ্যাঁ, আমার হাতে সত্যিই বহু মানুষের রক্ত লেগে আছে।’’

সোফির তোলা যাবতীয় অভিযোগ অবশ্য খারিজ করে দিয়েছে ফেসবুক। সংস্থার এক মুখপাত্র বলেন, ‘‘যাঁরা আমাদের কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিশেষজ্ঞদের একটা কমিটি তৈরি করা হয়েছে।’’

আরও পড়ুন: ৫০ লক্ষে ভারত, তবু লকডাউনের গুণগান​

প্রাক্তন ফেসবুক কর্মীর চাঞ্চল্যকর মেমো হাতে থাকা সংবাদমাধ্যটির দাবি, মুখ না খোলার জন্য সোফিকে ৬৪ হাজার ডলারের সেফারেন্স প্যাকেজ দিতে চেয়েছিল ফেসবুক। বিবেকের তাড়নায় সোফি তা নিতে অস্বীকার করাতেই তাঁর চাকরি যায় বলে দাবি সংবাদমাধ্যমটির।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement