তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। ছবি: পিটিআই।
তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে লোকসভা থেকে বহিষ্কারেরই সুপারিশ করল এথিক্স কমিটি। টাকা এবং উপহারের বিনিময়ে সংসদে প্রশ্ন তোলা এবং লোকসভার পোর্টালে প্রবেশের পাসওয়ার্ড অন্যকে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল মহুয়ার বিরুদ্ধে। প্রথম অভিযোগ অস্বীকার করলেও দ্বিতীয়টি প্রকাশ্যেই মেনে নেন তিনি। সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলার পর এথিক্স কমিটি তৃণমূল সাংসদকে বহিষ্কারের সুপারিশ করল স্পিকার ওম বিড়লার কাছে। এথিক্স কমিটির বৈঠকে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের ভিত্তিতে ৫০০ পাতার খসড়া রিপোর্ট অনুমোদিত হয়েছে। মহুয়াকে বহিষ্কারের পক্ষে ভোট দিয়েছেন ছ’জন সদস্য, বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন চার জন। এ বার এথিক্স কমিটি সেই রিপোর্ট পাঠাচ্ছে স্পিকারের কাছে। ডিসেম্বরে লোকসভার শীতকালীন অধিবেশনে ওই রিপোর্ট পেশ করা হবে। এথিক্স কমিটির রিপোর্ট নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় মহুয়া আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘জানাই ছিল!’’
এথিক্স কমিটি বহিষ্কারের সুপারিশ করলেও তা এখনই সিদ্ধান্ত নয়। স্পিকার এই প্রস্তাব পেশ করবেন সংসদের অধিবেশনে। বিরোধীরা আলোচনা চাইলে তা আদৌ স্পিকার গ্রহণ করবেন কি না সেটি তাঁর এক্তিয়ারের বিষয়। তবে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে, নিয়ম এমনটাই।
জানা গিয়েছে, এথিক্স কমিটি তাদের রিপোর্টে বলেছে, ‘‘মহুয়া মৈত্র এবং দর্শন হিরানন্দানির মধ্যে যে টাকার লেনদেন হয়েছে, কেন্দ্রের উচিত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তার আইনি এবং প্রাতিষ্ঠানিক তদন্ত করা।’’ প্রসঙ্গত, বুধবারই বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে এক্স হ্যান্ডেলে দাবি করেছিলেন, মহুয়ার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় লোকপাল। এই নিশিকান্তই মহুয়ার বিরুদ্ধে ‘ঘুষ নিয়ে প্রশ্ন’-এর অভিযোগ তুলে চিঠি লিখেছিলেন স্পিকারকে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই এথিক্স কমিটিকে তদন্ত করতে বলেন স্পিকার।
এথিক্স কমিটি-যে মহুয়াকে বহিষ্কারের সুপারিশ করতে চলেছে তা প্রকাশ হয়ে গিয়েছিল বুধবারেই। এ নিয়ে মহুয়া বৃহস্পতিবার স্পিকারকে চিঠি লিখে অভিযোগও জানিয়েছেন। কী করে এথিক্স কমিটির গোপন রিপোর্ট বৈঠকের এক দিন আগে সংবাদমাধ্যমের হাতে চলে গেল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মহুয়া। এ নিয়ে স্পিকার ওম বিড়লাকে বৃহস্পতিবার একটি চিঠিও লিখেছেন মহুয়া। কৃষ্ণনগরের সাংসদ দুপুরে এক্স হ্যান্ডেলে সেই চিঠি পোস্ট করে এ-ও দাবি করেন, স্পিকার এ নিয়ে তাঁকে কোনও জবাব দেননি।
‘ব্যক্তিগত এবং অনৈতিক’ প্রশ্ন করার অভিযোগ তুলে গত বৃহস্পতিবার এথিক্স কমিটির বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন মহুয়া। তার পর লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে চিঠি লিখে মহুয়া অভিযোগ করেন, এথিক্স কমিটির বৈঠকে মৌখিক ভাবে তাঁর ‘বস্ত্রহরণ’ করা হয়েছে।
এথিক্স কমিটির রিপোর্ট নিয়ে অবশ্য ‘বিস্মিত নন’ মহুয়া। বুধবারই তিনি বলেছিলেন, ‘‘জানাই ছিল। যা হবে দেখা যাবে।’’ এ বার সংসদের শীতকালীন অধিবেশন কতটা উত্তপ্ত হয়, মহুয়ার পাশে তাঁর দল ও বিরোধী শিবিরের কারা দাঁড়ান সেটাই দেখার। দেখার এ-ও, মহুয়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ঠিক কোন দিকে যায়।